বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফলপ্রকাশে অস্বাভাবিকতা, সেশনজট এবং পুনর্মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার ধীরগতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ২০২৪ সালের চতুর্থ বর্ষের ফলাফল প্রকাশের পর হাজারো শিক্ষার্থী অভিযোগ তুলেছেন, তাদের ফলাফলে অযৌক্তিক ত্রুটি রয়েছে। এসব ত্রুটির কারণে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়ে যাচ্ছে।
২০২৪ সালের চতুর্থ বর্ষের ফলাফল নিয়ে শিক্ষার্থীদের হতাশা:
চতুর্থ বর্ষের ফলাফল প্রকাশের পরপরই দেখা গেছে, অনেক শিক্ষার্থী যেসব বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিল, সেই বিষয়ে অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের উত্তরপত্র সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। ঢাকার মিরপুরের একটি কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া বলেন, “আমার পরীক্ষার উত্তর ভালো হয়েছে, এমনকি শিক্ষকরাও আশ্বস্ত করেছিলেন যে আমি ভালো করব। কিন্তু ফলাফল দেখে আমি হতবাক।”
একই কলেজের আরেক শিক্ষার্থী রাকিব জানালেন, “আমাদের পুরো ব্যাচের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট দুটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। এমন পরিস্থিতি আগেও ঘটেছে, কিন্তু এবার প্রভাব অনেক বেশি। পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করলেও ফল আসতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়, যা আমাদের হতাশা আরও বাড়িয়ে দেয়।”
সেশনজট: শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ থমকে যাচ্ছে
২০২৪ সালের শিক্ষাবর্ষে সেশনজটের মাত্রা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় তীব্র ছিল। মহামারি এবং প্রশাসনিক জটিলতার কারণে অনেক শিক্ষার্থী কয়েক বছরের সেশনজটে আটকে পড়েছেন। সেশনজটের ফলে শিক্ষার্থীরা শুধু একাডেমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, তাদের কর্মজীবন শুরু করার সময়ও বিলম্বিত হচ্ছে।
পুনর্মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার ধীরগতি: দ্রুত সমাধানের দাবি
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফলের ত্রুটি সংশোধনে শিক্ষার্থীদের জন্য পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ থাকলেও তা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ। শিক্ষার্থীরা বলছেন, পুনর্মূল্যায়নের ফলাফল প্রকাশের বিলম্ব তাদের মানসিক চাপ আরও বাড়িয়ে তুলছে। শিক্ষার্থীদের একাংশের দাবি, পুনর্মূল্যায়ন প্রক্রিয়া দ্রুততর করার জন্য বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন এবং প্রযুক্তিগত সমাধান প্রয়োজন।
একজন শিক্ষার্থী পুনর্মূল্যায়ন নিয়ে বলেন, “ফলাফল ভুল হওয়ার পর পুনর্মূল্যায়ন আবেদন করি। কিন্তু এত ধীরগতিতে কাজ হয় যে, চূড়ান্ত ফলাফল হাতে পেতে অনেক দেরি হয়ে যায়। ফলে আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা থমকে যায়।”
বিশেষজ্ঞদের মতামত
শিক্ষাবিদরা মনে করেন, ফলাফল প্রক্রিয়ায় ত্রুটি দূর করতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। উত্তরপত্র মূল্যায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে উন্নত প্রযুক্তি এবং বিশেষজ্ঞ প্যানেল নিয়োগ করার প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।
প্রশাসনের দায়িত্ব ও শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে এবং ত্রুটি দূর করার চেষ্টা চলছে। তবে শিক্ষার্থীরা আরও দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছেন। প্রশাসনের প্রতি শিক্ষার্থীদের আহ্বান—
চতুর্থ বর্ষের পুনর্মূল্যায়ন প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে ফলাফল প্রকাশ করা।
ফলাফলের অস্বাভাবিকতা দূর করতে স্বচ্ছ পদ্ধতি গ্রহণ।
সেশনজট নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ।
উপসংহার
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই সংকট তাদের ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে। দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান না হলে শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের কথা শোনা এবং ফলাফল প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও দ্রুত করার উদ্যোগ নেওয়া।
হৃদয় বোস || শেরপুর
Leave a Reply