অর্থ যখন আদর্শের কাছে বলিদান
”যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই,
পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন!”
কবি গুরু অনর্থক উক্তিটি লিখেনন নাই। আমাদের চারপাশে এমন অনেক মানুষ আছেন যাদের আদর্শ ও সততার কাছে লোভ লালসা মূল্যহীন। তেমনি একজন তরুণ ‘তুষার আহমেদ মামুন’
বাংলাদেশে আমার দুবার আসার সুযোগ হয়েছে ২০১৮ সালে প্রথম এবং দ্বিতীয় বার ২০১৯ সালে দুটোই ছিলো ব্যবসায়িক কাজে।
দ্বিতীয় বার যখন ঢাকা আসি তখন কোনো এক কারণে গুলশানের ‘সিটি ব্যাংক’ থেকে দশ লাখ টাকা উত্তলন করি আমি নিজেই। গেস্ট হাউজে যাত্রা, গাড়ির যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য যাত্রা বিরতি, তাই টেক্সি করে গেস্ট হাউজে ফেরার পালা। ড্রাইভার সাহেব টেক্সি খোঁজ করছিলেন ততক্ষণে গাড়ি থেকে নেমে পাশে চায়ের দোকান দেখে চা পান করছিলাম। ততক্ষণে ড্রাইভার সাহেব টেক্সি নিয়ে হাজির, ততক্ষণা টেক্সি চড়ে চলে এলাম গেস্ট হাউজে আর ভুলবশত চায়ের দোকানে ফেলে এলাম ফোন ও ব্যাগ।
রুমে এসে মনে পড়লো ব্যাগ ও ফোনের কথা। অন্য ফোন দিয়ে বেশ কয়েক বার কল করেও কোনোই রিস্পন্স পাচ্ছিনা। তাই ব্যাগের আশা বাদ দিয়ে চিন্তা হলো ফোন নিয়ে, পার্সোনাল ফোন বলে কথা।
সিদ্ধান্ত নিলাম পুলিশ রিপোর্ট করবো তবে সেটি করার প্রয়োজন হলোনা। বেশ কিছুক্ষণের মধ্যে আমার নম্বর থেকে কল এলো, ফোন ধরতেই তরুণ বয়সী কণ্ঠের ধ্বনি ভেসে এলো। যখন সে আশ্বস্ত হলো এটি আমারই ব্যাগ ও ফোন তখন আমার ঠিকানা চাইলো আমি গেস্ট হাউজের ঠিকানা দিনেই ব্যাগসহ ফোন নিয়ে ১৫ মিনিট সময়ের মধ্যে হাজির হলো।
সে ব্যাগ ও ফোন ফিরিয়ে দিলো। বললো- গুলশান২ চায়ের টেবিলে পেয়েছি ফোনের সামনে আমি বসছি বার বার ফোন আসছে অন্যরা ভাবলো আমার ফোন। আর সবাই বিরক্তি নিয়ে আমার দিকে তাকাছে। বুঝতে পারলাম কেউ হয়তো ফোন ফেলে গেছেন ফোন নিয়ে বাহিরে আসতে চাইলাম একজন বলে উঠলো ভাই ব্যাগ নিয়ে যান। বুঝতে পারলাম ফোনের সাথে ব্যাগও ফেলে গেছে।
ব্যাগ নিয়ে বাহিরে এসে ব্যাগ খুলে দেখি অনেকগুলো টাকা। মাথায় চিন্তা পেয়ে বসলো, এগুলো কার হতে পারে। ভাবলাম যে নম্বর থেকে বেশি বেশি কল আসবে এগুলো হয়তো তারই হতে পারে। তাই ফোন হাতে নিয়ে বসে ছিলাম কোন নম্বরে বেশি কল আসে।
দেখলাম একটি নম্বর দিয়ে বার বার ফোন আসছে পরে কথা বলে আশ্বস্ত হলাম এগুলো আপনারই তাই ফিরত দিতে এলাম। এভাবেই বর্ননা করলো তার পাওয়া এবং আশ্বস্ত হওয়া কথা।
কৌতূহল বশত জিজ্ঞাসা করলাম টাকা এবং ফোন তো আপনি রেখেও দিতে পারতেন। প্রশ্নের জবাবটা ছিলো আমার ধারনার বাইরে।
উত্তরে বললো ‘আজ না হয় রেখে দিতে পারতাম কিন্তু হাশরে না দিয়ে কি পাড় পেতাম.. তখন একে দশ দিতে হতো। তাই অন্যের ধনে লোভ না করি, পাপে না মরি। আমি খেটে খাওয়া মানুষ হালাল ভাবে যা পাই তাতেই আলহামদুলিল্লাহ!”
তার উত্তরে আমি মুগ্ধ! ব্যাগ থেকে ১ লক্ষ টাকার দুটো বান্ডেল পুরুস্কার দিতে চাইলাম সে টাকা ফিরিয়ে দিয়ে বললো- ”আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে আপনি ওপার বাংলার, আপনি আমাদের অতিথি, সুতরাং আপনার কাজে আসতে পেরে আমি আনন্দিত।
তবে আপনার ওপারে আমাদের এপার থেকে অনেকে অনেক কাজে ভ্রমন করেন যদি এমন কেউ আপনার সামনে বিপদে বা সমস্যায় পরে অনুগ্রহপূর্বক একটু সহযোগিতা করবেন তাতেই আমরা কৃতজ্ঞ।
তার কথা শুনে আমি বেশ মুগ্ধ প্রায় ১ ঘন্টা ধরে চললো আলাপ। শিক্ষা দশমি পার নাকরলেও জ্ঞানের গভীরতা কথা বলার ধরনে প্রকাশ পায়, এটিটিউটে ফুটে উঠে ব্যক্তিত্বের ছোঁয়া। আর্থিক স্বাবলম্বী না হলেও কমতি হয়নি ব্যক্তিত্বের সাথে জ্ঞানের। চোখে মুখে নেই কোনো লোভ।
উচ্ছ্বাস হাসিতে অমায়িক ভঙ্গিতে আচার আচরণ। তারাই প্রকৃত মানুষ যাদের ১০ হাজারে খুঁজলে একজন পাওয়া যায়।
আজকের পোস্টি তার জন্য উপহার, কারণ আজ তার জন্মদিন “শুভ জন্মদিন Tushar Ahmmed Mamun 💐” তোমার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা ❤
Leave a Reply