রুদ্রনীল
২৭ ও ২৮ জুন—এই দুই দিন জুড়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে পথে নামছে সম্রাজ্যবাদ বিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণের রোড মার্চ। উদ্দেশ্য স্পষ্ট: রাখাইন করিডোর ও চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিদেশি মালিকানার হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়ার বিরোধিতা।
এই রোড মার্চ কেবল একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়—এটি এক প্রকার “সার্বভৌমত্ব রক্ষার পদযাত্রা”। বাংলাদেশের ভূখণ্ড, বন্দর ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আজ এক বহুমাত্রিক সংকটে আক্রান্ত। বহির্বিশ্বের কূটনৈতিক ও কর্পোরেট চাপে সরকার যখন দেশের সম্পদ ও করিডোর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে উদ্যত, তখন প্রতিরোধের মঞ্চে নেমে এসেছে সেইসব শক্তি, যারা বারবার জনগণের পক্ষে উচ্চারণ করেছে “এই দেশ বিক্রি হবে না”।
রোড মার্চের আহ্বান জানানো হয়েছে “No Corridor, No Port Lease” স্লোগানে। বলা হয়েছে, রাখাইন করিডোরের মতো সংবেদনশীল ভৌগোলিক পথ ও চট্টগ্রামের নব্য মুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল যদি বিদেশি নিয়ন্ত্রণে যায়, তাহলে তা কেবল অর্থনৈতিক নয়, কৌশলগত দিক থেকেও ভয়াবহ বিপদের সূচনা করবে। এমন এক সময়ে এই রোড মার্চ, যখন দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য, দমন-পীড়ন ও দুর্নীতি বিরাজ করছে—সম্রাজ্যবাদ বিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ সে প্রেক্ষিতেও জনমত গঠনের চেষ্টায় আছেন।
এই পদযাত্রা শুধু ঢাকার রাজপথে সীমাবদ্ধ থাকছে না। দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও শিক্ষাঙ্গনে একযোগে সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের আয়োজন রাখা হচ্ছে। এটি যেমন রাষ্ট্রের একচেটিয়া নীতির বিরুদ্ধে জনগণের সমবেত আওয়াজ, তেমনি প্রমাণ করে—প্রতিরোধ এখনো শেষ হয়ে যায়নি।
বর্তমান বিশ্বে যেখানে বহু দেশ সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের শিকার হয়ে তাদের ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হারিয়েছে, বাংলাদেশও যেন সেই পথে হাঁটছে—এমন আশঙ্কারই প্রতিফলন ঘটেছে এই কর্মসূচিতে। সম্রাজ্যবাদ বিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ জানান দিচ্ছেন, জনগণকে পাশ কাটিয়ে করা কোনো সিদ্ধান্তই দীর্ঘস্থায়ী নয়, গ্রহণযোগ্য তো নয়ই।
প্রশ্ন উঠেছে—এই রোড মার্চ কতটা প্রভাব ফেলবে? সরকারি নীতিনির্ধারকরা কী এই আন্দোলনের ভাষা বুঝবেন? না কি বরাবরের মতোই তারা জনগণের কণ্ঠস্বরকে উপেক্ষা করে যাবেন?
যাই হোক, ইতিহাস বলে, প্রতিরোধের রাজপথই শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত বদলের পথে বাধ্য করে।
২৭ ও ২৮ জুন সেই প্রতিরোধেরই নতুন অধ্যায়।
রুদ্র নীল
কবি,লেখক, সংগঠক ও কলামিস্ট।
Leave a Reply