বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী তালিকাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে দলের মধ্যে তৈরি হওয়া বিরোধ গত কয়েকদিনে আরো প্রকাশ্যে এসেছে। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার অংশ হিসেবে যারা মনোনয়ন পেয়েছে মাঠপর্যায়ে তাদের অবস্থান নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান দিয়ে যাচাই করা হচ্ছে বলে দলটির সূত্রে জানা যাচ্ছে।
আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কেউ কোনো মন্তব্য না করলেও, যাচাই বাছাইয়ের পর ঘোষিত ‘প্রাথমিক প্রার্থী তালিকাতে’ কিছু পরিবর্তন আসতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দলটির নেতারা।
বিএনপির মনোনয়নকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় জড়িয়ে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে অন্তত দুটি জেলায়। এছাড়া আরও অনেকগুলো জেলায় ঘোষিত মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি করে মিছিল সমাবেশ, মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ কিংবা বিক্ষোভের মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে।
তবে সংঘাত বা সহিংসতার ঘটনায় যারা জড়িয়েছে তাদের অনেককেই দল থেকে বহিষ্কার করো হয়েছে বলে দলটির কেন্দ্রীয় দফতর বিভাগ জানিয়েছে।
এর বাইরেও বিভিন্ন আসনে শরীকদের জন্য আসন ফাঁকা রাখা নিয়েও দলের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে।
দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ অবশ্য বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, দল থেকে কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং এর ফলে খুব শিগগিরই দেশের সব আসনে তার দলের নেতারা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন বলে তারা আশা করছেন।
যদিও বেশ কিছু এলাকার মনোনয়ন চেয়েও পাননি এমন কয়েকজন নেতা এবং জেলা পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে যেই ধারণা পাওয়া গেছে তা হলো, মনোনয়ন কেন্দ্রিক এসব বিরোধ বরং সামনে আরও বাড়তে পারে।
এরপর বিএনপি সমমনা দল কিংবা দলের বাইরের প্রার্থীদের যেসব এলাকায় সমর্থন দিবে সেখানেও নতুন করে অভ্যন্তরীণ বিরোধ দেখা দেয়ার আশংকা রয়েছে।প্রসঙ্গত, গত ৩রা নভেম্বর ২৩৭টি আসনের জন্য প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে একটি আসনে মনোনয়ন স্থগিত করা হয়।
তখন দলের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, ৬৩টি আসনে পরে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে। এসব আসনের মধ্যে বেশিরভাগই সমমনা বা মিত্র দলকে ছেড়ে দেয়া হতে পারে বলে দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেএম মহিউদ্দিন বলছেন, মনোনয়ন ঘোষণার ক্ষেত্রে বিএনপি নিজেও যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করেনি, আবার দলটি ক্ষমতায় আসবে মনে করে প্রতিটি আসনেই একাধিক প্রার্থী মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে সহিংসতা হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
“দলটির পার্লামেন্টারি বোর্ড বসে প্রার্থী তালিকা করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তা তো হয়নি। আবার যারা প্রাথমিক তালিকায় নেই তারাও নিজেদের রাজনীতির কথা ভেবে দলীয় সিদ্ধান্ত মানতে রাজি নন। এ কারণেই সংঘাত সহিংসতা হচ্ছে এবং নির্বাচনেও এর বহি:প্রকাশ দেখা যেতে পারে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।শুরুতেই বিদ্রোহ চট্টগ্রাম, পরে আরও অনেক জেলায়
স্কিপ করুন বিবিসি বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল পড়ুন
বিবিসি বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলএসেছেন সেখানকার জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল।
মনোনয়নপ্রাপ্তদের অবস্থান যাচাই করা হচ্ছে
নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার সময়েই বিএনপির মহাসচিব জানিয়েছিলেন যে ওই তালিকাতেও পরিবর্তন আসতে পারে। এরপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় কর্মী সমর্থকদের প্রতিক্রিয়ার কারণে কিছু আসন বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে।
দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, যে ২৩৬ জনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তার মধ্যে যেসব প্রার্থীকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই সেগুলো বাদে বাকী আসনগুলোতে মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীর অবস্থান যাচাই করা হচ্ছে নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান দিয়ে।
এর আগ প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার আগেও বিএনপির পক্ষ থেকে এলাকা ভিত্তিক একাধিক জরিপ করা হয়েছে বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন।
কিন্তু তারপরেও বেশ কিছু আসনের প্রার্থীরা নানা কারণে আলোচনায় এসেছেন। নোয়াখালীর একটি আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন সেখানকার বিএনপি নেতারা। সেই আসনটিতে প্রার্থী পরিবর্তন করা হতে পারে- সেই আলোচনা আছে বিএনপির ভেতরে।
এছাড়া ফেনী-২ আসনে সাবেক এমপি জয়নাল আবদীনকে মনোনয়ন দেয়া হলেও তিনি বয়সের ভারে ন্যুজ বলে জানিয়েছেন জেলার নেতারা।
আরও যেসব আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে কর্মী সমর্থকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে তার মধ্যে আছে হবিগঞ্জ-৪ ও নাটোর-১। হবিগঞ্জে যাকে প্রার্থী করা হয়েছে তিনি বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছেন আর নাটোর-১ আসনে ভাই বোনের বিরোধ অবসান প্রার্থী পরিবর্তন করার সম্ভাবনার কথা বলছেন জেলা পর্যায়ের নেতারা।
কুষ্টিয়া ও বরিশালের দুজন প্রার্থীও বয়স জনিত অসুস্থতায় ভুগছেন দাবি করা হচ্ছে দলের ভেতর থেকেই। আবার বিএনপির সমমনা দলের একজন নেতার জন্য ঢাকার একটি আসন দলটি রাখলেও নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে বলে তিনি এখন আর ঢাকা থেকে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক নন বলে জানা গেছে।
আবার ওই নেতার জেলার আসনে ইতোমধ্যেই বিএনপি দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তার আগে সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষও হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক কেএম মহিউদ্দিন বলছেন, সবাই জানে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে থাকবে না এবং সে কারণেই দল ক্ষমতায় যাচ্ছে নিশ্চিত মনে করেই বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা অনেকটা মরিয়া হয়ে উঠেছে।
“দলের ভেতরে তীব্র প্রতিযোগিতা। আবার শরিক দলকেও আসন ছাড়তে হবে। তখন সংকট আরও বাড়বে। দলের ভেতরেও কোন্দল সহিংসতা বেড়ে যেতে পারে। এগুলোকে কেন্দ্র করে নির্বাচনেও সহিংসতার আশঙ্কা আছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. আহমেদ।
https://shorturl.fm/Ehs9F
https://shorturl.fm/ixkfK