, ২০২৩ ৬ পৌষ, ১৪৩০ রোজ বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার শেরখালি উকিলপাড়া আওলাদে ওয়াইসী পাক দরবার শরীফে উপমহাদেশের মহান সূফী সাধক, মুর্শিদে মোকাম্মেল, হাদিয়ে জামান, রাহনোমায়ে শরীয়ত-তরিকত, আশেকে রাসুল (সা.), ফানাফির রাসুল (সা.) , কুতুবুল এরশাদ, কুতুবুল ওয়াহদাত, কুতুবুল আলম, বিশ্ববরেণ্য রাসুলনোমা পীর আল্লামা হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহ.) ও আওলাদে ওয়াইসী পীরে কামেল, মুরশিদে বরহক হযরত শাহসূফী সৈয়দ আবুল বাসার ওয়াইসী (রহ.) পবিত্র ওরস শরীফ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হবে। উক্ত ওরস শরীফ সার্বিক পরিচালনা ও আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন আওলাদে ওয়াইছী হযরত শাহসূফী সৈয়দ জাব্বুর আলম তুষার আল-ওয়াইসী (মা.জি.আ.)। আওলাদে ওয়াইসী হযরত সৈয়দ আজমীর আলম নিশার আল ওয়াইসী (মা.জি.আ.) বলেন, উক্ত ওরস শরীফে রহমাতাল্লিল আলানি হযরত রাসুল (সা.) সহ তাঁহার আহালে বায়াত, সাহাবায়ে কেরাম, তামাম দুনিয়ার জামে আম্বিয়া, জামে আওলিয়াসহ তামাম জাহানের সকল মুসলমান নর-নারীর রুহে সওয়াব রেছানী, সারা বিশ্বের মানুষের হেদায়েত, মুসলিম উম্মার ঐক্য ও দুনিয়া আখিরাতের কামিয়াবী এবং দেশবাসীর শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণের জন্য দোয়া করা হইবে। উল্লেখ্য, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রেমের জ্বলন্ত নিদর্শন পীরে কামেল রাসূলেনোমা আল্লামা হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহঃ)। যে কারণে তিনি লাভ করিয়াছেন সম্পূর্ণ বিরল “রাসূলেনোমা” উপাধি। বিশ্ববরেণ্য ফার্সী মহাকবি রাসূলেনোমা আল্লামা হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহঃ) এর পূর্ব পুরুষগণের আদি নিবাস ছিল আরব দেশের পবিত্র মক্কা নগরীতে। তিনি সাইয়্যেদানা হযরত আলী (রহঃ) ও গাউসুল আজম হযরত বড়পীর মহীউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী (রহঃ) এর বংশধর। তাঁহার প্রথম পুরুষ ছিলেন কুরাইশ সম্প্রদায়ের হাসেমী গোত্র ভুক্ত। কালের প্রবাহে তাঁহার পূর্ব পুরুষের প্রধান শাখা আরব হইতে ইরাকে এবং সেখান থেকে ইরানে হিজরত করেন। সেখানে কয়েক পুরুষ বসবাস করিবার পর মূল একটি শাখা প্রথমে গজনী অতঃপর দিল্লীতে বসতি স্থাপন করেন। প্রপিতামহের ইহধাম হইতে বিদায় গ্রহণের পর হযরত ওয়াইসী পীর ক্বেবলা (রহঃ) এর পিততামহ দিল্লী পরিত্যাগ পূর্বক বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত আমিরাবাজার নামক গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। এই গ্রামেই তাঁহার পিতা ক্বেবলা জন্ম গ্রহণ করেন। হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহঃ) বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামের আমিরা বাজারে ১৮২০-১৮২৩ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে শুভ জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁহার পিতার নাম হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সাইয়েদ ওয়ারেস আলী (রহঃ) এবং মাতার নাম হযরত হাফেজা সাইয়েদা সাইদা খাতুন (রহঃ)। মাতার পূর্ব পুরুষগণ ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বংশধর। হযরত ওয়াইসী ক্বেবলা (রহঃ) এর জন্ম গ্রহণের পূর্বের চল্লিশ দিবাগত রাতে তাঁহার পিতা মাতাকে হযরত আলী (রহঃ) ও স্বর্গরাণী মা ফাতিমা জাহরা (রহঃ) স্বপ্নে দর্শন দান করিয়া এরশাদ ফরমান যে, নব প্রসূতের নাম যেন ‘ফতেহ আলী’ রাখা হয়। নিজের পবিত্র নামের সহিত মিল রাখিয়া হযরত আলী (রহঃ) এ নামকরণের নির্দেশ দিয়াছিলেন। শৈশব হইতেই তিনি সর্বদা সহাস্য বদনে থাকিতেন। নীরবে একাকী যেন কোন অদৃশ্য বন্ধুকে নিয়া আপন মনে খেলা করিতেন। আজানের সময় নীরব হইয়া হাত-পা নাড়া-চাড়া বন্ধ করিয়া আজানের সুমধুর ধ্বনি শ্রবণ করিতেন। রমজানের দিবাভাগে দুধ বা অন্য কিছু পান করিতেন না। কোন আহার করিতেন না। তাহাতে সকলেই বুঝিতে পারিলেন যে, মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনিও রোজা পালন করিতেছেন। শৈশবে তিনি কখনো উলঙ্গ হইতে চাহিতেন না। যখন তখন মলমূত্র ত্যাগ করিয়া মায়ের পরিধানের কাপড় ও বিছানা অপবিত্র করিতেন না। জন্মলগ্ন হইতেই তাঁহার সুষমামন্ডিত সুনিয়ন্ত্রিত ও রীতিসিদ্ধ আচরণে সকলে অত্যন্ত মোহিত ছিলেন। কৈশরে পদার্পণ করার পূর্বে তাঁহার বীর পিতা তাঁহাদেরকে আল্লাহর হেফাজতে রাখিয়া বালাকোট শিখ সমরে যোগদান করিয়া ধর্ম যুদ্ধে শাহাদত বরণ করেন। এর কিছু দিন পরেই তিনি জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার সহিত আধ্যাত্মিক সিদ্ধি লাভের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলের অরণ্যে গমন করেন। আল্লাহ পাকের ধ্যানে তাঁহার দিন অতিবাহিত করিতে থাকেন। ক্ষুধা পাইলে গাছের পাতা বা ফলমূল খাইতেন এবং তৃষ্ণা নিবারণে ঝর্ণার স্বচ্ছ সুপেয় পানি পান করিতেন। কখনো কখনো তাঁহাদের জন্য আসিতো স্বর্গের খাদ্য পানীয় ভরা খানচা। রাসূলেনোমা ওয়াইসী (রহঃ) গৃহে প্রত্যাবর্তনের কয়েক মাস পরে তাঁহার মাতা তাঁহাকে নিয়া মক্কা শরীফে হিজরত করার মানসে চট্টগ্রাম হইতে কলিকাতা অভিমুখে জলপথে যাত্রা করেন। কিন্তু অতি মর্মন্তদ যে, কলিকাতার অনতি দূরে হুগলী নদীর মোহনার নিকটবর্তী এলাকায় জাহাজ ডুবি হইয়া তাঁহার মাতা পরলোক গমন করেন। আল্লাহ পাকের অসীম রহমতে হযরত খাজা খিজির (আঃ) আসিয়া হযরত ওয়াইসী (রহঃ) কে উদ্ধার করিয়া হুগলী নদীর মোহনার তীরবর্তী লোকালয়ে রাখিয়া যান। তিান অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। কোন বিষয় একবারের বেশি দ্বিতীয় বার পড়ার প্রয়োজন হইত না। মাত্র দশ বছর বয়সে তিনি পবিত্র কোরআনে ক্বারী হইয়াছিলেন। তাঁহার আধ্যাত্মিক শিক্ষার হাতে খড়ি হইয়াছিল নিজ পিতা ক্বেবলা কামেল অলি হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সাইয়েদ ওয়ারেস আলী (রহঃ) এর সান্নিধ্যে। মাত্র চার থেকে সাত বছরের মধ্যে তিনি কাদেরিয়া, চিশ্তীয়া, নকশেবন্দীয়া, মোজাদ্দেদীয়া ত্বরিকায় প্রাথমিক ভাবে দীক্ষা প্রাপ্ত হইয়া হৃদয়কাড়া পুষ্পের ন্যায় আকর্ষনীয় হৃদয়গ্রাহী সুগন্ধি বিলাইতে শুরু করেন। রাসূলেনোমা ওয়াইসী (রহঃ) প্রথমে হুগলী শহরের হাজী মুহাম্মদ মহসিন মাদ্রাসায় বিদ্যাশিক্ষা করেন। তিনি অতিশয় মেধাবী ছিলেন বলিয়া সরকারী বৃত্তি সহকারে উক্ত মাদ্রাসায় শিক্ষা লাভ করেন। এখানে তিনি পবিত্র কোরআনের তাফসির, হাদিস শরীফ, ফেকাহ, অসুল, মান্তেক প্রভৃতি শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। তিনি আরবী, উর্দু ও ফার্সী সাহিত্যে প্রভূত পান্ডিত্য অর্জন করেন। তিনি প্রকাশ্য ভাবে যাবতীয় নিসবত অর্জন করিবার মানসে হাজী গাজী হযরত শাহ্ সূফী নূর মোহাম্মদ নিজামপুরী (রহঃ) এর নিকট গমন করেন। তিনি তাঁহারপবিত্র হস্তে বায়াত গ্রহণকরিয়া তাঁহার শিষ্যত্ব বরণ করেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কাদেরিয়া, চিশ্তীয়া, নকশেবন্দী ও মোজাদ্দেদীয়া ত্বরিকার খেলাফত অর্জন করেন। রাসূলেনোমা ফতেহ্ আলী ওয়াইসী (রহঃ) মারেফাতের উচ্চ শিখরে উন্নীত হইয়া খোদাতায়ালার অসীম রহমতে প্রথমত তিনি কুতুবুল এরশাদ নামক উচ্চ পদটি লাভ করিয়াছিলেন। অতঃপর ক্রমশ আধ্যাত্মিকতার আরো উচ্চ শিখরে আরোহণ করিয়া ফরদিয়াতের মোকামে উন্নীত হইয়া ফরদ হইয়াছিলেন। পরে তিনি সমধিক উন্নত হইয়া কুতবুল ওয়াদত নামক অতি সুউচ্চ পদ প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। একদা রমজান মাসে হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কর্তৃক তিনি বঙ্গ, আসাম ও বিহারের প্রধান কুতুবুল আলম পদ প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। এরপর তিনি গাউসে জামান পদ প্রাপ্ত হন। তিনি মুহূর্তের মধ্যে আপন অস্তিত্ব ভুলিয়া হযরত রাসূলে পাক (সাঃ) এর মধ্যে একাকার হইয়া যাইতেন বলিয়া তাঁহাকে ‘ফানাফির রাসূল’ নামে অলংকৃত করা হয়। তিনি তাঁহার ৩৫ জন মুরিদ খলিফা প্রত্যেকেই রাসূল করিম (সাঃ) এর প্রেম, ভালবাসা, আনুগত্য ও আধ্যাত্মিক জগতের পূর্ণ শিক্ষা-দীক্ষা দান করিয়া পরিপূর্ণ ভাবে কামেল পীরের মর্যদা দান করেন। তাঁহার ৩৫ জন বিশিষ্ট মুরিদ ও খলিফার নাম পবিত্র ‘দিওয়ানে ওয়াইসী’ কিতাবে লিপিবদ্ধ করিয়াছেন। বেগ বাগানরো কুটিরে অবস্থান কালে রাসূলেনোমা হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহঃ) ফার্সী ভাষায় ‘দিওয়ানে ওয়াইসী’ কিতাব খানি রচনা করেন। অতি উচ্চাঙ্গের মৌলিক এই মহাকাব্যে হযরত রাসূলে করিম (সাঃ) এর এশকে মধুর প্রেমপূর্ণ, ঝংকার সম্পন্ন আধ্যাত্মিক লহরীময় গযল ও কাসিদা রহিয়াছে। রাসূলেনোমা ফতেহ আলী ওয়াইসী (রহঃ) এর পবিত্র ‘দিওয়ানে ওয়াইসী’ মহাকাব্যে একটা বিষয় পরিষ্কার ভাবে ফুটিয়া উঠিয়াছে যে, নবী করিম (সাঃ) এর প্রতি প্রেম ভালবাসার মাধ্যমে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন ও নাজাত পাওয়ার একমাত্র পথ। তিনি তাঁহার ভক্ত অনুসারী গণকে সর্বদা নবী করিম (সাঃ) এর প্রেম ভালবাসার ও যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের শিক্ষা দিতেন। অবশেষে অনেক ভক্ত এবং খুলাফাদেরকে অশ্রু সাগরে ভাসিয়ে ১৮৮৬ সালে ৬ ডিসেম্বর এ মহামানব জান্নাতুল ফেরদাউসের পথে পাড়ি জমান। কলিকাতার মানিকতলা লালবাগ মহল্লায় ২৪/১ মুন্সীপাড়া লেনস্থ ২নং দিল্লীওয়ালা গোরস্থানে তার মাজার অবস্থিত। হে আল্লাহ আমাদেরকে তাদের নেক নজর কামনার তৌফিক দান করুক।
Leave a Reply