স্কুল জীবনের বন্ধুদের মিলনমেলাঃ
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং পেশাগত জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা বন্ধুর পর বন্ধু পেয়ে থাকি যাদের প্রত্যেকেই স্ব-মহীমায় উজ্জল। তবে এটা অনস্বীকার্য যে সেই ছোট্টবেলার স্কুল জীবনের বন্ধুদের কোন তুলনা হয় না। এদের সাথে ফর্মালিটি বলে কোন শব্দ নেই – একমাত্র এরাই চল্লিশ, পঞ্চাশ এমনকি ষাটোর্ধ বয়সেও হঠাৎ জুম্মার নামাজের ঘন্টাখানেক আগে ফোন দিয়ে এতো বেলা অব্দি “স্ত্রীর সাথে ঘুমিয়ে থাকার” অপরাধে গালাগালি করে নামাজে যাওয়ার জন্য তাড়া দিতে পারে।
তেমনি আমাদের স্কুল জীবনের বেশ কয়েকজন বন্ধু এক হয়েছিলাম গত ২৮ জানুয়ারী ২০২৩ দুপুরে ঢাকার আর্মি গল্ফ ক্লাবে। একটা বিষয় নিয়ে আমরা গর্ব করতেই পারি আর তা হলো আমাদের ব্যাচের সবাই (হাঁ, সবাই!) পেশাগত ও ব্যবসায়িক জীবনে দারুনভাবে সফল। শুধু তাই নয় এরা এখনো এতোটাই উদ্দোমী যে কেউ কখনো ‘রিটায়ার’ করতেই ইচ্ছুক নয় !
মিলনমেলায় আমাদের বন্ধুদের মাঝে উপস্থিত ছিলো সফল ব্যবসায়ী মানিকজোড় হারুন-মামুন দুই ভাই, যুক্তরাস্ট্র প্রবাসী বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ “জ্ঞান বাহন” এর উদ্দোক্তা “ই-লার্নিং খান” বদরুল খান (অসম্ভব পরীশ্রমী ও মেধাবী এই ভদ্রলোক কোন একদিন রিজিওনাল বা গ্লোবাল কোন এওয়ার্ড পেয়ে গেলে অবাক হবো না), জীবনের বড় একটা অংশ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী হবার পর বাংলাদেশে ফেরৎ এসেও সফল ব্যবসায়ী হওয়া জগলুল, নিজ মেধা ও পরিশ্রমে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ এর ব্যবসায়ে সফল মোস্তাফিজ, মার্কেটিং কাহাকে বলে কতো প্রকার ও কি কি তাহা দেখিয়ে দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে চিংড়ী সহ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের অত্যন্ত সফল ব্যবসায়ী শাহজাহান (এই ভদ্রলোকের সমস্যা হলো আজ বিকালে আপনি তার ঢাকার বাসায় ফোন করে কথা বলার দুই দিন পর আবার যখন ফোন করবেন তখন অলরেডী তিনি ইউরোপের কোন একটি দেশে বিজনেস মিটিং এ ব্যস্ত!), আমাদের ব্যাচের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে তানজিলা (এই ভদ্রমহিলাকে এখনো যে কেউ ৩০-৩৫ বছরের সুন্দরী তরুনী বলে চালিয়ে দিতে পারবে!)। মেয়েদের মধ্যে আরো ছিলো সদা হাসিমুখ মেধাবী আইনজীবি ও পেশাজীবি বন্দনা ও রাবেয়া। ছিলো টেলিটকের এমডি হিসাবে সফলভাবে চাকুরী শেষ করা মেধাবী ইলেক্ট্রিকাল ইন্জিনিয়ার গিয়াস।
আরো ছিলো আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে মেধাবী সাকিব যার এসএসসি, এইচএসসি, বুয়েটের সিভিল ইন্জিনিয়ারিং এ বিএসসি ও যুক্তরাষ্ট্রের এমএস সহ কোন পর্যায়েই আপনি তার গ্রেড, ডিভিশন বা ক্লাস জানতে না চেয়ে বরং জানতে চাইতে হবে মেধা তালিকায় ও কত নম্বরে ছিলো। তুখোড় দাবা খেলোয়াড় ও দীর্ঘদিন যাবৎ যুক্তরাস্ট্র প্রবাসী প্রখ্যাত সিভিল ইন্জিনিয়ার আজকের এই ডঃ নাজমুস সাকিব এখন নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে আমাদের ব্যাচটাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
সবশেষে অবশ্যই ছিলাম আজীবন একাডেমিকভাবে নিষ্ঠার সাথে মধ্যমমান ম্যাইন্টেইন করা ও পেশাগত জীবনে “এক জায়গায় বেশীদিন ভাল্লাগে না” টাইপ অস্থিরতার কারনে সেনাবাহিনীসহ কয়েকটি সরকারী সংস্থা, প্রাইভেট ব্যাংক, প্রাইভেট সিকিউরিটি কোম্পানী, ইম্পোর্ট-এক্সপোর্ট ও কন্সাল্টেন্সীতে কয়েক বছর করে চাকুরী ও ব্যবসা করে বর্তমানে পিএইচডি ছাড়া কোথায় শিক্ষকতা করা যায় সেটা অনুসন্ধানরত আমি।
তবে পেশাগত ব্যস্ততার কারনে মিস করেছি আমাদের ব্যাচের তুখোড় দুই ব্যাংকার মার্কেন্টাইল ব্যাংকের বর্তমান এমডি কামরুল ও ডিএমডি হাসনে আলমকে। আর মিস করেছি চট্টগ্রামে অবস্থান ও বসবাসরত বেশ কয়েকজন প্রানের বন্ধুকে। একটা কথা না বললেই নয় – আমাদের এই আজীবন বন্ধুত্বের শুরুটা কিন্তু চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকা হতে!
মিলনমেলায় স্মরন করেছি সাইফুদ্দীন ও আজাদসহ আমাদের ব্যাচের প্রয়াত সকল বন্ধুদেরকে।
মহান আল্লাহ আমাদের ব্যাচের সকলের উপর ইহলৌকিক ও পারলৌকিক অনুগ্রহ বর্ষন করুন। আমিন।
নোটঃ অনিবার্য কারনবশত মিলনমেলা হতে আমার আর্লি ডিপারচারের কারনে সবার সাথে দেখা না হওয়ায় এবং বয়সের জন্য ক্রম-ক্ষয়মান সৃতিশক্তির কারনে কোন বন্ধুর নাম বাদ পড়ে গেলে দুঃক্ষিত – সবাই নিজ গুনে ক্ষমা করে দিস।
Leave a Reply