1. hthvlixr@mailkv.com : charlene45s :
  2. liubomir8745@gmail.com : creatanlije :
  3. sirazul2664@gmail.com : dakhinbongonews : দক্ষিণবঙ্গনিউজ ২৫.কম
  4. jordozognu@gufum.com : jordozognu :
  5. Nadiburipaji@gmail.com : Nadia :
  6. Shahneowanalam@gmail.com : Shahneowaj :
  7. Shahneowajalamkb@gmail.com : Shahneowajalam :
  8. shibuojha1997@gmail.com : shibu ojha :
  9. fullermichaelsen980@kingsemails.com : wintermargin47 :
রুমা রহমান এর ছোট গল্প -প্রিয়তির ডায়েরি - dakhinbongonews25
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২১ অপরাহ্ন
শিরোনাম
কোনো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বা সংকট তৈরি কাম্য নয় : বাংলাদেশ ন্যাপ গণ চীনের ৭৫তম বার্ষিকীতে শুভেচ্ছা ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ বিপ্লব চীন বিপ্লব : বাংলাদেশ ন্যাপ ভালুকা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদের বহিস্কার চায় অধিকাংশ নেতা রাজনৈতিক শূণ্যতা পূরণে স্বপনের মত মেধাবী রাজনীতিকের প্রয়োজন : বাংলাদেশ ন্যাপ কোটা সংস্কার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যই মুক্তিযদ্ধের চেতনা পরিপন্থি : এনডিপি চেতনার নামে প্রজন্মের মধ্যে বিভক্তি রাষ্ট্রের জন্য শুভ নয় : বাংলাদেশ ন্যাপ অনির্দিষ্টকালের জন্য কুবি অর্থনীতি শিক্ষার্থীদের ক্লাস -পরীক্ষা বর্জন  আবাসনের ব্যবস্থা না করে হরিজনদের উচ্ছেদ অমানবিক : গোলাম মোস্তফা সরকারের প্রতি বাংলাদেশ ন্যাপ : অবিলম্বে কোটা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো প্রয়োজন বাজেটে সাধারণ জনগনের স্বার্থের প্রতিফলন চাই : বাংলাদেশ ন্যাপ’র ১১ সুপারিশ
বিজ্ঞাপন
★বইমেলা-২০২৫★ বইমেলার ২০২৫ উপলক্ষে আমাদের প্রস্তুতি বেশ ভালো, অনেকগুলো নতুন পাণ্ডুলিপির কাজও চলমান। সম্মানীত লেখকদের বলছি, আগামী বইমেলার জন্য লেখা প্রস্তুতের এখনই উপযুক্ত সময়। কেন বলছি? কারণ পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করলে নির্ভুল সম্পাদনা, পাঠকপ্রিয় ও মানসম্মত বই প্রকাশের সুযোগ থাকে বেশি। তাই পাণ্ডুলিপি নির্বাচন ও প্রস্তুতের এখনি উপযুক্ত সময়। মনে রাখবেন, পাণ্ডুলিপি ২৫টি ধাপ পেরিয়ে পর্যায়ক্রমে একটি বই হয়। তাই মানমম্মত বই প্রকাশ করতে হলে যথেষ্ঠ সময়েরও প্রয়োজন। আগামী বইমেলায় সপ্তর্ষি প্রকাশন এর সাথে যারা যুক্ত হতে চান তারা যোগাযোগ করতে পারেন। ধন্যবাদ। Shibu Chandra Ojha প্রকাশক, সপ্তর্ষি - Saptarshi ৩৭/১ খান প্লাজা, তৃতীয় তলা, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০ ফোনঃ 01714225520/01712158340 হোয়াটস অ্যাপ -01318403248 ই-মেল:shibuvgco@gmail.com

রুমা রহমান এর ছোট গল্প -প্রিয়তির ডায়েরি

  • সর্বশেষ আপডেট বৃহস্পতিবার, ১৮ মে, ২০২৩
  • ৬৯ বার দেখা হয়েছে

প্রিয়তির ডায়েরি

আমার প্র্যাগনেন্সির চার মাসের সময়, আমার হাসবেন্ড নাফিস রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়।

আমার বিয়ে হয়েছে দেড় বছর। এই দেড় বছরের
বিবাহিত জীবনে আমি আমার হাসবেন্ড নাফিসের কাছ থেকে যতটুকু ভালোবাসা, মায়া মমতা পেয়েছি তা হাজার, হাজার পৃষ্ঠার একটা বই লিখলেও তার গুনগান লিখে শেষ করা যাবে না।

আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান প্রিয়তি। আমাদের পরিবারটি ছিলো যৌথ পরিবার। আমার বাবা,চাচারা মিলে মোট তিন ভাই। এই তিনজনের পরিবার আর আমার দাদা,দাদী মিলে আমাদের যৌথ পরিবারের সদস্য সংখ্যা সর্বমোট বিশজন । আমার দাদা, দাদীসহ আমরা এই যৌথ পরিবারটিতে আটাশ বৎসর যাবৎ একসাথে বসবাস করে আসছি।

এই পরিবারটি ছিলো আমার সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখান থেকে আমি আমার জীবনের সেরা শিক্ষাগুলো অর্জন করতে পেরেছি। সত্যি বলতে আমাদের এই যৌথ পরিবারের সকলের চলাফেরা, আচার -আচরণ লোকমুখে শুনে তা যাচাই করেই আমার হাসবেন্ড নাফিস ঘটকের মাধ্যমে আমাকে বিয়ে করেছে। কারণ আমি দেখাশোনায় আহামরি কোনো সুন্দরী নই এবং আমাদের পরিবার ও খুব সম্পদশালী নয়। আমাদের সম্পদ বলতে নেত্রকোনা বাজারে আমাদের একটা দু’তলা বাড়ি আছে। এ বাড়ির নীচতলার একটা ফ্ল্যাটে আমার দুই চাচা তাদের পরিবার নিয়ে থাকেন আর বাকি অংশটায় আমার দাদার একটা মুদি দোকান আছে, যা আমার দুই চাচা মিলে চালায়। তাছাড়া আমার বাবার একটা ছোটোখাটো শাড়ীর দোকান আর গ্রামে আমার দাদার অল্প কিছু ফসলি জমি আছে, সবকিছুর আয় মিলিয়ে আমাদের যৌথ পরিবারটির সংসার খরচ চলে।

নাফিসের বাবা ছিলেন শহরের নামকরা ধনী ব্যবসায়ী। নাফিসের যখন আঠারো বছর, তখন তার বাবা মারা যায়। তারা ছয় ভাই, বোন। তার পাঁচ বোন বড় আর সে সবার ছোট। তবে পাঁচ বোনের পর একমাত্র ছোট ভাই হয়েও সে তাদের আদরের ভাই ছিলো না, ছিলো সব বোনদের হিংসার পাত্র।

আমার শ্বশুর সাহেব মারা যাওয়ার আগে তার
সব ছেলেমেয়েদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ করে দিয়ে গেছেন। নাফিস একমাত্র পুত্রসন্তান হওয়ায় সে বোনদের চেয়ে বেশি সম্পদের মালিক হবে তা নাফিসের পাঁচ বোন কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। তাই আমি এ বাড়ির বউ হয়ে আসার পর নাফিসের কেনো বোনই আমাকে ভালো চোখে দেখেনি , সব কিছুতেই আমার দোষ বের করে সংসারে অশান্তি করার চেষ্টা করতো। তাদের জেদের কারণে এ বাড়িতে ঠিকমতো কোনো কাজের লোক রাখা যেতো না।

আমার শাশুড়ি বেশির ভাগ সময়ই অসুস্থ থাকতেন। তাই সংসারের সব রকম কাজকর্ম করা, শাশুড়ির সেবা যত্ন করা সব আমাকে একাই সামাল দিতে হতো। আমার একা হাতে এতো কাজের চাপ দেখে নাফিসের অনেক সময় মায়া হতো। তাই নাফিস তার ব্যবসা দেখার পাশাপাশি অনেক সময় মাকে লুকিয়ে আমাকে সাহায্য করতো। যেমন আমি যখন রুটি বানাতাম, তখন সে রুটিগুলো সেঁকে দিতো, আমি ভাত তরকারি রান্না করলে সে এসে টেবিলে খাবারগুলো পরিবেশন করতো। আমি কখনো অসুস্থ হয়ে পরলে সে ডিম ভাজি, ডাল, নুডলস এ খাবারগুলো তৈরি করে ফেলতো। এ বিষয়গুলো কয়েকবার আমার শাশুড়ির চোখে পড়ে যাওয়ায়, আমার প্রতি শাশুড়ির বাঁকাদৃষ্টি আমাকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে। তবে আমি কখনো চাইনি নাফিস তার ব্যবসার এতো ব্যস্ততায় আমাকে সাহায্য করুক। আমি চেয়েছি, মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ায় সব কাজ আমি নিজে সামলে নিবো। কিন্তু নাফিস সব সময় বলতো, সংসারের সব কাজ স্বামী- স্ত্রী দু’জনে মিলে করলে সংসারটা শান্তিপুর্ন হয়, সুখের হয় এজন্য আমি তাকে কখনো বাঁধা দেইনি।

আমার শাশুড়ির সব কাজ আমি নিজের হাতে করে দেওয়ায় তিনি আমাকে আদর করতেন ঠিকই কিন্তু উনার ছেলে আমার কাজে সাহায্য করবে সেটা তিনি কিছুতেই সহ্য করতে পারতেন না। কারণ নাফিস উনার একমাত্র পুত্রসন্তান আর সে ছিলো ভীষণ আদরের। মাঝে মাঝে উনার মেয়েরা আমাদের বাসায় এসে আমার বিরুদ্ধে উনাকে উল্টাপাল্টা কিছু বোঝালে তিনি আমার সাথে হঠাৎ করে খারাপ ব্যবহার করতেন। তখন আমি ঠিকই বুঝতে পারতাম , নাফিসের বোনেরা হয়তো আমার শাশুড়ির কাছে আমার নামে কোনো বিষয়ে কুটনামি করেছে, যে কারণে ওরা বাসায় আসলে তিনি এরকম আচরণ করেন। এজন্য একবার নাফিস ভীষণ রাগ করে তার বোনদের এ বাসায় আসতে নিষেধ করেছিলো। তখন তারা এ বাসায় অনেকদিন না আসাতে আমাদের বউ, শাশুড়ির সম্পর্কটা বেশ ভালোই চলছিলো।

আমাদের বিয়ের তিন মাস পর আমার শাশুড়ি একদিন বললেন, তোমরা তাড়াতাড়ি একটা বাচ্চা নিয়ে নাও, আমার শরীরটা বেশি ভালো যাচ্ছে না,
যে-কোনো সময় আমি মরে যেতে পারি, তাই আমি আমার নাতির মুখ দেখে যেতে চাই। আমি একথা নাফিসকে বলার পর সে বললো, আমাদের হানিমুনটা বিদেশে সেরে আসার পর আমরা বাচ্চা নিবো। কারণ তোমাকে নিয়ে কয়েকটা দেশে আমার বেড়ানোর ভীষন ইচ্ছে যেমন: সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া। তাই আমাদের বাচ্চা হবার পর বিদেশ ঘুরার এ রকম সুযোগ আর কখনো পাওয়া যাবে না।

এ সমস্ত উন্নত দেশে আমাকে হানিমুন করতে নিয়ে যাবে শুনে আমার কেমন যেনো ভয় ভয় করছিলো। কারণ এ কথা নাফিসের বোনেরা জানতে পারলে আমার সাথে ওরা খারাপ ব্যবহার করবে আর বলবে আমি নাফিসকে ফুসলিয়ে বিদেশে হানিমুনে যাচ্ছি। আমার এই ভয়ের কথা নাফিসকে জানানোতে সে বললো, “আমি তো তোমার পাশেই আছি , তাহলে এতো ভয় কিসের? তারপর নাফিস কয়েকদিনের মধ্যেই আমাদের হানিমুনের ব্যবস্থা করে ফেললো। বিদেশে হানিমুন করতে গিয়ে , আমার কাছে ওখানকার বাড়ি ঘর, হোটেল, মার্কেট, সবকিছু খুব গোছানো আর স্বপ্নের মতো লাগছিলো। কারণ আমি বিদেশে গিয়ে সেখানকার মার্কেটগুলোতে প্রথম এস্কেলেটর চড়েছি, প্রথম ক্যাবল কারের সাথে পরিচিত হয়েছি যা আমাদের দেশে আগে কারো কাছ থেকে শুনিনি।

ওখানে গিয়ে আমি প্রথম প্রথম বিদেশি খাবার একেবারেই খেতে পারতাম না, কিসের যেনো একটা গন্ধ পেতাম। তারপর নাফিস আমার জন্য বাঙালি হোটেল খুঁজে আমাদের দেশীয় খাবারের ব্যবস্থা করলো। তাছাড়া আমাকে অনেক দামী দামী জুতা, ব্যাগ, কসমেটিকস কিনে দিলো। তারপর সে তার নিজের মা, বোনদের জন্য এবং আমার মা, বোনদের জন্য একই রকম জিনিস নিতে বললো। এরই মধ্যে আমাদের স্বপ্নের মতো দুটি সপ্তাহ কোনদিন দিয়ে যে পার হয়ে গেলো তা টেরই পেলাম না।

হানিমুন করে ফিরে আসার পর দেখি আমার শাশুড়ি আমার সাথে আর সহজভাবে কথা বলছে না। তখন আমার মনে হলো হানিমুন করাতে আমি মহাঅপরাধী হয়ে গেছি। এ বিষয়টা তখন আমার আর বুঝতে দেরি হলো না যে, কি কারণে আমার শাশুড়ি এরকম আচরণ করছে?

বিয়ের বছরখানিক পার না হতেই আমি কেনো কনসিভ করছি না, এটা নিয়ে আমার শাশুড়ি একদিন আমাকে অনেক কথা শুনালেন। তখন আমার ভীষণ মন খারাপ হলো। আমি বললাম, কনসিভ করার বিষয়টা তো আমার হাতে নেই মা, আপনি মুরব্বি মানুষ, আমার জন্য দোয়া করবেন।

এভাবে দেখতে দেখতে আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী এসে গেলো। আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন করার জন্য নাফিস ওখানকার নামকরা হোটেলে বুকিং দিলো। তবে এজন্য আমার মনে বিশেষ কোনো আনন্দ নেই। কারন নাফিস আমাদের জন্য কিছু করতে গেলেই আমার শাশুড়ি আর নাফিসের বোনদের কথা শোনার
ভয়ে আমি আতংকগ্রস্ত হয়ে থাকি। তবে আমাদের বিয়েবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে কারো কাছে কোনো কটু কথা শুনতে হয়নি। কারন আমি নাফিসকে বলেছিলাম, আমাদের বিয়েবার্ষিকীতে তুমি তোমার পাঁচ বোন আর মাকে আমার মতো সোনার চুড়ি কিনে দিও। সে আমার কথা রেখেছে তবে তাদের চুড়ির বদলে সে সোনার চেইন কিনে দিয়েছে। তা পেয়ে সবাই ভীষণ খুশি, তাই এযাত্রায় আমি বেঁচে গেলাম।

বিয়ের দেড় বছর পর ডিসেম্বর মাসের হাড় কাঁপানো শীতে একদিন নাফিস বললো, “আজ শেষরাতে আমাকে একটা জরুরী কাজে ঢাকা যেতে হবে, রাত তিনটায় রওয়ানা হলে সকাল নয়টায় গিয়ে ঢাকা পৌঁছাবো। তারপর হাতের কাজগুলো তাড়াতাড়ি শেষ করে ঐদিনই আবার বাসায় ফিরে আসবো।” সে ঢাকা যাবে শুনে আমার কেনো জানি একটুও ভালো লাগছিল না। আমি তাকে বলেছিলাম, আমাকেও তোমার সাথে নিয়ে যাও। এ কথা শুনে সে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, মাত্র পনেরো – ষোলো ঘন্টার ব্যাপার, তুমি এরকম করছো কেনো? তোমাকে তো এ সময়টা খুব সাবধানে থাকতে হবে, বেশি জার্নি করা যাবে না। দেখবে বাসায় কাজ করতে করতেই সময় চলে যাবে।

তারপর সেদিন ভোররাতে সে আমাদের গাড়ি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। সে বেলা এগারোটায় ঢাকা গিয়ে পৌঁছালো। পৌঁছানোর পর আমাকে ফোন করে জানালো সব কাজকর্ম শেষ করে রাত দশটায় রওয়ানা হবে।

সব কাজ শেষ করে সে ঢাকা থেকে রাত সাড়ে দশটায় রওয়ানা হলো। এক ঘন্টা পার হবার পর আমি টেনশনে কিছুক্ষন পর পর তাকে কল দিচ্ছি। সে আমার এতো কল পেয়ে বিরক্ত হয়ে বললো, এতো বার কল দিতে হয়? আসলে সে সারাদিন জার্নি করে রেস্ট না নিয়ে আবার জার্নি করায় আমার কেমন যেনো খুব অস্থির লাগছিলো,
এই অস্থিরতা তখন কিছুতেই কমছিলো না। আমার কাছে মনে হয়েছিল, নাফিস ঢাকায় সারাদিন কাজ করে ভীষণ টায়ার্ড থাকবে আর আমাদের ড্রাইভার ও সারাদিন গাড়ি চালানোর পর ভীষণ টায়ার্ড, তাই দুজন টায়ার্ড হয়ে রাস্তায় হঠাৎ ঘুমিয়ে গেলে এক্সিডেন্ট নিশ্চিত।

নাফিস ঢাকা থেকে রওয়ানা হবার দু’ঘন্টা পরে জানালো রাস্তা খুব কুয়াশাচ্ছন্ন, সামনে কিছুই স্পষ্ট দেখা যায় না, এ কারণে গাড়ি খুব আস্তে চালাতে হচ্ছে, তাই বাসায় পৌঁছাতে তাদের অনেক দেরী হবে। এ কথা শোনার পর আমার বুকের ভেতর মনে হলো কে যেনো হাতুড়ি পেটা করছে। আমি আমার মনকে কোনো ভাবেই শান্ত করতে পারছিলাম না। তারপর আমি কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি কিছুই বলতে পারছি না। রাত তিনটার সময় হঠাৎ অজানা নাম্বার থেকে কল করে আমাদের গাড়ির নাম্বার উল্লেখ করে বললো, সাদা রংয়ের একটা গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়েছে। কুয়াশার জন্য গাড়িটা ট্রাকের ভিতর ঢুকে গেছে। সেখানে ঢুকার সাথে সাথেই ড্রাইভার মারা গেছে আর একজনকে কাছাকাছি হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে রোগীর অবস্থা আশংকজনক দেখে কোনো হাসপাতালে উনাকে ভর্তি নিচ্ছে না। তাই উনার জন্য দ্রুত এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ঐ মুহূর্তে আমি কি করবো আমার পাগল হবার অবস্থা। কিন্তু তবুও মাথা ঠান্ডা রেখে নাফিসের
সব আত্মীয় স্বজন এবং আমার আত্মীয় স্বজনদের কল দিয়ে সবার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলাম। নাফিসের বোনদের সাথে যোগাযোগ করার পর তারা বললো, তারা আধা ঘণ্টা আগেই ব্যাপারটি জেনে গেছে আর এখন ঘটনাস্থলের কাছাকাছি তারা পৌঁছে গেছে। তারপর তারা নাফিসকে মুমূর্ষু অবস্থায় নিয়ে ঢাকার এ্যাপোলো হসপিটালে ভর্তি করিয়ে
দিলো। তার অবস্থা আশংকাজনক দেখে ডাক্তাররা তাকে লাইফ সাপোর্টে রেখেছে।

আমিও কাল বিলম্ব না করে আমার শাশুড়ি আর আমি দু’জন হাতে যা টাকা পয়সা ছিলো তা নিয়ে
আমাদের পরিচিত ভাড়া গাড়ি দিয়ে ঢাকা পৌঁছালাম। ওখানে গিয়ে নাফিসকে এরকম অবস্থায় দেখে আমার মনে হলো আমি এখনি দাঁড়ানো অবস্থা থেকে মাটিতে পরে যাবো । তারপর আমার শরীরটা ধীরে ধীরে অবশ হতে লাগলো, আমি জ্ঞান হারালাম। তারপর যখন
আমার জ্ঞান ফিরলো তখন দেখি সবাই আমাকে চারিদিক থেকে ঘিরে রেখেছে আর বলছে শক্ত হও আর নাফিসের জন্য তুমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো। কারণ লাইফ সাপোর্টে থেকেও কখনো কখনো রোগী ফিরে আসে।

তার পরদিন নাফিসকে দেখে আমি মনে মনে ভীষণ আশাবাদী হলাম। কারণ এক্সিডেন্টের পর তাকে যখন প্রথম দেখেছি তখন তার চেহারাটা কেমন যেনো ভীষন কালো লাগছিলো কিন্তু আজ দ্বিতীয়দিন তার চেহারাটা আগের চেয়ে একটু অনেকটা উজ্জ্বল হয়েছে। তার পরের দিন দেখছি তার দাঁড়িটা একটু বড় হয়েছে। তখন আমার মনে আশার সঞ্চার হলো যে, নাফিস অবশ্যই আমার কাছে ফিরে আসবে। আবার নাম ধরে ডাকবে, প্রিয়তি ! প্রিয়তি ! আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।

কিন্তু আমার সমস্ত স্বপ্নকে মিথ্যে করে দিয়ে সাতদিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর সে না ফেরার দেশে চলে গেলো।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর দেখুন...
©দৈনিক দক্ষিণবঙ্গনিউজ২৫.কম এর সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২৩-২০২৫
❤️Design With Tamim Zarif