সমুদ্র মন্ত্রণা
নাসির চৌধুরী
আজ নাকি তীব্র এক শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে নগরে
রবিন দুটি কানে কানে বলে গেল নীড়ে ফেরার পথে
সাগর সৈকতে উদাম দেহে শুয়ে আছি একা চিত হয়ে
নক্ষত্রঘেরা সন্ধ্যারাতে নিশব্দের গহীনে কনকনে শীতে।
দু’বাহু দু’পাশে ছড়িয়ে প্রশস্ত বুকের
লোমকুপে সাগরের হাওয়া লাগে-
তীক্ষ্ণ দু’চোখ তিরবিন্ধ নীলাভ আকাশে – পলকহীন অবিচল চেয়ে থাকে।
সমুদ্র মন্ত্রণা মাঝে নিভৃতবিলাসী
একাকী আমি মহাশূন্যের অন্তপুরে।
একটি রবিন ফিরে এসে আমার
কুয়াশাভেজা ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে –
চুক চুক করে দুটি চুমু দিয়ে বলে
‘ফিরে যাও তুমি ঘরে মধ্যরাতের আগে।’
আজ নাকি নগরে প্রচন্ড এক শৈত্যপ্রবাহ হবে
ঘন কুয়াশার আস্তরনে ঢেকে যাবে
আলোকিত নগরীর সব ক’টি বাতি
প্রতিটি রাজপথ শূন্যতায় ভরে যাবে
কিন্তু আমি যাব কোথায় এই সমুদ্র মন্ত্রণা ছেড়ে?
ভাবতেই বড়ো একটা ঢেউয়ের সফেদ ফেনা
চুলগুলো ছুঁয়ে গেল দ্রুত – আবহমান অন্ধকারে।
সন্ধ্যা গড়িয়ে মধ্যরাত এলো প্রায়
ঢেউয়ের গর্জনে অদ্ভুত এক সুর বাজে
কাল দেহের মাথায় উড়ন্ত কেশরগুলো
চৌপদী ধারায় নাচতে থাকে সাগরের বুকে।
দুর পাহাড়ের পাশ ঘেঁষে ঘন কুয়াশার দল
ধীরে ধীরে পাখা মেলে বিস্তৃত করে অধিকার
ঢেকে যায় চারিদিক তীব্র শীতের মিহিন চাদরে
নক্ষত্ররা হারাতে থাকে দু’চোখের সীমানা থেকে।
নগ্ন শরীরে শুয়ে থাকি একা আমি নিশ্চল নিথর
চোখ দুটো তবু খোলা রাখি অন্ধকারের ভিতর
প্রশস্ত কপালে অনুভব করি ঈশ্বরের উষ্ণ হাত
ধীর স্বরে বলে ‘কেন তুমি তীব্র শীতের মধ্যরাতে
একাকী শুয়ে আছ সাগর পারে সে আমি জানি’
আমি নিশ্চুপ চেয়ে থাকি অন্ধকার আকাশের দিকে
ঘন কুয়াশার আস্তরনে ঢাকা নক্ষত্রমাঝে খুঁজতে থাকি
বুকের লোমকুপ ছুঁয়ে যাওয়া ছোট্ট একটি শিশিরকণা।
ছবিঃ Niagara River
প্রকাশিত – পৃষ্ঠা ৩৮/৩৯ – অ-কবির কবিতা
Published – Page 38/39 – Non-Poet’s Poems
Leave a Reply