সোনালি দেশ আমেরিকা
ডেনভার থেকে সল্ট লেক সিটি
(সাত)
আমরা ওয়াইমিং অঙ্গরাজ্যের নির্জন-নিরিবিলি পল্লির মাঝ দিয়ে সামনে এগিয়ে যাই। এত পথ আসি, কিন্তু কোথাও বাড়িঘরের কোনো নাম-নিশানাও নেই। তবে মাঝে মাঝে গবাদিপশুর খামার আছে। তার আশেপাশে দু-চারটা বাড়িঘর, ওই পর্যন্তই। এত দূর পথ আসি, সড়কের পাশে দু-একটা লোকও দেখিনি। এই না দেখার রহস্য অতি পরিষ্কার। কারণ এই অঙ্গরাজ্যে প্রতি বর্গমাইলে মাত্র পাঁচজন লোক বাস করে। তাহলে লোক থাকবে কোত্থেকে? যত লোকের ছড়াছড়ি বাংলাদেশ, ভারত ও গণচীনে। বাংলাদেশ তো এখন বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশের একটি। ঢাকা শহরে আগে যানজটের কথা শুনতাম। এখন জনজটেও ঢাকা শহরের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। গুলিস্তান-ফার্মগেটে চলাচলে অনেক সময় ঠেলাঠেলি করে হাঁটতে হয়। একেই বলে জনবিস্ফোরণ!
আমরা হাইওয়ে দিয়ে ঘন্টাখানিক চলি। এরপর সাউথ ডাকোটা অঙ্গরাজ্যে প্রবেশ করি। জনবিরল এই অঙ্গরাজ্যেও বাড়িঘর তেমন চোখে পড়েনি। বাস সমতলভূমির ওপর দিয়ে কিছুক্ষণ চলে। এরপর পাহাড়িয়া এলাকায় প্রবেশ করে। পাহাড়ের সর্পিল পথে বাস অনেকক্ষণ চলে। পাহাড়ের যেন কোনো শেষ নেই। এই পাহাড়িয়া পথে আমেরিকার স্বাধীনতাযুদ্ধের অনেক স্মৃতিচিহ্ন আছে। এগুলো যুক্তরাষ্ট্র ফেডারেল সরকারের তত্ত্বাবধানে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।
সাউথ ডাকোটা আমেরিকার মধ্য-পশ্চিম অঞ্চলের এক পাহাড়িয়া অঙ্গরাজ্য। এই অঙ্গরাজ্যের নাম লাকোটা ও ডাকোটা সিত্তস্ক আদিবাসী আমেরিকান উপজাতির নামানুসারে দেয়া হয়েছে। সাউথ ডাকোটা অঙ্গরাজ্যের আয়তন ৭৭ হাজার ১২১ বর্গমাইল। অথচ লোকসংখ্যা একেবারে নগণ্য। লোকসংখ্যা মাত্র ৯ লাখ। আয়তনে এটি আমেরিকার ১৭তম এবং লোকসংখ্যায় ৪৭তম বৃহত্তম জনবহুল অঙ্গরাজ্য। এর রাজধানী পিয়ের। একে ‘মাউন্ট রাশমোর স্টেট’ নামে ডাকা হয়। তার কারণ রাশমোর পাহাড়ের গায়ে পাথর খোদাই করে আমেরিকার জনপ্রিয় চার প্রেসিডেন্টের মূর্তি বানানো হয়েছে। সেই অনন্য শিল্পকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ এই নাম দেয়া হয়েছে। সাউথ ডাকোটা অঙ্গরাজ্য প্রচুর অনুর্বর ভূমি এবং ব্ল্যাকহিলস ও মাউন্ট রাশমোর পাহাড়ের নৈসর্গিক দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত। এই অঙ্গরাজ্যের অধিকাংশ এলাকা সবুজ তৃণভূমি ও কৃষিখামারে ভরে আছে। সারা পথে যেখানে সেখানে সবুজ তৃণভূমিতে আচ্ছাদিত মাঠে পালে পালে গরু-মহিষ চরে বেড়াতে দেখি।
আমরা ইতিমধ্যে অনেক পথ অতিক্রম করি। এরপর পাহাড়িয়া উঁচু-নিচু পথ দিয়ে চলি। পথিমধ্যে আদিবাসী আমেরিকানদের অনেক বাড়িঘর চোখে পড়ে । সাউথ ডাকোটায় অনেক আদিবাসী আমেরিকানের বাস। সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী এই সংখ্যা ৭৪ হাজার। পথে যেতে পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে বাড়িঘরগুলো দেখে আমার পার্বত্য চট্টগ্রামের কথা মনে পড়ে। মনে হলো আমরা চাকমা-মারমা উপজাতি এলাকা দিয়ে যাচ্ছি। যদিও এখানকার বাড়িঘরগুলো আরও উন্নতমানের ও আধুনিক। তখন ভরদুপুর। চারদিকে ফকফকা রোদ। দিনের এমনি সুন্দর সময়ে ক্রেজি হর্স মেমোরিয়াল এসে পৌঁছাই। (চলবে)
#ডেনভারথেকেসল্টলেকসিটি
(১) সাউথ ডাকোটা অঙ্গরাজ্যের ক্রেজি হর্স পোস্ট অফিসের সামনে দাঁড়ানো লেখক ।
Leave a Reply