জল-জোছনায় বহমান এক জীবন।
হাবিব ভাইর চলে যাওয়ার এক বছর হয়ে গেল।তাঁকে নিয়ে কিছু লিখতে পারিনা।কান্না আসে।শুধুই ত ভাই ছিলনা।পিঠাপিঠি হওয়ার কারণে সবচে ভাল বন্ধু ছিল।শৈশব থেকে তাঁর চলে যাওয়া পর্যন্ত এক সাথে ছিলাম।গভীর মায়া-মহব্বতে জড়িয়ে ছিলাম দুজন।এমন ভাই-বন্ধু পাওয়া যায়না।আট ভাই বোনের সংসারে প্রাচুর্য না থাকলেও বড় আনন্দের সাথে বেড়ে উঠেছিলাম। খেলা,রাজনীতি,
সংস্কৃতি সর্বত্রই ছিলাম আমরা।
কত স্মৃতি আমাদের।আনন্দ-সংগ্রামের।
মানুষের জন্য, পরিবারের জন্য বিশাল হ্রুদয় নিয়ে পাশে দাড়াত।
কোমল হ্রদয়ের মানুষ হলেও বিশ্বাসের প্রতি দৃঢ়তা ছিল।স্রোতের বিপরীতে নিজেই নিজের নির্মাতা।শত প্রতিকূলতায়ও হার না মানা জীবন এখন জল-জোছনায় বহমান।
বৈষয়িক ছিলনা।সম্মানের জীবন চেয়েছিল।পেশাগত জীবনে সম্মান পেয়েছে।সম্মান নিয়েই বিদায় হয়েছে।
মৃত্যুর পরে ভীষন কষ্টের মধ্যেও মনে হচ্ছিল আমার ভাই সম্মান নিয়েই পৃথিবীর জীবন শেষ করেছে।
মৃত্যুর আগের শেষ কয়েকটা দিনের স্মৃতি বড় কষ্টের। বড় বেদনার।বুক ভাঙ্গা আর্তনাদের ভেতর কানের কাছে কলেমা পড়া, শেষ গোসলে গায়ে সাবান মেখে দেয়া আমার বুক ভারী করে রেখেছে।কবরে শুইয়ে দিয়ে মুখ পশ্চিমে কাৎ করে দিয়ে কবর থেকে উঠে আসা।কি যে কষ্টের-বেদনার।বুঝাতে পারিনা।কত মানুষকে কত সান্তনা দেই।মোটিভেশনের চেষ্টা করি।নিজেত পারিনা।কি করে নিজেকে বুঝাই!আমার ভাইকে ত পাইনা।
কত রাত গভীর হয়েছে আমাদের।তবু গল্প শেষ হতনা।ঢাকায়-সুনামগঞ্জে।
পেশায় এসে জীবনে অনেক সংগ্রাম করেছে।অসম্ভব প্রাণশক্তি দিয়ে সব কিছু মোকাবেলা করত।লেখায় ক্লান্তি ছিলনা।আপোস করতনা বলে কত আক্রোশেরও শিকার হতে হয়েছে।
আত্নসম্মান প্রখর ছিল বলে কঠিন সময় পার করতে হয়েছে।
অসম্ভব তেজ আর সাহস নিয়ে এসেছিল।এসেছিল সবাইকে দিতে ।নিতে আসেনি।দিয়েই গেছে।
মানুষের ভালবাসা আর সম্মানের জীবন চেয়েছিল।সে জীবন পেয়েছে।
আমরা বলি সময় গেলে কষ্ট হালকা হয়।আমার যে হয়না!সময় যাচ্ছে নিয়মে।হালকা না হয়ে কষ্ট শুধু তীব্র হচ্ছে।যতদিন বেঁচে আছি এই কঠিন বেদনার ভার বয়েই চলতে হবে।আমিও মেনেই নিয়েছি। এ আমার নিয়তি।
মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে বাবা-মা, ভাই, পুর্বপুরুষের সাথে কবরে শুয়ে আছ।তোমার জল-জোছনার সুনামগঞ্জে। পরম করুনাময় আল্লাহ আমার ভাইয়ের কবরের জীবন শান্তিময় করে দিন।
Leave a Reply