“ বাঙালীর স্বাধীনতা”
চতুর্থ পর্ব।
ডাঃ সওকত আরা বীথি ।
ইতিহাস থেকে জানা যায়,১০ ই এপ্রিল,১৭৫৭ সালে,পুত্রসন্তানহীন নবাব আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পর মসনদ নিয়ে বড় খালা ঘসেটি বেগম ও সিরাজুদ্দৌলার মধ্যে বিবাদ শুরু হয় । গৃহবিবাদের সুযোগ নিয়ে ইংরেজরা নবাব সিরাজকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র করে । ইংরেজরা নবাবের অনুমতি না নিয়েই কলকাতার দুর্গ সংস্কার শুরু করে দআর সিরাজুদ্দৌলা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন,যে কারণে সিরাজুদ্দৌলা ইতিহাসখ্যাত হয়ে আছেন ।
ইতিহাস আরও সাক্ষ্য দেয় যে১৭৫৭ সালে লর্ড ক্লাইভের পলাশীর জয় ছিল,যতটা ময় সামরিক সৌর্য্য তার চেয়ে বরং অনেক বেশী প্রতারণা, ঘুস আর ভূয়া চুক্তির ফল । পলাশীর পরাজয়ের পর পরাজিত বাংলার ক্ষুদে শাসকদের কাছ থেকে ২৫ লাখ পাউন্ড,কোম্পানির কোষাগারে জমা হয়ে যায় ।বাংলা ছিল মোঘল যুগে ভারতবর্ষের সবচাইতে সম্পদশালী প্রদেশ । সেই সম্পদ লুটে পুটে খাওয়ার জন্যই ইষ্ট ইন্ডিয়া কম্পানি কিনে ফেলেছিল নবাব সিরাজের ভরসার সব জায়গাগুলো ।
কোমপানির হাত দিয়ে বাংলার সম্পদ দ্রুত গতিতে বৃটেনে পাচার হতে লাগল । বাংলার দক্ষ তাতী ও শিল্পীরা নতুন প্রভুদের কাছে ক্রীতদাসের মত নিগৃহিত হতে থাকেন । দক্ষ তাঁতীদের বুড়ো আঙুল কেটে দেওয়ার গল্প আমরা শুনেছি ।বাংলার বাজার বৃটেনের পণ্যে সয়লাব হয়ে গেল ।
লুটপাটের একটা অংশ গিয়েছিল লর্ড ক্লাইভের পকেটে । বাংলার কোষাগার উজাড় করে সব সম্পদ ১০০ টি নৌকায় তুলে গঙ্গা নদী দিয়ে কোম্পানির সদর দফতর ফোর্ট উইলিয়ামে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।আর এক দফা নিঃস,রিক্ত হ’ল বাংলা এবং শোসিত বাঙালী ।
মোঘল আমলে বাঙালী পরাধীন ছিল, সালতানাৎ আমলেও বাঙালী পরাধীন ছিল । মুরশিদ কুলী খাঁ,আলীবর্দী খাঁ ,ও সিরাজুদ্দৌলার আমলে পরাধীন ছিল।এরপর বৃটিশ এল ১৭৫৭ সালে । বাঙালী আবারও পরাধীন হ’ল । বৃটিশ চলে গেল,১৯৪৭ সালে । বাঙালী স্বাধীন হয়েও পরাধীন থাকল । এরপর ৭ ই মার্চ,১৯৭১ সাল ।হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, রাজনীতির কবি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মোড়ক উন্মোচন করলেন, স্বাধীনতার মহাকাব্যের । তিনি বললেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম । বাঙালী হাতিয়ার তুলে নিল । কারারূদ্ধ জাতির জনক শেখ মুজিবের দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের গোড়াপত্তন হ’ল,কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের আর এক আমবাগানে ,১০ ই এপ্রিল,১৯৭১ ।ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস,১৭ ই এপ্রিল । ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মেহের পুরের,বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে । এই বৈদ্যনাথতলাকেই পরে মুজিবনগর নাম দেওয়া হয় ।তাই ১৭ ই এপ্রিল, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য এক দিন ।
মুক্তিযুদ্ধের এর পরের ইতিহাস আগেই বলেছি ।এই সেই বাঙালী জাতির বাংলাদেশ । এই দেশের সঠিক ইতিহাস জানবার প্রয়োজন আছে এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের । কারণ সে সময় অনেকের জন্ম হয়নি ।আবার অনেকে খুবই ছোট ছিল ।তাই বিভিন্ন ভূল তথ্য বা গল্প জেনে বিভ্রান্ত হবার অবকাশ থেকে যায় ।আর বিশেষ কারণটি হচ্ছে ,বাংলাদেশ আজ আর সেই শিশুরাষ্ট্রটি নেই । আটচল্লিশ বছর পার হয়ে গেল, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে জন্মগ্রহন করবার । অর্থাৎ প্রায় অর্ধশতাব্দী ।তাই কয়েক শতাব্দী আগের ইতিহাস জানতে গিয়ে বাঙালী,বাংলাদেশ,বাংলা এই কথাগুলি নিয়ে বিভ্রান্ত হবার আর অবকাশ নেই বলে মনে করি । এই প্রজন্ম ইতিহাস জানতে চায়না তেমন । শুনতে বা বুঝতেও চায়না বোধ করি । একটি কথা শুনে তরিৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে । তাই সঠিক ইতিহাস জেনে নিবার প্রয়োজন সব সময়ের জন্য আছে । নইলে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভূল হয়ে যাবা সম্ভাবনা রয়ে যায় । আমাদের দেশ আর এখন হেলাফেলা করার মতন রাষ্ট্র নেই । দেশটি যদিও ছোট, বঙ্গপসাগরের বুকে একটি ‘ব’ দ্বীপ । তবে এর ভৌগলিক অবস্থান অনেক গুরুত্বপূর্ণ ,দক্ষিণ এশিয়ার বুকে । যে কারণে বৃহৎ শক্তিবর্গ এর দিকে নজর রাখে বৈকি! অনেকটা বলা যায়,বাংলাদেশ হচ্ছে,গরীবের ঘরে সুন্দরী বউ ।
সে যাক, লোকসংখ্যা যদিও অনেক বেশী,তবে এই জন সংখ্যা, জনসম্পদ হিসাবে কার্য্যকর করা সম্ভব । যেমন এ দেশের জনগণ বিদেশে গিয়ে শ্রমজীবি হিসাবে কাজ করে প্রচুর অর্থ পাঠায় দেশে , যা কিনা আমাদের দেশে বৈদেশিক মুদ্রাার বিশেষ আয়ের উৎস বটে । সরকার যদি সেই অর্থ দিয়ে দেশে কলকারখানা,শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করার কাজে লাগায় ,তবে অনেক মানুষের রোজগারের সংস্থান হতে পারে ।
এছাড়া আমাদের দেশের জনসংখ্যা আজ ,জনসংখ্যা বিষ্ফোরণ হিসাবে প্রতিয়মান হচ্ছে। এক সময় দেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সরকারীভাব কার্যকর ছিল,।বেশ সুফল পাওয়া গিয়েছিল । সেটি বোধহয় আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব । কারণ অদক্ষ জনসংখ্যা বাড়িয়ে কোন লাভ নেই,ক্ষতি ছাড়া । অদক্ষ শ্রমিক বিদেশে পাঠিয়ে কোন সুফল পাওয়া যায়না । জনশক্তি রফতানির বাজার তাই ছোট হয়ে এসেছে । তাই যে জনসংখ্যা আছে তাকেই আগে জনসম্পদ হিসাবে পরিণত করতে হবে ,তাদেরকে উপযুক্ত ট্রেনিং দিয়ে দক্ষ জনসম্পদ পরিণত করা প্রয়োজন । তাহলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন আরও বাড়িয়ে তোলা সম্ভব হবে ।
আজ ,তাই প্রয়োজন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নানাপ্রকার কর্মপদ্ধতি উদ্ভাবণের ।এবং একাজে এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে ।স্বাধীনতা অর্জনের গল্প অথবা বিতর্কের আব অবকাশ নেই । প্রায় পন্চাশ বছর হতে যাচ্ছে এই স্বাধীনতা অর্জনের ।এমনিতেই অনেক দেরী হয়ে গেছে । এখন শুধু দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবারপরিকল্পনায় মনোযোগী হতে হবে ।
এর কোন আর বিকল্প নেই ।
শেষ ……….।
Leave a Reply