শিকল ভুত
(শিশুতোষ)
আম্মা বললেন খবরদার বাইরে যাবিনা। এখানেই বসে থাকবি। আমি বাথরুমে যাচ্ছি। এসে যেন দেখি তুই এখানেই বসে আছিস।
এই বলে আম্মা চলে গেল। যাবার সময় গজগজ করতে করতে কি যেন বললেন। তার কিছুটা অর্ক শুনতে পেল। আম্মা বললেন বাথরুম নোংরা হয়ে আছে। ময়লা কাপড় জমে গেছে অনেক। বুয়া আসেনা তিন দিন থেকে। কত কাজ পরে আছে। তুই তো মায়ের সাথে হাত লাগাতে পারিস! এত বড় ছেলে তুই!
আম্মা চলে গেলে অর্ক ভাবে, সে কতই আর বড় হয়েছে? মাত্র ক্লাস ওয়ানে পড়ে। সে এখনো অনেক ছোট। এটা অর্কের কথা না, তার আম্মার কথা। আম্মা সববময় বলে এত ছোট ছেলে একা বাইরে যাবিনা। বাইরে গেলে হারিয়ে যাবি। কিন্তু এখন কাজের বেলায় বলে অর্ক নাকি অনেক বড় হয়ে গেছে। অর্ক আম্মার কথার হিসেব মিলাতে পারে না।
ভাবনা বাদ দিয়ে অর্ক আবার কার্টুন দেখায় মন দিল। কিন্তু কার্টুনে মন বসছে না। বাইরে সারাদিন থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। তাই স্কুলে যাওয়া হয়নি। কিন্তু অর্কের খুব বাইরে যাতে ইচ্ছে করছে। ভিজতে ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে। ইস যদি ঝমঝম বৃষ্টিতে ভিজতে পারতো! কিন্তু অর্কের টনসিলের সমস্যা আছে। তাই বৃষ্টিতে ভেঁজা বারণ। শুধু বৃষ্টি না, স্কুলের সামনে যে আইসক্রিম আংকেল টুংটাং শব্দ করে আইসক্রিম বেঁচে সেটাও খাওয়া নিষেধ আছে। গরমের দিনে বাসার সবাই ফ্রিজের ঠান্ডা পানির শরবত খায়। কিন্তু অর্কের কপালে সেই শরবত জোটে না। অর্ককে দেয়া হয় নরমাল পানির শরবত। তার মাঝেমাঝে মনে হয় পৃথিবীর সব আনন্দ অন্যদের জন্য। অর্কের জন্য শুধু কষ্ট আর কষ্ট।
জানলার দিকে তাকিয়ে এসব ভাবছিল অর্ক। তখনি দেয়াল টপকে একটা ছেলে নেমে এলো। ছেলেটা লিকলিকে। শরীরে একটা কালো হাফপ্যান্ট আর লাল টিশার্ট। লাল টিশার্ট টি ভিজে জুবুজুবু হয়ে খয়েরি রঙ ধারণ করেছে। দেয়াল টপকে সোজা চলে এলো অর্কের কাছে।
ছেলেটা অর্কের চেয়ে একটু বড়। অর্ক কিছুটা ভয় পেল। একবার ভাবলো চিৎকার করে মা কে ডাকে।
কিন্তু ছেলেটার চোখে কেমন যেন মায়া ছিল। তাই সে চুপ থাকলো।
অর্ক বললো তুমি কি ভুতের বাচ্চা। আম্মা বলেছে দেয়ালের ওপারে ভুত থাকে।
অর্কের কথা শুনে ছেলেটা খুব হাসলো। হাসতে হাসতে বললো তুমি ভিতুর ডিম। আমার নাম নাবিল। আমি বল খুজতে এসেছি। আমরা বাইরে ক্রিকেট খেলছিলাম। আমি ইয়া বড় ছক্কা মেরে দিলাম। বল তোমাদের বাসায় চলে এলো। তাই বল খুজতে এসেছি।
ক্রিকেট বল?
হুম। তুমি দেখেছো? লাল বল।
না। দেখিনি।
বল না পেলে আরাফ আমার কান ছিড়ে ফেলবে।
অর্কের সাথে নাবিল কথা বলছে আর বল খুঁজছে। কিন্তু পাচ্ছেনা।
নাবিলের কথা শুনে অর্ক হাসল। আরাফ? হি হি হি। এটা আবার কে?
আরে হেসোনা। খুব পাজি ছেলে। তোমার দিকে রেগে তাকালে তুমি বিছানা ভিজিয়ে ফেলবে।
ইস। আমি অত ভিতু না।
ভিতু না? তাহলে আমাকে দেখে ভয় পেলে কেন?
ভয় পাইনি।
না তুমি ভিতু। ভয় পেয়েছ।
না আমি ভিতু না।
তাহলে চল বাইরে যাই। তুমিতো কোনদিন গেটের বাইরে আসো না। চলো আজ আমাদের সাথে ক্রিকেট খেলো। দেখি কত জোরে বল মারতে পারো। আরাফের বলের স্পিড দেখে আবার হিসু করে দিও না।
নাবিলের কথা শুনে অর্কের খুব বাইরে যেতে ইচ্ছে করছে।
কিন্তু অর্ক বললো, বাইরে ভিজলে আজ নিশ্চিত জর আসবে। তাহলে আম্মা আস্ত রাখবেনা।
আরে আম্মু-আব্বু এসব বলবেই। তারা যখন ছোট ছিল তখন কী তারা বৃষ্টিতে ভিজেনি? এই বলে হাসলো নাবিল।
নাবিলের কথা শুনে অর্ক কি যেন ভাবছিল।
এসময় নাবিল বল খুজতে খুজতে বল পেয়ে গেল। নাবিল বললো আমি গেলাম। তুমি ভিতু। ভিতুর ডিম। বৃষ্টিতে ভিজলে কিচ্ছু হয় না। আর আম্মা-আব্বার পিটুনি না খেলে হাড়-হাড্ডি শক্ত হবে কিভাবে? আজ আমার কপালেও পিটুনি আছে। তাই বলে কী বৃষ্টিতে ভিজবোনা? নাবিল ভিতু ভিতু বলে ক্ষেপাতে ক্ষেপাতে দেয়াল টপকে চলে গেল।
অর্কের আর টিভি দেখায় মন নেই। বাইরে থেকে নাবিলদের খেলা ধুলার শব্দ আসছে। অর্ক ভিতরে ভিতরে খুব অস্থির হয়ে যাচ্ছে। বাইরে যাবার প্রবল আকর্ষনে সে উত্তেজিত। কিন্তু আম্মার ভয়ে বের হতে পারছে না। যে নিজেকে নিজেই প্রশন করে তাহলে কি সে ভিতু?
এসব ভাবতে ভাবতে অর্ক বাথরুমের কাছে আসে। ভেতরে কাপড়কাচার ধমাধম শব্দ হচ্ছে। তারমানে আম্মা ব্যস্ত আছে।
অর্ক আর কিছু ভাবেনা। বিছানা থেকে নেমে এক দৌড়ে গেটের কাছে চলে আসে। দেখে দারোয়ান চাচা বসে বসে ঘুমাচ্ছে। অর্ক একটানে গেটখুলে বের হয়ে আসে। কেউ কিছু টের পায়না।
অর্ক এক দৌড়ে ছেলেদের মাঠে চলে আসে। দেখে নাবিলরা খেলছে। অর্ক এক কোনায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজছিল আর খেলা দেখছিল। কিন্তু কেউ তাকে খেলতে বললো না। হঠাৎ একবার একটা বল অর্কের দিকে ছুটে এলো। অর্ক ড়াইভ দিয়ে ক্যাচ লুফে নিল। সাবাই খুব খুশি। আউট আউট। আউট হয়েছে আরাফ। কিন্তু আরাফ কিছুতেই মানবেনা। কারন অর্কতো কোন খেলোয়ার না। বাইরের লোক। তাই অনেক হই চই হলো। আবার খেলা শুরু হলো। এবার নাবিলদের দলে অর্ককে নেয়ে হলো।
খেলা জমে উঠলো। সাথে বৃষ্টিও বাড়ছিল। অর্ক খুব মজা পেল গেলে। ওর আম্মার কথা মনেই পড়লো না।
অনেকক্ষণ খেলা শেষে সবাই ক্লান্ত। ভিজে জুবুজুবু অবস্থা। গায়ে কাদা পানিতে মাখামাখি। এসময় আরাফ বললো চল সবাই পুকুরে গোসল করে আসি।
অর্ক বললো কিন্তু আমি যে সাতার জানিনা!
তুই ভিতু
তুই ভিতু
আরাফ বললো তুই কি লাল পিপড়া খাসনি কখনো?
না
সবাই আবার হাসছে।
অর্কের আর সহ্য হচ্ছে না। সে ভাবলো এখনি গিয়ে পানিতে ঝাপ দেয়।
Leave a Reply