রাজা ও ছাগল কাহিনী
এক দেশে এক উগ্র, ধর্মান্ধ, এবং অনেকটাই বেকুব স্বভাবের রাজা বাস করিতেন। হঠাৎ উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনায় এবং কাহাদের প্ররোচনায় তিঁনি দিন দিন অহংকারী হইয়া উঠিয়াছিলেন। এক অমাবস্যার রাত্রিতে রাজা স্বপ্নে আদেশ পাইলেন তিঁনি যদি দুইটি ছাগল পালন করেন এবং নিয়মিত তাহাদের পরিচর্যা করিয়া থাকেন তাহলে অচিরেই রাজার মনোবাসনা পূর্ণ হইবে। স্বপ্নাদেশ ও রাণীর সু পরামর্শ্বে তিঁনি সযত্নে ছাগল পালনে মনস্থির করিলেন এবং মনে মনে ভাবিতে লাগিলেন ছাগল দিয়া কীভাবে রাজ্য জয় করিয়া ফেলা যায় । রাজার মন্ত্রী অনেক বাছ বিচার করিয়া অনেক দেশ -বিদেশ ঘুরিয়া বাছিয়া বাছিয়া দুইটা ছাগল কিনিলেন। একটি ছিলো কালো ব্লাক বেঙ্গল এবং বেশ মোটাতাজা অন্যটি ছিল পিগমি জাতের । এই পিগমি একটু ছোট এবং খেলাধুলাপ্রিয় জাত, যাহা নতুন ছাগল পালনকারীদের জন্য উপযুক্ত, তুলনামূলক দূর্বল এবং কিছুটা বিড়াল স্বভাবের।
যাই হোক, লোভী ছাগল দুইটি রাজার খাবারের লোভনীয় মহাভান্ডার দেখিয়া দারুণ খুশিতে ম্যা ম্যা করিয়া ডাকিয়া উঠিলো। এই অদ্ভূত রকমের ম্যা ম্যা শব্দ শুনিয়া এবং চরিত্র বাছ বিচার করিয়া রাজা বুঝিতে পারিলেন ইহাদের ছাগল নামটি চরম স্বার্থক হইয়াছে।এদিকে রাজাও তাহাদের ডাক শুনিয়া বেশ খুশিতে ডুবিয়া গেলো ।রাজা যাহা বলিয়া থাকেন ছাগলদুইটিও উচ্চঃস্বরে ম্যা ম্যা বলিয়া সাপোর্ট করিয়া যায়। এইসব দেখিয়া রাজা এখন রাণীর পরামর্শ্ব ছাড়া এক পা ও নড়িবার সাধ্য রহিল না। রাণী যেদিকে যায় রাজাও সেদিকে যায়, রাণী একটু থামলে রাজাও একটু থামে।বসলেও বসিয়া পড়ে।কিছুদিন অতিবাহিত হইবার পর রাজা একদিন রাণীকে ডাকিয়া বলিলেন, দেখো চারিদিকে যে ভয়ংকর রকমের পারমাণবিক অস্ত্র এবং গোলাবারুদ দিয়া যুদ্ধ চলিতেছে এ অবস্থায় ছাগল দুইটি দিয়া কি রাজ্য জয় সম্ভব হইবে?
রাজার এই দুশ্চিন্তার কারণ রাণী খুব সহজেই বুঝিয়া ফেলিলেন।কারণ ছাগল দুইটি আগে যে পরিমান খাবার খাইতো এখন তাহা খায় না তাঁর থেকে বরং বেশী লাফাইতে থাকে । হঠাৎ ছাগল দুইটির দিন দিন এতো লাফালাফির কারণে প্রজাগনও ভীষণ অতিষ্ঠ হইয়া উঠিলো।দিন রাত ম্যা ম্যা ডাকে পাড়া পড়শীর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটিতে লাগিলো। যখন তখন অন্য মানুষের সব্জি ক্ষেতে ঢুকিয়া ক্ষেত নষ্ট করিবার চেষ্টা অব্যাহত রহিলো।কেউ ধাওয়া করিলে নিজেদের বাঁচানোর প্রচেষ্টায় ম্যা ম্যা স্বরে গান গাইতে গাইতে বাগানের মধ্যভাগে দ্রুত লুকাইয়া পড়িতো। এই ভীষণ চালাকি এবং অতিষ্ঠতার মধ্য দিয়া প্রজাগন ইষ্ট দেবতাদের স্মরণ করিতে করিতে হঠাৎ করিয়া ধর্মের কল বাতাসের মুক্ত আবেশে নড়িয়া উঠিলো। রাজরাণীর দ্বৈত রসায়নের গোপন মিথষ্ক্রিয়ার তেজস্ক্রিয় ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন মুখরিত গোলাপের সুগন্ধির মতো হঠাৎ করিয়া দুইশত মাইল দূর হইতে দখিন হাওয়ায় প্রজাগণের পেছনের দরজা দিয়া ঢুকিয়া পড়িল। দূর্গন্ধ এবং আগুনকে যে দরজা বন্ধ করিয়া চাপিয়া রাখা যায় না একথা তাঁহাদের বোধগম্য হইলো না। রাজা এবং রাণী ভীষণ দুশ্চিন্তায় এই সুগন্ধি মাখানো দূর্গন্ধের উদ্ভব হেতু চারিদিকে সন্দেহের চোখে প্রজাগনের উপর অযথাই উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় আরম্ভ হইলো।
রাজার রাণীর প্রতি সন্দেহ এবং দুশ্চিন্তা দিন দিন বাড়িতেই লাগিলো। রাণীর অনুরোধে রাজপ্রাসাদে অনেক কবিরাজ আসিয়া রাজাকে জল পড়া, ঝাড় ফুঁ এমনকি গোমেথ পাথরের আংটিও রাজার হাতের আঙুলে আঙুলে চুপচাপ পড়িয়া রহিলো। কিন্তু কিছুতেই রাজার পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হইলো না। শেষে দূর প্রবাসের এক বিজ্ঞ হাকিমের ডাক পড়িল। রাজা হাকিমকে সব ঘটনা খুলিয়া বলিবার পরে বিজ্ঞ হাকিম বুঝিতে পারিলো সমস্ত কিছুর কারণ ঐ ছাগলই হইবে।হাকিম সাহেব বলিয়া উঠিলো রাজা যদি অমাবস্যার গাঢ় অন্ধকার রাত্রিতে এক হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের উপর হইতে চোখ বন্ধ করিয়া ছাগল দুইটির ঠ্যাং ধরিয়া সাড়ে তিন বার মহাশূন্যের মুখ দেখাইয়া দিয়া ছাড়িয়া নীচে ফেলিয়া দিতে পারেন তাহলেই তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হইয়া উঠিবেন।
যেই কথা সেই কাজ হইলো। কিছুদিন পর কেউ কোথাও আর ছাগলদ্বয়ের ম্যা ম্যা ডাক শুনিতে পাইলো না।

এটা হলো নমুনা ছবি
Nice