1. hthvlixr@mailkv.com : charlene45s :
  2. liubomir8745@gmail.com : creatanlije :
  3. sirazul2664@gmail.com : dakhinbongonews : দক্ষিণবঙ্গনিউজ ২৫.কম
  4. jordozognu@gufum.com : jordozognu :
  5. Nadiburipaji@gmail.com : Nadia :
  6. Shahneowanalam@gmail.com : Shahneowaj :
  7. Shahneowajalamkb@gmail.com : Shahneowajalam :
  8. shibuojha1997@gmail.com : shibu ojha :
  9. fullermichaelsen980@kingsemails.com : wintermargin47 :
মন ও মস্তিষ্ক -লেখক ড. রফিকুল ইসলাম - dakhinbongonews25
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম
কোনো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বা সংকট তৈরি কাম্য নয় : বাংলাদেশ ন্যাপ গণ চীনের ৭৫তম বার্ষিকীতে শুভেচ্ছা ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ বিপ্লব চীন বিপ্লব : বাংলাদেশ ন্যাপ ভালুকা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদের বহিস্কার চায় অধিকাংশ নেতা রাজনৈতিক শূণ্যতা পূরণে স্বপনের মত মেধাবী রাজনীতিকের প্রয়োজন : বাংলাদেশ ন্যাপ কোটা সংস্কার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যই মুক্তিযদ্ধের চেতনা পরিপন্থি : এনডিপি চেতনার নামে প্রজন্মের মধ্যে বিভক্তি রাষ্ট্রের জন্য শুভ নয় : বাংলাদেশ ন্যাপ অনির্দিষ্টকালের জন্য কুবি অর্থনীতি শিক্ষার্থীদের ক্লাস -পরীক্ষা বর্জন  আবাসনের ব্যবস্থা না করে হরিজনদের উচ্ছেদ অমানবিক : গোলাম মোস্তফা সরকারের প্রতি বাংলাদেশ ন্যাপ : অবিলম্বে কোটা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো প্রয়োজন বাজেটে সাধারণ জনগনের স্বার্থের প্রতিফলন চাই : বাংলাদেশ ন্যাপ’র ১১ সুপারিশ
বিজ্ঞাপন
★বইমেলা-২০২৫★ বইমেলার ২০২৫ উপলক্ষে আমাদের প্রস্তুতি বেশ ভালো, অনেকগুলো নতুন পাণ্ডুলিপির কাজও চলমান। সম্মানীত লেখকদের বলছি, আগামী বইমেলার জন্য লেখা প্রস্তুতের এখনই উপযুক্ত সময়। কেন বলছি? কারণ পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করলে নির্ভুল সম্পাদনা, পাঠকপ্রিয় ও মানসম্মত বই প্রকাশের সুযোগ থাকে বেশি। তাই পাণ্ডুলিপি নির্বাচন ও প্রস্তুতের এখনি উপযুক্ত সময়। মনে রাখবেন, পাণ্ডুলিপি ২৫টি ধাপ পেরিয়ে পর্যায়ক্রমে একটি বই হয়। তাই মানমম্মত বই প্রকাশ করতে হলে যথেষ্ঠ সময়েরও প্রয়োজন। আগামী বইমেলায় সপ্তর্ষি প্রকাশন এর সাথে যারা যুক্ত হতে চান তারা যোগাযোগ করতে পারেন। ধন্যবাদ। Shibu Chandra Ojha প্রকাশক, সপ্তর্ষি - Saptarshi ৩৭/১ খান প্লাজা, তৃতীয় তলা, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০ ফোনঃ 01714225520/01712158340 হোয়াটস অ্যাপ -01318403248 ই-মেল:shibuvgco@gmail.com

মন ও মস্তিষ্ক -লেখক ড. রফিকুল ইসলাম

  • সর্বশেষ আপডেট শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৩
  • ৯৩ বার দেখা হয়েছে

মন ও মস্তিষ্ক
ড. রফিকুল ইসলাম

মন হল প্রাণীর জ্ঞান মন্দির যেখান থেকে উৎপন্ন হয় সচেতনতা, ইন্দ্রিয়ানুভূতি, চিন্তাভাবনা, বিচারবুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি। দর্শন, ধর্ম, মনস্তত্ব ও বুদ্ধি বিজ্ঞানে মন সম্পর্কীয় কৌতুহল রয়েছে,সকল ক্ষেত্রেই স্ব স্ব ধারণা অনুযায়ী মনের বৈশিষ্ট নিরূপিত হয়েছে। তবে সকল ক্ষেত্রেই কতগুলো অমিমাংসিত প্রশ্ন লুকিয়ে আছে; তন্মধ্যে অতি সাধারনটি হল, মন কি জাগতিক মস্তিস্কের কার্যক্রম না কি আলাদা কোন অস্তিত্ব যা মস্তিস্কের সমন্বয়ে কাজ করে? আবার অনেক সময় বলা হয়ে থাকে ‘মন-শরীর বৈকল্য’, যা থেকে পরিস্কার প্রতীয়মান হয় যে, মন ও শরীর দু’টি আলাদা অস্তিত্ব; যারা একে অপরের উপড় নির্ভরশীল। শরীরের সাথে মনের সম্পর্ক যাই হোকনা কেন, এ কথা সকলেই স্বীকার করে যে, প্রাণীর মন হল সেই স্বত্ত্বা যার রয়েছে আধ্যাতীয় বা অন্তর্মূখী সতর্কতা ও পারিপাশ্বিকতার প্রতি অনুভূতি প্রবণতা। এর আরও রয়েছে চিন্তাশক্তি ও আবেগ প্রবণতা।

অনেক মনস্তাত্ত্বিকের মতে বুদ্ধিদীপ্ত কার্যোকারিতাই মনের সংগঠক বিশেষ করে বিচার বুদ্ধি ও স্মৃতি শক্তি। আবেগ ভালবাসা, ভয়, সাহস আনন্দ ইত্যাদি সবই প্রাণীর মনের মৌলিক বৈশিষ্ট্য। অনেকে মনে করেন মন হল প্রাণীর চিন্তাশক্তি যা রক্ষিত ও উদ্ভূত হয় আমাদের মস্তিস্ক থেকে। কেউ মনকে দেখেনা,মন সম্পর্কে সম্যক কোন জ্ঞান কারোরই নেই, শুধু মনে করে প্রাণীর অন্তর বা মন বলে কিছু আছে যা শুধুমাত্র অনুভব বা উপলব্দি দিয়ে ধারণা করা হয়। বিভিন্ন প্রাণীর মন বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে বলেই সকলের ধারণা; যেমন কারো মন কঠিন আবার কারোর মন নরম; মনের এই বৈশিষ্ট্যগুলো বুঝতে হয় শুধুমাত্র অনুভবের দ্বারা।

তবে মন যে মানুষকে তাড়িয়ে বেড়ায় তা প্রভাত রবির মতই পরিস্কার। আমরা লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবো যে, বিভিন্ন মানুষের মনের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। মনের বৈশিষ্ট্য গুলোকে কোন সাধারণ ছকে ফেলা যায়না; তবে বিভিন্ন প্রজাতির মনের বিভিন্ন রকম মানসিক বৈশিষ্ট্য,যেমন মানুষের মনের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য দেখা যায়,তন্মধ্যে রয়েছে আবেগ, ভালবাসা, বুদ্ধি, ভাব প্রবণতা, চিন্তাশক্তি, ভয়, কাঠিন্য ইতাদি।

স্নায়ুবিজ্ঞান বলছে, মনের ভৌত কাঠামো হল স্নায়ু তন্ত্র, স্নায়ুবিজ্ঞানীরা খুঁজে দেখছেন কিভাবে জৈব স্নায়ু তন্ত্র মন তৈরী করে এবং ভৌতভাবে পরস্পর ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া করে মানসিক কার্যক্রম যেমন, রিফ্লেক্স, বিভিন্ন সংবেদনশীলতার একত্রিকরণ(multisensory integration), মোটর সমন্বয় (motor coordination), আবেগ তৈরী, শিক্ষা গ্রহন, স্মৃতিশক্তি তৈরী ইত্যাদি পরিচালনা করে।

এ সবই বিজ্ঞানের গবেষনাধীন, এ সকল বিষয়ে বিজ্ঞান অনেকদূর এগিয়ে গেলেও প্রতি পদেই স্তম্ভিত হয়ে ভাবছে কি করে এ সকল সম্ভব হচ্ছে, বিজ্ঞানকে ভাবিয়ে তুলেছে কি করে কিছু জৈব কোষের মধ্যে প্রাণীর স্বকীয়তা, আবেগ,উদ্যম বা ইচ্ছা শক্তি কাজ করছে। হতে পারে সে সকল কোষ বিশেষভাবে নির্মিত তথাপি তাদের সম্মিলিত কার্যোক্রমের মাধ্যামে কি ভাবে প্রাণীর মধ্যে এ সকল বিষয় অনুভূত হয় তা বিজ্ঞানকে ভাবিয়ে তুলছে। প্রাণীর বিশেষ করে মানুষের মস্তিস্ক কি ভাবে চিন্তাভাবনা করে তা বিজ্ঞানের কাছেও বিস্ময়।

মন ও মস্তির্কের সম্পর্ক-
পশুর ক্ষেত্রে মস্তিস্ক কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের কেন্দ্র ও চিন্তাশক্তির আধার। অধিকাংশ প্রাণীদেরেই মগজ মাথার মধ্যে করোটি দ্বারা আবৃত থাকে এবং তার মধ্যে কিছু সংবেদনশীল অঙ্গ যেমন, শ্রবনইন্দ্রিয়, দৃষ্টি কেন্দ্র, সাম্যতা বজায় রাখা, স্বাদ গ্রহন, ঘ্রাণ ইন্দ্রিয় ইত্যাদি সংযুক্ত থাকে। অধিকাংশ মেরুদণ্ডী প্রাণীরই মগজ রয়েছে। তন্মধ্যে মানুষের মগজ খুবই জটীল; তাতে প্রায় ৮৬ বিলিয়ন নিউরন থাকে এবং প্রত্যেকে কম করে হলেও ১০ হাজার অন্যান্ন নিউরনের সাথে সংযুক্ত থাকে। প্রাগ ঐতিহাসিক যুগ থেকেই মানুষের ধারণা যে, মস্তিস্ক ও মানব মনের মধ্যে একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে যাকে মন-শরীর সমস্যা (mind-body problem) বলা হয়।

যখন থেকে মানুষের মনে উন্নত চিন্তার অদ্ভূদ্ধয় ঘটে তখন থেকেই মানুষ মনের অস্তিত্ব অনুভব করতে থাকে এবং ক্রমান্বয়ে মানুষ মস্তিস্কের প্রভাব বুঝতে শুরু করে; তার পর থেকেই শূরু হয় মন- মস্তিকের দ্বৈত প্রতিক্রিয়া। মানুষ দ্বিধা দ্বন্দের মধ্যে ভাসতে থাকে মন না মস্তিস্ক মানুষের পরিচালক? এই প্রশ্ন দর্শন, বিজ্ঞান এমনকি সকল ভাবুকদের সামনে এক মহা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়ায়। দ্বৈত নীতি বা মন ও জড়পদার্থ মতবাদ অনুযায়ী মন হল প্রাণীর স্বাধীন স্বত্ত্বা; তার উপর মস্তিস্কের কোন প্রভাব নেই। জড়বাদ অনুযায়ী মন স্নায়ুতন্ত্রের মতই আরেকটা সক্রিয় পদ্ধতি। আদর্শবাদ বা ভাববাদ অনুযায়ী মনই মানুষের চিন্তাশক্তির পরিচালক।

ইতিহাস থেকে দেখা যায়, অনেক দার্শনিক মনে করতেন যে, মস্তিস্ক কর্তৃক চিন্তা শক্তির অদ্ভূদ্ধয় ধারণার অতীত। মস্তিস্কের পেশীকলা থেকে চিন্তার উদ্ভব দুরূহ ব্যাপার। দার্শনিক ডেসকার্টিস (Descartes,) মন ও মস্তিস্ক সম্পর্কে অনেক গবেষণায় দেখতে পেয়েছেন যে, প্রতিবর্তী বা রিফ্লেক্স ক্রিয়া অর্থাৎ দৃশ্য ঘটনার উপর প্রতিক্রিয়া ও সাধারণ আচরনকে মস্তিস্ক কোষের যান্ত্রিক ক্রিয়ার দ্বারা ব্যাখ্য করা যায় কিন্তু তিনি এ বিশ্বাস করতেন না যে, জটীল চিন্তাভাবনা ও ভাষা সৃষ্টি অর্থাৎ আবেগ অনুভূতিকে কথায় প্রকাশ মস্তিস্ক পেশী কলার পক্ষে সম্ভব। তবে বৈজ্ঞানীক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা যায় যে, মন যদি প্রাণীর আলাদা কোন স্বত্ত্বা হয়ে থাকে তবে তার সাথে মস্তিস্কের গভীর যোগসূত্র রয়েছে, বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, ট্রম্যাটিক ব্রেইন ইনজুড়ি (traumatic brain injury) ও সাইকো একটিভ ড্রাগ মস্তিস্কের মাধ্যমে মনের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। দার্শনিক পেট্রিসীয়া মনে করেন মস্তিস্কে এই ঔষধের ক্রিয়া মনের উপর যে প্রভাব ফেলে তাতেই বুঝা যায় যে, মন মস্তিস্ক এক সূত্রে গাঁথা। এই কৌতুহল শুধুমাত্র দার্শনিকদের মনেই নয় তা বিজ্ঞানীদের মনেও দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসছে।

মানুষের মনে দীর্ঘ দিন ধরে একটা প্রশ্ন প্রচলিত হয়ে আসছে তা হল, ‘intellect’ বা বুদ্ধিমত্তা মানব দেহের কোন অঙ্গ থেকে উত্থিত হয়। কেউ কেউ মনে করেন তা মানুষের হৃদপিণ্ড থেকে তৈরী হয়, আবার কেউ কেউ বুদ্ধিমত্তা মানুষের মস্তিষ্ক থেকেই উত্থান হয়। বিজ্ঞানের প্রত্যুষকালে দার্শনিকদের মধ্যেও এই বিবেধ ছিল। বিখ্যাত দার্শনিক প্লেটো মনে করতেন মানুষের বুদ্ধিমত্তা তার মস্তিস্কের কাজ, কিন্তু তার শিষ্য এরিষ্টটল মনে করতেন হৃৎপিণ্ডই বুদ্ধিমত্তার আধার। তিনি আরও বললেন, হৃৎপিন্ড, ফুসফুস ও বাতাসের সহযোগিতায় মানুষ কথা বলে থাকে। সময়ের দীর্ঘ ব্যবধানে বিজ্ঞান যখন অনেকটা পথ এগিয়ে এসেছে তখন বিজ্ঞানী গ্যালেন (Galen) পরীক্ষামূলক ভাবে প্রমাণ করে বললেন, মানুষের বুদ্ধিমত্তায় মস্তিষ্কের গভীর প্রভাব রয়েছে। তিনি বললেন যে, শব্দ উৎপাদনের জন্যে পরিপূর্ণ মস্তিস্কের প্রয়োজন। বিজ্ঞান এই ধারণার মধ্যেই বহুদিন স্থিতিশীল ছিল।

নতুন বিজ্ঞানীদের অনেকেই এরিষ্টটলের ধারনাকে ব্যাঙ্গ করেছিলেন এই জন্যে যে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে যে মানুষের মস্তিষ্কই শরীরের সকল কাজের পরিচালক। ফলে আধুনিক বিজ্ঞানীদের কাছে বৃদ্ধ এরিষ্টটল হাস্যস্পদ হয়েই রইলেন। আধুনিক বিজ্ঞানীদের ধারনা মতে হৃৎপিণ্ড প্রাণী দেহে রক্ত সঞ্চালনকারী একটুকরা মাংশপিণ্ড যা অনবরত পাম্প করে শরীরের সকল অঙ্গে রক্ত সংবহন স্বাভাবিক রাখে। মানুষের মনের উপর তার কোন প্রভাব নেই।

অতি অধূনা আশ্চর্য্যজনকভাবে বিজ্ঞানীগণ অনুধাবন করতে শুরু করেছেন যে, এরিষ্টটল সম্পূর্ণরূপে ভূল ছিলেন না। বিজ্ঞানীরাও মনে করতে শুরু করেছেন, হৃৎপিণ্ড শুধুমাত্র রক্ত সঞ্চালনকারী অঙ্গ নয়; এর নিজস্ব স্নায়ুতন্ত্র রয়েছে এবং তা প্রায় ৪০,০০০ নিউরন দিয়ে গঠিত। এই নিউরনগুলো শরীরের অন্যন্য অঙ্গের তুলনায় কিছুটা আলাদা ও বিভিন্ন উপায়ে ও বিস্তৃতভাবে সংযুক্ত এবং তারা সংবেদনশীলতার পাশাপাশি মস্তিস্ক কর্তৃক ও বিভিন্ন গ্ল্যান্ড থেকে ক্ষরিত নানাপ্রকার রাসায়নিক পদার্থকে সনাক্ত করতে সক্ষম; আগত হরমোন ও নানাবিদ রাসায়নিক পদার্থের মধ্যে তার প্রয়োজনীয় অংশটুকু চিনে নিতে সক্ষম।তারা স্বাধীন ভাবে তাদের নিজ দক্ষতায় কাজ করে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন হৃৎপিণ্ডের ক্ষুদে মস্তিস্ক রয়েছে যে কারণে তার প্রতিস্থাপন করা যায় কারণ সাধারণতঃ শরীরের অন্যান্য অঙ্গে কাটা পড়া স্নায়ু পূনঃসংযুক্ত হয় না।

বৈদ্যুতিক পালসের মাধ্যামে হৃৎপিণ্ডের পাম্পিং ক্রিয়া সচল রাখা ছাড়াও এই স্নায়ুতন্ত্রের বহুবিধ কাজ রয়েছে। সম্ভবত সে কারনেই কোন প্রাণী অজ্ঞান হলেও তার হৃৎপিণ্ড সম্পূর্ণ সচল থাকে। তাছাড়াও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন যে, হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনে রোগীর মধ্যে স্বক্রিয়তার অনেক পরিবর্তন আসে। আরও দেখা গেছে রোগীর মধ্যে হৃৎপিণ্ড দাতার কিছু বৈশিষ্ট পরিলক্ষিত হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন মস্তিষ্ক ও হৃৎপিণ্ড সমন্বিত ভাবে কাজ করে। হৃৎপিণ্ড যদি সম্পূর্ণই মস্তিষ্কের নির্দেশে কাজ করতো তবে সমন্বয় বা বুঝাপড়ার প্রয়োজন হতোনা। শুধুমাত্র মস্তিষ্কের নির্দেশ মেনে চলতো।

অনেক সময় দেখা গেছে আক্রান্ত হৃৎপিণ্ডের কার্যোপ্রণালীতে নানাবিধ পরিবর্তনের ফলে মস্তিষ্ক তার সাথে মানিয়ে তার নিজের কাজ পরিচালনা করে; বিশেষ করে মেধা ও সচেতনতার ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন আসে। মানুষের মেধার উন্নয়ন আজও বিজ্ঞানের কাছে এক বিষ্ময়। বিজ্ঞান বুঝতে পারছে যে গুণিতক ভাবে মানুষের মেধার উন্নয়ন হচ্ছে। তা মস্তিষ্কের কোন অংশ এই উন্নয়ন কাজ সাধন করছে এবং তা কোথায় স্থায়িত্ব লাভ করছে তাও আজ বিজ্ঞানের কাছে প্রশ্নবোধক।

বিজ্ঞান বলছে মানুষের মস্তিষ্কের সম্মুখভাগ বা টেম্পোরাল লোব চিন্তাভাবনার কাজ করে আর সেরেব্রাম এই টেম্পোরাল লোবের সহায়তায় আবেগ নিয়ন্ত্রন, স্মৃতি ধারন এবং চিন্তাশক্তি নামক জটীল বিষয়কে নিয়ন্ত্রন করে। মস্তিষ্কের এই দু’টি অঞ্চলের ক্ষমতা কতটুকু তার উত্তর বিজ্ঞানের কাছে নেই। অতি নিম্ন প্রাণী থেকে ক্রমান্বয়ে এর উত্তোরণ ঘটতে ঘটতে মানুষ পর্যন্ত এসে যে মাত্রা পেয়েছে তার গড় নিয়ে যদি বিজ্ঞান কোন হিসেব করতে চায় তবে তা বিষ্ময়কর ভাবে বিজ্ঞানীদের কে অবাক করবে। মানুষের বেলায় এই লেখচিত্রের আকৃতি যা হবে তাকে কোন ক্রমিক উত্তোরণ বলা চলেনা। এবার প্রশ্ন হল মানুষের বেলায় মেধার উন্নয়ন বিভিন্ন জনের মধ্যে বিভিন্ন কেন? নিউরণের গঠন ও আকৃতিতেতো তেমন কোন পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না। তবে এই বৈষম্য ও মেধা বিকাশের ব্যাখ্যা কোথায়? এই সব প্রশ্ন এখনও বিজ্ঞানের কাছে প্রশ্ন হয়েই আছে।

প্রাণীর মস্তিস্ক নিয়ে আজকের বিজ্ঞানও গোলক ধাঁধায় পড়ে আছে। কগনেটিভ সাইন্স (Cognitive science ) নামে বিজ্ঞানের এক বিশেষ শাখাই তৈরী হয়েছে যার কাজ হল, প্রাণীর মনে চিন্তাভাবনা তৈরীর বিষয়টি খতিয়ে দেখা। কিভাবে প্রাণীর মনে চিন্তা ভাবনা সৃষ্টি হয়, কিভাবে প্রাণী তথা মানুষ নতুন নতুন চিন্তার মাধ্যামে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহন করে। সাধারণ স্নায়ু কোষ কি ভাবে উজ্জিবিত হয়ে মস্তিস্কে এই চেতনার সৃষ্টি করে; এই সবই বিজ্ঞানের কাছে বিষ্ময়কর ব্যাপার; বিজ্ঞনীরা নানা গবেষণার মাধ্যামে এ সকল বিষয় সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করছেন।

বিজ্ঞানীগণ গভীর ভাবে ভাবছেন, কি করে মানুষের মেধার পরিস্ফূটন ঘটে, এবং তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়; কিভাবে মানুষের মনে ভাষার উৎপত্তি হয়, আবার কি করেই বা কোন বিষয় বা চিন্তিত ভাবনা স্মৃতি হয়ে মস্তিস্কে জমা থাকে; এই সবই বিজ্ঞানীদের কাছে নিষ্কলুষ ভাবে পরিস্কার নয়। যদিও বিজ্ঞান বলছে, এ সকল কাজ সেরেব্রাম ফ্রন্টাল লোবের সহায়তায় করে থাকে তবুও সর্বগ্রাহ্য ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারছেনা যে কি ভাবে এ কাজগুলো সমাধা হচ্ছে। তারা শুধু ফলাফলটাকেই তুলে ধরছে।

প্রাণীর ভাষাজ্ঞান এক জটীল বিষয়। প্রাণী বিশেষঃত মানুষ তার শিশু অবস্থায় পরিবেশ থেকে শ্রুত শব্দগুলো তার মস্তিস্কের স্মৃতি কোষে সঞ্চিত করতে থাকে এবং তা তার নিজের মুখ দিয়ে বলতে শুরু করে। পরিবেশ থেকে শ্রুত শব্দগুলো তার মস্তিস্কের স্মৃতি কোষে যাওয়া থেকে শুরু করে মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসা কথাগুলো অত্যান্ত জটীল প্রক্রিয়ায় সংঘটিত হয়। সম্পূর্র্ণ প্রক্রিয়াটি কিভাবে ঘটে তা আজকের বিজ্ঞানের কাছেও পরিক্ষিত ভাবে প্রমানিত নয়; তথাপি বিজ্ঞান মনে করে যে, এই প্রক্রিয়াটি ঘটে থাকে মানুষের স্নায়ু কোষের কার্যোকারিতার মাধ্যামে।

যৌক্তিক ভাবে এটাই বলা যায় যে, শিশুটি তার শ্রবণ ইন্দ্রিয় দিয়ে যা গ্রহন করে তা মস্তিস্ক কোষের মধ্যে অত্যান্ত জটীল প্রক্রিয়ায় অনেক অজানা পদ্ধতিতে স্মৃতি কোষে গিয়ে সঞ্চিত হয়। এবং তা একসময় তার নিজের মুখ দিয়ে বলতে শুরু করে। বিষয়টা এখানেই শেষ নয়,শিশুটির যখন বয়ঃক্রমে জ্ঞানউন্মেষ ঘটে তখন সে শুধু শ্রুত কথাগুলোই বলেনা সে তার মেধা দিয়ে নতুন নতুন কথা নিজে থেকে বানিয়ে বলতে থাকে। আমরা কি কবি সাহিত্যিকদের কথা কখনো ভেবে দেখেছি, তারা অনর্গল শব্দ সৃষ্টি করে যাচ্ছেন, আপনি কি বলবেন এই সব শব্দ তার স্মৃতি ভাণ্ডার থেকে বেরিয়ে আসছে? আপনি আগে শুনতে পাননি এমন শব্দ কি কখনোই বলতে পারেছেন না? বিজ্ঞান কি এ ক্ষেত্রে কোন স্থির সিদ্ধান্ত দিতে পারে? যদি বলেন, পারে তবে ভাষাবিজ্ঞানীদের কথা ভাবুন, তারা অক্ষরের সাথে অক্ষর জুড়ে কিভাবে একেবারে নতুন শব্দ তৈরী করে? এ সবই প্রশ্ন। কোন শিশুকে বালি নিয়ে খেলতে দেখেছেন? দেখবেন সে তার মনের মত করে ঘর বানায়, এগুলো হয়তোবা এর আগে দেখে নাই। মস্তিষ্কের উদ্ভাবণী ক্ষমতা আর তার স্মৃতি এক নয়, হয়তো বলতে পারেন উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে স্মৃতি সহযোগিতা করে; সে নিজের মনে অনেক সমস্যা তৈরী করে তা ভাবনা চিন্তার মধ্য দিয়ে সমাধানও দিতে পারে।

এই সবই হয় তার মেধাগত অর্জন, এই মেধার কি ভাবে উন্মেষ ঘটে বিজ্ঞান তার সর্বগ্রাহ্য ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। তবে এও সত্য যে,বিজ্ঞানের পরীক্ষা লব্দ ফলাফল এড়িয়ে কেউ বাস্তবতার নিরিখে ভিন্ন কোন চিত্র তুলে ধরতেও পারেনি। বিজ্ঞান যেমন পরিক্ষিত ভাবে শেষ কথা বলতে পারেনি তেমনি কল্পনা প্রসূত হয়ে মনের কোন সঠিক ঠিকানাও কেউ খুঁজে পায়নি। এমনি একটা টানা পোড়েনের মধ্যে ভাবুকরা দোদুল্যমান হয়ে পড়েছে, হন্যে হয়ে খুঁজছে প্রকৃত ধারনা। প্রাচীন কাল থেকেই দর্শণ, ধর্ম এমন কি মনস্তত্ত্বও মনের যে আলাদা অস্তিত্ব অনুভব করে আসছে, আজকের বিজ্ঞান তার বিরোধীতা করে ভিন্ন মেরুতে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু সমন্বয় করতে পারছেনা। তার পরেও সমাধানের আশায় ভাবুকরা নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

এ পর্যায়ে আমরা বিজ্ঞানের চিন্তাধারায় অতি সংক্ষেপে মানব মস্তিষ্কের যৎসামান্য গঠণ প্রকৃতি দেখবো।

মস্তিষ্কের গঠন Structure of brain
বিজ্ঞান বলছে, মানুষের শরীরের যাবতীয় কাজ নিয়ন্ত্রন করে তার মস্তিষ্ক; এই কাজ নিয়ন্ত্রন করার জন্যে তার সমগ্র শরীরে ছড়িয়ে থাকে এক বিশাল ও জটীল জালিকা,যাকে বলা হয় কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র বা সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম। আমাদের জ্ঞানে অজ্ঞানে যাবতীয় ক্রিয়া কর্ম এই কেন্দ্রীয় স্নায়ু তন্ত্রই নিয়ন্ত্রন করে। আমরা দেখে, শুনে, স্পর্শ করে বা স্বাদ নিয়ে যে সকল তথ্য সংগ্রহ করি তা এই জালিকা মস্তিষ্কে প্রেরণ করে, মস্তিষ্ক তা বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে আমাদের অঙ্গকে কার্যোক্ষম করে তোলে। কেন্দ্রীয় মস্তিষ্ক থেকে সুষষ্মা কাণ্ডের মাধ্যমে সমগ্র শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এই স্নায়ুতন্ত্র তৈরী হয় স্নায়ু কোষ দিয়ে, যাদের কে বলা হয় নিউরন। প্রায় এক হাজার কোটি (১০০০০০০০০০০০) নিউরন দিয়ে মানব দেহের স্নায়ুতন্ত্র তৈরী হয়।‌

মানব দেহের ন্যায় স্নায়ুতন্ত্রও স্নায়ুকোষ বা নিউরন দিয়ে ঘটিত হয়। এই স্নায়ু কোষের প্রধান অংশ হল কোষ দেহ( Cell Body) কোষ দেহ স্নায়ুকোষ বা নিউরণের প্রধান অংশ। নিউরনের মধ্যে থাকে নিউক্লিয়াস, এ ছাড়াও আছে এন্ডোপ্লাসমিক রেটিকুলাম, রাইবোজম। নিউরনের দেহ নষ্ট হয়ে গেলে তার মৃত্যু ঘটে। সেল বডি বা দেহ থেকে তন্তু আকারে লম্বা লেজ বের হয়। এই লেজের আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে,যেমন আঙ্গুলের ডগায় অবস্থিত নিউরনের লেজটি কনুই পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে; আবার মস্তিষ্কে অবস্থিত নিউরনের লেজ অত্যন্ত ছোট আকৃতির হয়ে থাকে।

বিজ্ঞানের ভাষায় এই লেজের নাম দেওয়া হয়েছে এক্সন; এটি অনেকটা সরু তারের মত কাজ করে; এর উপরে প্রোটিনের আবরন থাকে যা এক্সনকে তড়িৎ রাসায়নিক সঙ্কেত দ্রুততার সাথে বহন করতে সহায়তা করে, এই আবরনটির নাম মায়েলিন শেথ। এক্সনের মাথায় তন্তুর ন্যায় শিকড় দেখা যায়, এগুলো নিউরনের দেহ থেকেও বেরুতে পারে; এদের নাম ডেনড্রাইটস। নিউরনের সাথে নিউরনের যোগাযোগ রাখতে এদের ব্যবহার হয়ে থাকে। এরা রিসিপ্টর বা এন্টেনার কাজ করে থাকে। কার্যভেদে নিউরন বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। যেমন ১. সেন্সরি নিউরন, ২. মোটর নিউরন, ৩. ইন্টার নিউরন।

সেন্সরই নিউরনের প্রধান কাজ হল শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে প্রয়োজনীয় সঙ্কেত গ্রহন করে তা মস্তিষ্কে প্রেরণ করে। মস্তিষ্ক এ সকল সঙ্কেত বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় কার্যাদেশ মোটর নিউরনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে প্রেরণ করে। ইন্টার নিউরনের কাজ হল বিভিন্ন নিউরনের মধ্যে আন্ত যোগাযোগ রক্ষা করা। এদেরকে বেশী দেখা যায় মস্তিষ্কে ও সুষষ্মা কাণ্ডে। এই সকল নিউরন মিলে শরীরের বিভিন্ন অংশে জটীল জালিকা তৈরী করে।

মস্তিষ্কের অংশগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচয়
মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের সাথে সামান্য পরিচিত হওয়া দরকার। উন্নত প্রাণীদের প্রত্যেকের শরীরের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ উল্লেখযোগ্য মস্তিষ্ক থাকলেও কিছু কিছু অমেরুদণ্ডী প্রাণীর মস্তিষ্ককে আলাদাভাবে বুঝার উপায় থাকেনা, যেমন, চিংড়ি মাছের কোন কেন্দ্রীয় মস্তিষ্ক থাকেনা, তাদের মস্তিষ্কের কাজ হয় শরীরের স্থানে স্থানে গুচ্ছাকারে থাকা ‘নিউরোনাল সেল বডির’ বিন্যাস দ্বারা, যাদেরকে বলা হয় গ্যাংলিয়া। এই গ্যাংলিয়া ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের কাজ করে থাকে। আরও একটু উন্নততর প্রাণীদের মধ্যে এই যোগাযোগকর্ম বিন্যাসের মাধ্যামে তৈরী করে সরল মস্তিষ্কের। এদের থেকে উন্নততর প্রাণীদের এই গ্যাংলিয়াগুলো পরস্পর যোগাযোগ করে তৈরী করে সরল মস্তিস্কের। সাধারণতঃ উন্নত প্রাণীদের মস্তিষ্কে নিন্মোক্ত অংশগুলো থাকবেই;

১.ব্রেইন স্টিম- এর মধ্যে থাকে মেডুলা, পনস, মিডব্রেইন। এই ব্রেইনস্টিমের কাজের মধ্যে প্রধানতঃ রিফ্লেস্ক বা প্রতিবর্ত ক্রিয়া, কিছু স্বয়ংক্রিয় কাজ, যেমন হৃদস্পন্দনের হার, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করা এবং বিভিন্ন অঙ্গের সঞ্চালন ও আন্ত্রিক কাজ পরিচালনা করা।

২.সেরেবেলাম- এটি প্রাণী দেহের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

৩.হাইপোথ্যালামাস ও পিটুইটারী গ্রন্থি- এরা মানব দেহের প্রয়োজনীয় হরমোন নিশ্বরণ করে।

৪.সেরেব্রাম- এটি মস্তিষ্কের অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ; একে সেরেব্রাল কর্টেক্স বা কর্টেক্স ও বলা হয়; এর প্রধান কাজ হল শরীরের বিভিন্ন ইন্দ্রীয় থেকে সঙ্কেত বা তথ্য সংগ্রহ করে সমস্যার সমাধান করে তা মোটর নিউরণের সাহায্যে যথাস্থানে পৌঁছিয়ে দিয়ে প্রয়োজনীয় কার্যো সিদ্ধি করা। আবেগ নিয়ন্ত্রন, স্মৃতি ধারন এবং চিন্তাশক্তি নামক জটীল বিষয়কে নিয়ন্ত্রন করাও এই অংশেরই কাজ।

এখানে বিজ্ঞান বলছে, সেরেব্রাম প্রাণীর ইন্দ্রীয় প্রদত্ত: সঙ্কেত নিয়ে কাজ করে; যেমন ধরুন আপনার আঙ্গুলের আগায় কোন বস্তুর স্পর্শ লাগল, এই সঙ্কেত সেন্সরি নিউরন সেরেব্রাম অঞ্চলে প্রেরণ করে আর এই অঞ্চল সেই সঙ্কেতের বিশ্লেষণ করে তার ফলাফল অর্থাৎ স্পর্শের গভীরতা তার অবস্থান যন্ত্রনা ইত্যাদির অনুভূতি তৈরী করে এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনাবলী মোটর নিউরনের সাহায্যে আঙ্গুলের ডগায় প্রেরণকরে; বিজ্ঞান আরও বলছে, মস্তিষ্ক কোন ইন্দ্রীয় থেকে সংকেত বা নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত কর্যক্ষম হয়না। এখন প্রশ্ন হল মানুষের আবেগ ভালবাসা বা বিশ্বাস এই অনুভূতিগুলো সৃষ্টি হয় কোন ইন্দ্রীয়ের তাড়নায়? আমরা ধীরে ধীরে এই প্রশ্নের জবাব বুঝতে চেষ্টা করবো।

আমরা জানি, মানুষ ছাড়া অন্য কোন প্রাণী উন্নততর কোন চিন্তা ভাবনা করতে পারেনা। নিম্ন প্রাণীদের চিন্তাভাবনার ক্ষেত্র খুবই সীমিত, কোন কিছু নিয়ে ভেবে দেখবার অবকাশ তারা পায়না। তাহলে প্রশ্ন জাগে নিম্ন শ্রেণির প্রানী যেমন গৃহপালিত পশুপাখি, বা বন্যপ্রাণীরা তাদের দৈনন্দিন চাহিদা বা প্রয়োজনীয়তা বুঝে কি করে। বিষ্ময়কর ভাবে লক্ষ্যকরা গেছে যে, নিম্ন প্রাণীদের দৈনন্দিন জীবন কিন্তু থেমে নেই। তারাও কিন্তু উন্নত প্রাণীদের মতই তাদের জীবন তাদের মত করে পরিচালনা করে।

উন্নত প্রাণী মানুষ আর নিম্ন প্রাণীদের মস্তিষ্কের মধ্যে প্রধান প্রার্থক্য হল, মানুষ যে কোন সময় চিন্তাভাবনা করে যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। চিন্তা ভাবনার মাধ্যমে তার প্রবৃত্তির পরিবরর্তন ঘটাতে পারে, কিন্তু নিম্ন প্রাণীরা তার প্রবৃত্তি অনুযায়ী দৈনন্দিন জীবন পরিচালনা করে; আর এই জীবন ব্যাবস্থা একটা সুনির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে ব্যাপৃত, চাইলেই সে তার জীবন ব্যাবস্থাকে পরিবর্তন করতে পারেনা। তাছাড়া উভয় শ্রেণীর মধ্যেই কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যাদেরকে বলে প্রবৃত্তি। বিজ্ঞান বলছে এই প্রবৃত্তি মূলক কাজগুলো নিয়ন্ত্রন করে মস্তিষ্কের নিম্ন ভাগ।

মস্তিষ্কের নিম্নভাগে রয়েছে মেডুলা, পনস, মিডব্রেইন। মেডুলা হল সুষষ্মা কাণ্ডের ঠিক উপরের স্ফীত অংশ,এই অংশের মধ্য দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অঞ্চলের সংকেত মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করে। এ ছাড়াও মস্তিষ্কের উপরের দিকে কয়েকটি বড় বড় অংশ রয়েছে তন্মধে প্যারাইটাল লোব, ফ্রন্টাল লোব, অক্সিপেটাল লোব, টেম্পোরাল লোব, ইনসুলা উল্লেখযোগ্য।

মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চলের কাজ-
প্যারাইটাল লোব- প্যারাইটাল লোবের সাথে শরীরের বিভিন্ন অঞ্চল সংযুক্ত থাকে। এরা শরীরের বহিঃত্বক থেকে আসা বিভিন্ন সংবেদনশীলতা যেমন, চাপ, স্পর্শ ব্যাথা ইত্যাদির অনুভব সৃষ্টি করে এবং প্রয়োজনীয় আদেশ নিষেধ প্রধান করে। প্যারাইটাল লোবের পিছন দিকে ওয়ের্নকাস অঞ্চল অবস্থিত। ভাষা সংক্রান্ত ব্যাপারে এর ভূমিকা অপরিসীম। শ্রবণ-দর্শন সংকেত সংশ্লেষনের কাজে সহযোগিতা করে।

ফ্রন্টাল লোব- মস্তিষ্কের অতীব গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলটি মেধা ও স্বক্রিয়তা সৃষ্টির অঞ্চল; মানুষের চিন্তা, বোধ, মননশীলতার মত জটীল কাজগুলো নিয়ন্ত্রন করে এই অংশটি; তাছাড়া চলন, গমন, বিভিন্ন অঙ্গের নাড়াচাড়া অর্থাৎ মোটর ফাংশন নিয়ন্ত্রন করে ফ্রন্টাল লোবের পিছন দিকে থাকা মোটর কেন্দ্র। প্যারাইটাল লোব ও সোমাটোসেনসরি অংশ থেকে মোটর কেন্দ্র সংকেত আহরণ করে তা ফ্রন্টাল লোবের সহায়তায় প্রয়োজনীয় কাজ পরিচালনা করে।

অক্সিপিটাল লোব- এর কাজ হল চোখ থেকে আসা দৃষ্টি সংকেতকে প্যারাইটাল লোবের ওয়ের্নিকাস ও ফ্রন্টাল লোবের মোটর কেন্দ্রের সহযোগতায় মস্তিষ্কে বাহিরের দৃশ্যপটের ছবি তৈরী করে। ছবি তৈরীতে এর বিষ্ময়কর ভূমিকা হল রেটিনায় পতিত উল্টো ছবিটাকে মস্তিষ্কে সঠিকভাবে তৈরী করা। ছবি তৈরীর কাজটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। আমরা বড় কোন বস্তুর প্রতিবিম্ব দেখতে হলে একটি বড় আয়নার দরকার হয়, কিন্তু পরীক্ষায় জানা গেছে আমাদের মস্তিষ্কে একটা ক্ষুদ্র বিন্দুর সম স্থানে আমরা বিশাল দৃশ্যপটের প্রতিবিম্ব দেখি; যা পদার্থবিজ্ঞানের নীতি নিয়মে ব্যাখ্যা করা যায় না। বিজ্ঞান এ ক্ষেত্রে বিষ্মিত।

টেম্পোরাল লোব- শ্রবণ ইন্দ্রীয় থেকে শব্দ সঙ্কেত গ্রহন করে এটি ওয়ের্নিকাস ও মোটর কেন্দ্রের সহযোগিতায় তা শ্রবণ উপযোগী করে তোলে। ইনসুলা নামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে শরীরের ছোটখাট বা সূক্ষ্ম সঞ্চালন প্রক্রিয়াকে পরিচালনা করে।

আমরা উপরের আলোচনা থেকে অতি সংক্ষিপ্ত ভাবে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের কার্যপ্রণালী জানতে পেলাম। এ ছাড়াও মস্তিস্ক যে কত বিষ্ময়কর ভাবে হাজারো কাজ পরিচালনা করে তা স্বল্প পরিসরে ব্যাখ্যা করার উপায় নেই। এই আলোচনা থেকে পরিস্কার ভাবে বুঝাগেল যে, মস্তিষ্কই হল প্রাণী দেহের সকল কাজের নিয়ন্ত্রনকারী; আরও বুঝা গেলে যে, মস্তিষ্ক নিজে থেকে উদ্যোগী হয়ে কোন কাজ করেনা। যে কোন অঙ্গের চাহিদামত তার কাজ পরিচালনার দ্বায়িত্ব নেয়। এই আলোচনায় আমাদের যে মৌলিক জিজ্ঞাসা তা হল, বিভিন্ন অঙ্গের চাহিদার পাশাপাশি আমাদের যে মননশীলতা বা মনের চাহিদা তা কোন অঙ্গের জিজ্ঞাসা থেকে সৃষ্টি হয়।

যদি বলা হয় মন নামক দৃশ্য বা অদৃশ্য অঙ্গ আছে! তবে তার অবস্থান কোথায়? বিজ্ঞান পরিস্কার ভাবে মনের অবস্থান ব্যাখ্যা করেনি; বলছে মানুষের সেরিব্রামের সহায়তায় ফ্রন্টাল লোব এই মনশীলতার জন্ম দেয়; এ ক্ষেত্রেও বিজ্ঞান স্ববিরোধী। মননশীলতার এই বৈজ্ঞানীক ধারণা যদি সঠিক হয় তবে প্রশ্ন হল এই দুই অঞ্চল কোন অনুপ্রেরণা থেকে এ কাজে উদ্যোগী হয়? কারণ মস্তিস্ক বিনা উদ্যোগে কোন কাজে ব্রতী হয় না। যদি বলা হয় মানুষ তার দৃষ্টি ইন্দ্রীয় দিয়ে কোন কিছু দেখে উক্ত দুই অঞ্চলের সহযোগিতায় ভাবনা চিন্তা করে বা অনুরূপভাবে শ্রবণ ইন্দ্রীয় দ্বারা সংগৃহিত তথ্য নিয়েও মস্তিস্ক ভাবনাচিন্তা করতে পারে, তবে মানুষ যখন দৃষ্টি ও শ্রবণ ছাড়াও জটীল চিন্তায় নিমগ্ন হয় তখন মস্তিস্ক কি ভাবে তা সমন্বয় করে? যদি বলা হয় মানুষের মনের অবস্থান মস্তিষ্কে এবং সেটিই মস্তিষ্কে এই অনুভূতি জাগায়, কিন্ত বিজ্ঞান সেই অবস্থানটির খোঁজ এখনও পায়নি।

বিজ্ঞান এর কোন খোঁজ দিতে না পারলেও মানুষ কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের জন্মের আগে থেকেই তার খোঁজ পেয়েছে, আবেগে আপ্লুত হয়ে তার নাম দিয়েছে মন বা অন্তর। তবে মনের সঠিক অবস্থানটি কেউ সঠিকভাবে বলতে পারছেনা, কেউ বলছেন এর অবস্থান হৃৎপিণ্ডে, কেউ বলছেন মস্তিষ্কে। মানুষ তার সীমিত মেধা দিয়ে যাই বলুকনা কেন এই বিশ্ব সংসারের মহান স্রষ্টা বলছেন মন মানুষের হৃৎপিণ্ডে অবস্থিত। মনের এই অবস্থান নিয়ে পবিত্র কোরআনে প্রচুর আয়াত নাজিল হয়েছে; যা থেকে ধরে নেওয়া যায় মানুষের ভাবনা চিন্তার উপর মনের নিভীর সম্পর্ক রয়েছে। মন মানুষের মস্তিষ্কে কিছু সুনিদিষ্ট ভাবনার উদ্রেক করে যা অন্যান্ন ইন্দ্রীয়ের প্রভাব মুক্ত। মনের সাথে মস্তিস্কের ভাবনাচিন্তার কেন্দ্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, বলতে গেলে দু’ দু’টো কেন্দ্রই ওৎপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।

মনকে বাদ দিয়ে মস্তিস্কের ভাবনা চিন্তার কথা যেমন কল্পনা করা যায়না তেমনি মস্তিষ্ককে বাদ দিয়ে মন কোন ভাবনা চিন্তা করতে পারেনা; মূলত মন বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ভাবনা চিন্তার উদ্রেক তৈরী করে আর মস্তিষ্ক তার সম্প্রসারন ঘটায়; মূলত ভাবনাচিন্তার কাজ ও তার ফলশ্রুতিতে পরিকল্পনা গ্রহন ইইত্যাদি সবই মস্তিষ্কের কাজ। এই আলোচনায় একটা বিষয় পরিস্কার যে, ভাবনা চিন্তার কাজটি মস্তিষ্কই সম্পন্ন করে, মন কেবলই তার যোগান দাতা।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর দেখুন...
©দৈনিক দক্ষিণবঙ্গনিউজ২৫.কম এর সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২৩-২০২৫
❤️Design With Tamim Zarif