অরুন্ধতীর চিঠি-১
অনিরুদ্ধ,
তুমি আর চিঠি দিও না আমাকে—
এই শহরের লাল ডাকবাক্সগুলো
এখন কেবল ক্লান্ত স্মৃতির স্তম্ভ;
কখনো কখনো এক একটি ডাকবাক্স যেন
এক একটি জংধরা ডাস্টবিন।
যে কাগজে তোমার হাতের ছোঁয়া লেগে থাকত,
সেটি ছিল আমার উষ্ণতা মাপার যন্ত্র,
যেখানে প্রতিটি অক্ষরে কেঁপে উঠত
হৃদয়ের অলিন্দ নিলয়।
এখন সেসব ভাষা হারিয়ে গেছে।
মোবাইলের শীতল আলোতে
অক্ষরগুলো দিক হারিয়ে ফেলে।
ভালোবাসা একবার কেবল চোখে পড়তেই
হারিয়ে যায় স্ক্রল করা পর্দায়।
তোমার শেষ চিঠিটির তারিখে ধুলো জমেছে,
তবুও সেই নীল কালি এখনও প্রবাহিত হয়
আমার প্রতিটি ধমনীতে।
তুমি যদি কখনও স্বপ্নে ডাকো আমাকে—
আমি শুনব।
তুমি কিছু না বললেও মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়ে নেব
তোমার না লেখা চিঠি।
বৃষ্টির ফোঁটার মতো ভিজে যাব তোমার চিঠির অক্ষরে।
হাসনাহেনার মতো সুবাস ছড়াবে প্রতিটি উচ্চারণ।
তাই, কোন চিঠি নয়—
তোমার নীরবতার শান্ত দীঘিতে ডুব দিয়ে
আমি পান করে নেব বেঁচে থাকার অমৃতসুধা।
অনিরুদ্ধ’র চিঠি-১
পরিতোষ ঘোষ
অরুন্ধতী,
আমি জানি—
তোমার কাছে আমার চিঠি পৌঁছায় না আর,
তবুও প্রতিটি শব্দ লিখি—
তোমার নামের আকাশনীল কাগজে,
অদৃশ্য কালি দিয়ে।
এই শহর ডাকপিয়নের পায়ের শব্দ ভুলে গেছে,
তবুও আমি ভুলিনি
তোমার নিঃশব্দ বুদবুদে ভেসে থাকা
হৃদয়ের জানালা।
তুমি যে বলেছিলে—
“আর চিঠি লিখো না, আমি হারিয়ে যাবো,”
আমি সেটাকে মানতে পারিনি কখনও।
শেষ যে চিঠিটা পাঠিয়েছিলাম,
সেটা হয়তো পৌঁছায়নি তোমার বাড়ির ঠিকানায়।
কিন্তু পৌঁছেছিল তোমার প্রতীক্ষার জলে ভেজা নিঃশ্বাসের পাশে—
যেখানে তুমি বসে আছো শতবর্ষের পুরনো
এক কুয়াশাচ্ছন্ন বিকেলের সোনালি আলোয়।
আমার প্রতিটি চিঠি আজও ভেসে আছে
সময়ের শূন্যতায়, হলুদ পাতার ফাঁকে,
প্রভাতপাখির কলকাকলিতে, নদীর কলকল শব্দে,
আর নক্ষত্রের মিটমিট আলোয়।
খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে
তুমি যদি কখনও তাকাও, দেখবে—
আমি ঠিক চিঠি লিখে যাচ্ছি অনন্তকাল ধরে।
আমার চিঠি কেবল ডাকবাক্সে যায় না,
সে তোমার নিঃশ্বাসের ভেতর দিয়ে হাঁটতে জানে।
যেদিন তুমি স্বপ্নে নিঃশব্দে উচ্চারণ করবে আমার নাম,
আমার চিঠি জেগে উঠবে
তোমার অব্যক্ত বাক্যের অন্ধকারে
একটি প্রদীপের মতো,
চিরকাল লেখার ছায়ায়,
তোমার নামের নীচে অম্লান স্বাক্ষর রেখে।
Leave a Reply