দেশের সরকারের ওপর আস্থাহীনতার কারণে দেশে কোটা নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে। এ আন্দোলন যৌক্তিক ও সমর্থনযোগ্য বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাইন ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেছেন, কোটা কখনোই স্থায়ী ব্যবস্থা হতে পারে না, অন্তত: প্রতি তিন/চার বছর পরপর দেশের সার্বিক অবস্থান বিবেচনা করে কোটা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। সংরক্ষিত কোটা সবসময় মেধার মূল্যায়নে এক চতুর্থাংশের বেশী হওয়া উচিত নয়।
বুধবার (১০ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তারা এসব কথা বলেন।
তারা বলেন, কোনও পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে কোটা ব্যবস্থার বিভাজন হয়নি। শুধু তাই নয়, কোটায় প্রার্থী না থাকলেও কোটার বাইরে শূন্যপদে কাউকে নিয়োগ দেওয়াও হয়নি। উল্টো অবৈধ সুযোগ নিয়ে অমুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি দেওয়ার অভিযোগও এসেছে বহুবার। তাই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ জনগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, মুক্তিযোদ্ধার পরিবার যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল এসকল ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে বৈজ্ঞানিকভাবে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন।
নেতৃদ্বয় বলেন, ২০১৮ সালে একদল ছাত্র-ছাত্রীর কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন সরকার কর্তৃক কোটা ব্যবস্থা সংস্কার না করে পুরোপুরি বাতিল করে দেওয়া আবেগপ্রসূত ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। কোটা পদ্ধতি এক সময় অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে, তুলে দিতে হবে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা পরিবারে কত প্রজন্ম পর্যন্ত, কীভাবে এ সুবিধা লাভ করবে তারও পদ্ধতি ও সময় কাঠামো নির্ধারণ জরুরি।
ন্যাপ নেতৃদ্বয় আরো বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় ভাগে অনুচ্ছেদ ২৯(৩)(ক) তে বলা হয়েছে ‘নাগরিকদের যে কোনো অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাঁহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান – প্রণয়ন করা হইতে, রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।’ তাই সংবিধানের আলোকে কোটা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে নারী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধীসহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীগুলো এবং জাতির জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা, পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য যৌক্তিক পরিমাণ কোটা সংরক্ষণ করে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করা প্রয়োজন।
তারা বলেন, সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে সংকট নিরসন করা, কিন্তু দুর্ভাগ্য জনক হলেও সত্য যে, এ দেশের সরকার নিত্যনতুন সংকট সৃষ্টি করেই চলছে। তারা নিজেদের দায়-দায়িত্ব এড়ানোর জন্য মাঝে মধ্যেই আদালতকে ব্যবহার করে থাকেন। যাতে করে সংকট আরো ঘনিভূত হয়। সরকার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তারা জনস্বার্থের কথা মাথায় রাখে না, ক্ষমতার জোরে যাচ্ছেতাই সিদ্ধান্ত গেলানোর চেষ্টা করে। যার পরিণতি কখনো শুভ হয় না, হতে পারে না। সুতরাং সরকারের উচিত আন্দোলনকারী ও দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ কোটা ক্যাটাগরি নির্ধারণ করা। অন্যথায় এই আন্দোলন সরকারের পতন বয়ে আনতে পারে।
নেতৃদ্বয় বলেন, সবার আগে দেশের স্বার্থ রক্ষা করা জরুরি। মুক্তিযোদ্ধারা নিঃসন্দেহে এ দেশের শ্রেষ্ঠ এবং বীর সন্তান। এ পরিবারকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার ব্যাপারে কোনো দেশপ্রেমিক নাগরিকের দ্বিমত নেই। কিন্তু যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে, সেটা দেশের বৃহৎ স্বার্থে বাধাস্বরূপ। আমরা জানি, মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ ছিল এ দেশের সাধারণ মানুষের পক্ষে এবং সব রকম বৈষম্যের বিরুদ্ধে। সেই বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় শিক্ষার্থীদের চলমান ‘যৌক্তিক’ দাবীকে গ্রহন করে সংকট নিরসনের লক্ষে কোটা পদ্ধতি ‘যৌক্তিক সংস্কার’ করতে সরকারকে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।
Leave a Reply