দেশটা আজ অচল স্বাধীনতা
উড়োচন্ডি
স্বাধীনতা—শব্দটা শুনলেই বুকের ভেতর গর্ব, ত্যাগ আর আত্মমর্যাদার আবেগ জেগে ওঠার কথা। কিন্তু আজ যখন আমরা চারপাশে তাকাই, তখন মনে হয় স্বাধীনতা যেন শুধু আনুষ্ঠানিকতা, কাগজের বর্ণমালা বা ক্যালেন্ডারের একটি দিন। বাস্তব জীবনে মানুষ তার অধিকার, ন্যায়বিচার আর নিরাপত্তা থেকে অনেক দূরে। তাই মনে হয়—দেশটা আজ অচল স্বাধীনতা।
স্বাধীনতার পঞ্চাশোর্ধ্ব বছর পার হয়ে গেছে, অথচ সাধারণ মানুষ এখনো জীবিকার তাগিদে অমানবিক সংগ্রামে নিমগ্ন। কৃষক তার ধানের ন্যায্য দাম পায় না, শ্রমিক ন্যায্য মজুরি পায় না, শিক্ষার্থী মানসম্মত শিক্ষা পায় না। চিকিৎসা বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে, কর্মসংস্থান কেবল কিছু বিশেষ গোষ্ঠীর সুবিধায় সীমাবদ্ধ। রাজনীতি মানুষের সেবার জায়গা থেকে সরে গিয়ে ক্ষমতা ও লুটপাটের কারবারে পরিণত হয়েছে। এই চিত্র কি স্বাধীনতার প্রকৃত রূপ?
স্বাধীনতা মানে কেবল বিদেশি শাসন থেকে মুক্তি নয়; স্বাধীনতা মানে চিন্তার স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, নিরাপদ জীবনযাপন, আইনের সমান প্রয়োগ, ন্যায়ের নিশ্চয়তা। কিন্তু আজ সাংবাদিকরা ভয়ের মধ্যে কলম ধরেন, সাধারণ মানুষ থানায় গিয়েও ন্যায়বিচার পান না, শহরের বুকে নারী-শিশুর নিরাপত্তা অনিশ্চিত। উন্নয়নের ঝলমলে বিজ্ঞাপন আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়, কিন্তু মফস্বলের রাস্তায় হোঁচট খেয়ে পড়ে থাকা মানুষ যেন স্বাধীনতার আলো ছুঁতে পারে না।
দেশটা আজ অচল স্বাধীনতা—কারণ এখানে স্বাধীনতার রূপ কেবল উৎসবের দিনে পতাকা ওড়ানো বা বক্তৃতার মঞ্চে উচ্চারণে সীমাবদ্ধ। অথচ সেই পতাকার নিচে লাখো শহীদের আত্মাহুতি রয়েছে, যাদের স্বপ্ন ছিল সমতার, ন্যায়ের, অধিকারভিত্তিক একটি সমাজ।
আমরা কি সেই স্বপ্ন পূরণ করেছি? নাকি স্বাধীনতাকে শৃঙ্খলবদ্ধ করে রেখেছি ক্ষমতার অন্ধকার ঘরে?
যদি সত্যিই দেশকে এগিয়ে নিতে চাই, তবে স্বাধীনতাকে নতুন করে ভাবতে হবে—মানুষের মুখে হাসি ফেরাতে হবে, সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে, ন্যায়বিচারকে সবার জন্য সহজলভ্য করতে হবে।
না হলে স্বাধীনতা কেবল নামেই স্বাধীন থেকে যাবে, আর আমরা বারবার বলতে বাধ্য হবো—
দেশটা আজ অচল স্বাধীনতা।
https://shorturl.fm/zmp7G
https://shorturl.fm/igEPR
https://shorturl.fm/VvPoZ
https://shorturl.fm/9dEL3