মাহমুদুল হাসান
কুমিল্লা প্রতিনিধি:::::::::——
ঐতিহ্যের ইট পাথরে গড়া নান্দনিক স্থাপত্যশিল্পের অন্যন্যা নির্দশন বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়ত। যা ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আজও প্রেমিকার পেলে যাওয়া গোলাপ বুকে ধারণ করে বেঁচে থাকা যুবকের মত প্রায় দেড়শ বছর ধরে অম্লীন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ধূলো উড়া আকাশ, রঙ খসে পড়া দেয়াল, মাটির গন্ধে ভরা হাজারো বিখ্যাত ব্যক্তিদের পদচারণা, কার্ণিশ ভাঙা জানালার ফাঁকে রোদ্দুর্রের খেলা করা টাউন হল যেন কুমিল্লার প্রাণকেন্দ্র।
টাউনহলের ধোঁয়া উঠা চায়ের কাঁপ দেখলে মনে পড়ে যায়, কবির সুমনের “এক কাপ চায়ের চুমুকে তোমাকেই চাই।” তিনি যেন টুংটাং চামচের শব্দে গলিত চিনির মত তার প্রেমিকার সামনে হারিয়ে যান! বলছি কুমিল্লার বিখ্যাত টাউন হল ময়দানের চায়ের কথা! এ যেন রূপকথার গল্পের মতোই ভালোবাসার আদ্র স্পর্শ প্রতিটি যুবকের জন্য।
টাউন হলের ১৩টি টংয়ের চা দোকান রয়েছে। এখানে সব রকমের চা পাওয়া যায়। মালটার চা, গরুর দুধের চা, হরলিক্সের চা, মালটোবার চা, স্পেশাল দুধ মালাইয়ের চা, তেঁতুলের চা, মসলার চা সহ হরেক রকমের চা পাওয়া যায়। তবে এখানে বেশির ভাগ মানুষের পছন্দের গরুর দুধের চা।
কলেজ পড়ুয়া স্কুল ছাত্রের সকাল শুরু হয় না টাউন হলের মামাদের হাতের ঝলকিত হলুদ বর্ণিল চা ছাড়া। বটবৃক্ষের মত সকল যুবকের বুকে হাজারো কাল ধরে এই যেন তাদের সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি আড্ডার সভাস্থল। শিশিরে লুকায়িত সন্ধ্যায় মেঘ যেন ভরে যায় যুবকদের কোলাহলে!
কুহক ধ্বনির মত তাদের সন্ধ্যা গুলো স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ঈশান বলেন, “মাঝে মাঝে মন হয় বিচ্ছেদের কষ্ট বুকে নিয়ে বাঁচা যায়, এই টাউনহলের চা ছাড়া নয়। কি যে মধুরতার গুঞ্জন বসতো! আজ যা বিলীন।”
বয়:জৈষ্ঠরাও পিছিয়ে নেই। পরিবার নিয়ে তাদের গল্প গুজব জমে যায় সন্ধ্যার ডুবে যাওয়া সূর্যের রক্তিম নিনিত ছায়ায়। অদ্ভুত আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে থাকে প্রতিটি মানুষের মন। তারা যেন অনুভব করেন, যৌবনের মহাসঙ্গীতের আহবান।
সেই টাউনহলে এখন আর বসে না চায়ের আড্ডা। যুবকরা বসে না সিগারেটের হাতে। তারা বলে না, মামা তোমার হাতের বানানো চায়ে চুমুক না দিলে যেন বিষাদ মেঘ খেলা করে! তুমি আশ্চর্য। শুধু আশ্চর্য না তুমি না আকবরের রন্ধনশালার আজীব চিস!
সময় ক্ষয়ে যাবে অস্তিত্ব টিকে থাকবে স্মৃতিতে লেগে থাকা সেই সন্ধ্যা। মাটির ভুঁইফুড়ে গন্ধ আসবে মামাদের দুধে রাঙানো ধোঁয়া উঠা গরম চা।
Leave a Reply