– রুদ্র নীল
গত ২০ আগস্ট ২০২৫ তারিখে অবশেষে উদ্বোধন হলো উত্তরবঙ্গের গর্ব, হরিপুর- চিলমারীর যোগসূত্র মাওলানা ভাসানী সেতু। ১.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু আজ শুধু উত্তরবঙ্গ নয়, পুরো বাংলাদেশের যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন সম্ভাবনার প্রতীক। প্রায় ১.৫ থেকে ২ কোটি মানুষ সরাসরি উপকৃত হবেন এ সেতুর মাধ্যমে। এ যেন নতুন দিগন্ত উন্মোচন। মাওলানা ভাসানী সেতু (অথবা দ্বিতীয় তিস্তা সেতু) উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের অবস্থানকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, জনাব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
কিন্তু এই উন্নয়নের উজ্জ্বল আলোতে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন জাগে—আমরা কি যথাযথভাবে স্মরণ করেছি সেই মানুষটিকে, যিনি প্রথম এই সেতুর স্বপ্ন দেখেছিলেন?
প্রবীণ বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আ. ব. ম. শরিয়তুল্লাহ মাস্টার, তিনিই ছিলেন এই সেতুর স্বপ্নদ্রষ্টা। প্রায় ৩৫–৪০ বছর আগে তিনি তিস্তার বুকে সেতুর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছিলেন। তখন অনেকেই তাঁকে উপহাস করেছেন, ‘পাগল’ আখ্যা দিয়েছেন। অথচ আজ তাঁর সেই স্বপ্নই বাস্তবে রূপ নিয়েছে, মানুষের জীবনে এনেছে বিপুল সম্ভাবনা।
দুঃখজনক হলো—সেতু উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে বা সরকারি স্বীকৃতিতে তাঁকে যথাযথ মূল্যায়ন দেওয়া হয়নি। অথচ এ ধরনের বৃহৎ প্রকল্প কেবল অর্থ ও প্রযুক্তির জোরে নয়, বরং দূরদর্শী চিন্তার ভিত্তিতেই বাস্তবায়িত হয়। আর সেই চিন্তার জন্ম হয়েছিল শরিয়তুল্লাহ মাস্টারের মস্তিষ্কে।
আমরা উন্নয়নকে উদযাপন করি, কিন্তু উন্নয়নের বীজ বপনকারীদের অনেক সময় ভুলে যাই। শরিয়তুল্লাহ মাস্টারের প্রতি অবহেলা কেবল ব্যক্তিগত নয়; এটি ইতিহাসের প্রতি অবিচার।
এখনই সময়—সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের উচিত হবে তাঁর অবদানকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া।
মাওলানা ভাসানী সেতু আজ উত্তরবঙ্গবাসীর স্বপ্নপূরণ করেছে, কিন্তু শরিয়তুল্লাহ মাস্টারকে যথাযথ মূল্যায়ন না করলে এই সেতুর ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
– রুদ্র নীল
লেখক কলামিস্ট ও সংগঠক
https://shorturl.fm/B9mJw
https://shorturl.fm/BA2e5