NAP NEWS 15-05-2024
স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবসে বাংলাদেশের যৌথনদী ও পরিবেশ রক্ষার জন্য অঙ্গীকার করে জনগনকে সাথে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানিয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ।
বুধবার (১৫ মে) গণমাধ্যমে “১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবস” উপলক্ষে পাঠানো এক বিবৃতিতে পার্টির চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া এ আহ্বান জানান।
তারা বলেন, ১৯৭৬ সালের ১৬ মে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী গঙ্গার পানি একতরফা প্রত্যাহারের প্রতিবাদে এবং বাংলাদেশের পানি প্রাপ্তি ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে রাজশাহী থেকে সীমান্তের কাছে কানসাট পর্যন্ত এই লংমার্চের আয়োজন করেছিলেন। তার ফলশ্রæতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৯৭৭ সালের প্রথম গঙ্গা পানিবন্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু পরবর্তিতে এই চুক্তির মূল রক্ষাকবচ গ্যারান্টি ক্লজ বাদ দিয়ে সমঝোতা স্মারক এবং চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। উজান থেকে পানি না আসলে বাংলাদেশের কিছুই করার থাকেনা। অন্যদিকে তিস্তাসহ ৫৪ যৌথ নদীর উজানে বাঁধ নির্মান করায় বাংলাদেশে এখন আর স্বাভাবিক বন্যা হচ্ছেনা। শুষ্ক মওসুমে বাংলাদেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল শুকিয়ে গিয়ে মরুকরণের প্রক্রীয়া শুরু হয়েছে। তাই আজও মওলানা ভাসানীর ফারাক্কা লংমার্চ প্রাসঙ্গিক।
নেতৃদ্বয় বলেন, আজ ফারাক্কা বাঁধ শুধু এ দেশের মানুষের জীবন মরণের সংকটই নয় বরং এর ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের স্বাভাবিক প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক বিপন্ন হয়েছে। অপরদিকে তিস্তার পানি নিয়ে অনৈতিক আচরণ, হটকারিতা এবং একগুঁয়েমির ফলে এ নদীর বাংলাদেশ অংশের বিশাল এলাকায় আজ মরুভূমির প্রতিচ্ছবি। আজ থেকে ৪৮ বছর আগে ভারতের পানি আগ্রাসনের পরিণতি যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা দিব্যদৃষ্টি দিয়ে দেখতে পেয়েছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী।
বাংলাদেশ ন্যাপ নেতৃদ্বয় আরো বলেন, ৪৮ বছরে ফারাক্কা সমস্যার মত জাতীয় সংকটও যখন আমাদেরকে জাগাতে পারেনি, নব্য কারবালার আহাজারিকেও যখন বিনা প্রতিবাদে মেনে নিয়েছি, তখন আরও বড় বিপর্যয় আসবে এটাই তো স্বাভাবিক। এবার ভারত আন্ত:নদী সংযোগ মহাপ্রকল্প নিয়ে মাঠে নেমেছে। এর মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশের অভিন্ন ৫৪টি নদী-উপনদীর পানিই একতরফাভাবে প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে। ইতোমধ্যে বরাক নদীর উজানে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের ভারতীয় ইতর পরিকল্পনাটি এখন বাস্তবায়নের চূড়ান্ত পর্যায়ে। এ মহাসংকটকালে বাংলাদেশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নেই।
তারা বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য বর্তমান রাজনৈতিক নেতৃত্বগুলো জাতিকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। জাতি একজন দেশপ্রেমিক, সাহসী, দুরদর্শী, নেতৃত্বের শূন্যতা প্রবল ভাবে অনুভব করছে। জাতির এ ক্রান্তিকালে মওলানা ভাসানীর মত একজন সিংহপুরুষের দরকার। আজ সময় এসেছে দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশীদের এক কাতারে দাড়িঁয়ে দেশের স্বার্থেও পক্ষে উচ্চকন্ঠ হবার। ভারতের অন্যায় আগ্রাসী পানি নীতির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তোলার।
নেতৃদ্বয় বলেন, নেতিবাচক রাজনীতি আমাদের জনগণের মন থেকে স্বাভাবিক অধিকারবোধটুকু যেন কেড়ে নিয়েছে, যার ফলে লড়াকু এ জাতি মুক্তিযুদ্ধের মত আরেকটি যুদ্ধ করে পানির উপর তাদের নায্য হিস্যার দাবি প্রতিষ্ঠিত করার চিন্তা করতে পারছেনা। মওলানা ভাসানীর সেই বিখ্যাত উক্তি ‘‘জনগণের সংগ্রাম পারমাণবিক মারণাস্ত্রের চাইতে শক্তিশালী” ধারন করতে হবে। বাংলাদেশের হাতে বসে থাকার সময় নেই। প্রতিবেশী কর্তৃক অন্যায় পানি আগ্রাসনের মোকাবেলায় যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণে আমাদের দুর্ভাগ্যজনক ব্যর্থতা আমাদেরকে সমূহ সর্বনাশের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করেছে। জাতীয়, আঞ্চলিক এবং বিশ্ব জনমতকে সুসংগঠিত করে জাতিসংঘের মাধ্যমে সংকটের উপযুক্ত সমাধানের প্রচেষ্টা আমাদেরকেই করতে হবে।
Leave a Reply