এক দেশে এক রাজা ছিল, রাজার একমাত্র ছেলে রাজকুমার। রাজকুমারের সাথে পাশের দেশের অন্য এক রাজকুমারীর বিয়ে হয়। রাজকুমারী খুবই ভালো স্বভাবের এবং অতিথিপরায়ন। রাজার দেশে হঠাৎ দুর্ভোগ দেখা দিল, প্রায় প্রতি রাতেই দেশের কেউ না কেউ ঊধাও হয়ে যাচ্ছে , তাদের আর কোন খোঁজ মিলছে না অথবা গলা কাটা লাশ পাওয়া যাচ্ছে। রাজা ঘোষনা দিলো – যে এই দুর্যোগের কারন কি এবং কে করছে ধরতে পারলে তাকে রাজ্যের এক অংশ লিখে দিবে। রাজার ঘোষনার পর রাজ দরবারের সেনাপতি এসে জানালো এক সুন্দরী মহিলা রাজার সাথে দেখা করতে চাই, সে দেশকে এই দুর্দশা থেকে উদ্ধার করতে পারবে। রাজা ঐ মহিলাকে তার দরবারে হাজির করার নির্দেশ দিলেন, মহিলা রাজ দরবারে এসে রাজাকে কুর্নিশ করে রাজার সামনে মাথা নত করে জানালেন যে, সে এই দুর্যোগ থেকে দেশকে উদ্ধার করতে পারবে কিন্তু তাকে রাজ মহলে থাকতে দিতে হবে , নতুবা রাজকুমারের জীবন নাশের কারন হতে পারে। রাজা তো মহা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন , কোন গতান্তর না দেশে মহিলাকে রাজ মহলে থাকার অনুমতি দিলেন।
আসলেই এই মহিলাই রাক্ষুসে। সে দিনের বেলায় সুন্দর মহিলার রুপ ধারন করে আর যখন আঁধার হয় তখন সে তার আসল রুপে হাজির হয়। রাতের অন্ধকারে সে মানুষ শিকার করে। সে সব সময় সুদর্শন যুবকদের পছন্দ করে, সুযোগ বুঝেই সে শিকারে নেমে যায় , প্রথমে তার রুপ দেখিয়ে যুবকের কাছে আসে, তার পর ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে কামনায় লিপ্ত হয়, এর পর গলায় কমড় দিয়ে জীবন শেষ করে দেই। তার মুল উদ্দেশ্যে একেক সময় একেকজনকে আঁধারে ধরবে এবং রক্ত চুষে চুষে খেয়ে জীবন বিনষ্ট করে দিবে।
এখন তার চোখ পড়েছে রাজকুমারের দিকে। রাজকুমারকে তার খুবই পছন্দ , কিন্তু রাজপ্রাসাদের চারিদিকে কড়া পাহারা থাকায় রাক্ষুসে রাজা প্রাসাদে ঢুকতে পারে নাই। তাই সে সুন্দর মহিলার রুপ ধারন করে রাজপ্রাসাদে ঢুকেছে। সে প্রতিদিন রাজকুমারের খোঁজ খবর নেই, আস্তে আস্তে রাজকুমারের ঘনিষ্ট হচ্ছে। রাক্ষুসের সুন্দর ব্যবহারে রাজা ও রাজকুমারী সহ সবাইকেই সে বসে নিয়ে এসেছে। সে রাজকুমারকে এত পছন্দ করে যে, রাক্ষুসে তাকে একবারে না মেরে তার রক্ত ধীরে ধীরে খাওয়া শুরু করেছে।রাক্ষুসে নিজের রক্তের ক্ষুদা মিটানোর জন্য প্রতি রাতেই রাজপ্রাসাদ থেকে গোপনে রাতের আধারে বের হয়ে বিভিন্ন যুবককে টার্গেট করে তাকে শিকার করে আবার ভোর হওয়ার আগেই প্রাসাদে ফিরে আসে।এদিকে রাজকুমার ধীরে ধীরে এই রাক্ষুসির মায়া জালে আটকিয়ে গেছে। রাজকুমার রাক্ষুসির আদর যত্নে তার প্রেমে পড়ে গেছে, রাক্ষুসিও তার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে, রাজকুমারকে সে আর মারতে চাই না। রাজকুমারের গভীর প্রেমে রাক্ষুসি এখন মানুষ হিসাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।
রাজা তো মহা চিন্তায়। এখনো প্রতিদিন দেশে লোক নিখোঁজ হচ্ছে। রাজাকে সেনাপতি বুদ্ধি দিলো তিনি যেন দেশের শ্রেষ্ঠ জ্যোতিষীকে ডেকে তার উপদেশ নিতে এবং কিভাবে প্রতিদিন মানুষ নিখোঁজ হচ্ছে সেটা জানতে । সেনাপ্রতির নির্দেশে দেশের শ্রেষ্ঠ জ্যোতিষীকে রাজ দরবারে হাজির করা হলো। জ্যোতিষী গননা করে জানতে পারলো রাজা তার দরবারে যে মহিলাকে আশ্রয় দিয়েছে সেই রাক্ষুসে এবং সেই প্রতিদিন দেশের সুন্দর সুন্দর যুবকদের তার শিকারে পরিণত করে। তখন রাজার নির্দেশে ঐ রাক্ষুসিকে জন সম্মুখে গায়ে তেল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে মারলো এবং রাজ প্রাসাদকে দোয়া পড়ে আটকিয়ে দিলো যাতে রাক্ষুসের আত্মা প্রাসাদে ঢুকতে না পারে। কিন্তু রাক্ষুসে তো অবিনশ্বর।
রাক্ষুসিকে পুড়িয়ে মারার পর তার আত্মা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে। সে প্রাসাদে ঢুকতে না পারলেও তার অগ্নিমূর্তি দিয়ে প্রাসাদে বিষবাষ্প ছড়াতে শুরু করলো। রাক্ষুসে কোন মতেই রাজকুমারকে ভুলতে পারছে না। ভালোবাসার ক্ষত ও কামনার বিলাসে রাক্ষুসে এখন আকাশে বাতাসে গলিত রক্তের গন্ধ ছড়াচ্ছে।
আপনি যদি কাউকে ভালোবাসেন তবে অবশ্যই দিল দিয়ে , সত্যিকার অর্থেই ভালোবাসবেন। সততা ,নিষ্ঠা ও অন্তর দিয়ে ভালোবাসবেন তার স্বত্ব ও আত্মাকে। তাহলে সে আপনাকে কোন দিনও ভুলতে পারবে না। প্রেমিক হবে প্রেমিকের মত , উদারতা দিয়ে বুকে টেনে নিয়ে কামনার গভীরে সমুদ্রে হারিয়ে যাবে , একেক দিন একেক রুপে নিজেকে হাজির করবে। বাসনার স্বপ্ন কখনও হবে প্রমোদবিলাস , কখন স্বপ্নচারিতায় আবার কখনও গহীন অরন্যে। প্রেমিকা তো সেই যাকে আপনি জীবনের অর্থ ও স্বাদ বুঝিয়েছেন, নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। সে তো আপনাকে এক মুহুর্তের জন্যও ভুলতে পারবে না, দুরে যাওয়াতো অনেক পরের কথা। যদি ভালো মন হয় তবে যুগ যুগ দেখা না হলেও হৃদয়ের গভীরে যে রক্তজমাট ও ক্ষত আপনি লাগিয়ে দিয়েছে সেটা আমৃত্যু মনে রাখবে আর যদি কখনও এমন রাক্ষুসীকে ভালোবাসেন , সেও আপনাকে ভুলতে পারবে না- কাছে আসতে না পারলে আপনার প্রতি বিষবাষ্প ছড়িয়ে যেতেই থাকবে যতদিন প্রান থাকবে, তবে আপনার জয় হবে , জয় হবে ভালোবাসার – পাত্র পরিস্কার হলে যত্নে রাখবে আর অপরিস্কার হলে গন্ধ ছড়াবে ভালোবাসা অবিনশ্বর হয়ে রবে সেটা যেস্থানেই হউক না কেন!!!!
Leave a Reply