1. hthvlixr@mailkv.com : charlene45s :
  2. liubomir8745@gmail.com : creatanlije :
  3. sirazul2664@gmail.com : dakhinbongonews : দক্ষিণবঙ্গনিউজ ২৫.কম
  4. jordozognu@gufum.com : jordozognu :
  5. Nadiburipaji@gmail.com : Nadia :
  6. Shahneowanalam@gmail.com : Shahneowaj :
  7. Shahneowajalamkb@gmail.com : Shahneowajalam :
  8. shibuojha1997@gmail.com : shibu ojha :
  9. fullermichaelsen980@kingsemails.com : wintermargin47 :
সোনালী দাশ এর লেখা-ডিভোর্স - dakhinbongonews25
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম
কোনো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বা সংকট তৈরি কাম্য নয় : বাংলাদেশ ন্যাপ গণ চীনের ৭৫তম বার্ষিকীতে শুভেচ্ছা ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ বিপ্লব চীন বিপ্লব : বাংলাদেশ ন্যাপ ভালুকা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদের বহিস্কার চায় অধিকাংশ নেতা রাজনৈতিক শূণ্যতা পূরণে স্বপনের মত মেধাবী রাজনীতিকের প্রয়োজন : বাংলাদেশ ন্যাপ কোটা সংস্কার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যই মুক্তিযদ্ধের চেতনা পরিপন্থি : এনডিপি চেতনার নামে প্রজন্মের মধ্যে বিভক্তি রাষ্ট্রের জন্য শুভ নয় : বাংলাদেশ ন্যাপ অনির্দিষ্টকালের জন্য কুবি অর্থনীতি শিক্ষার্থীদের ক্লাস -পরীক্ষা বর্জন  আবাসনের ব্যবস্থা না করে হরিজনদের উচ্ছেদ অমানবিক : গোলাম মোস্তফা সরকারের প্রতি বাংলাদেশ ন্যাপ : অবিলম্বে কোটা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো প্রয়োজন বাজেটে সাধারণ জনগনের স্বার্থের প্রতিফলন চাই : বাংলাদেশ ন্যাপ’র ১১ সুপারিশ
বিজ্ঞাপন
★বইমেলা-২০২৫★ বইমেলার ২০২৫ উপলক্ষে আমাদের প্রস্তুতি বেশ ভালো, অনেকগুলো নতুন পাণ্ডুলিপির কাজও চলমান। সম্মানীত লেখকদের বলছি, আগামী বইমেলার জন্য লেখা প্রস্তুতের এখনই উপযুক্ত সময়। কেন বলছি? কারণ পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করলে নির্ভুল সম্পাদনা, পাঠকপ্রিয় ও মানসম্মত বই প্রকাশের সুযোগ থাকে বেশি। তাই পাণ্ডুলিপি নির্বাচন ও প্রস্তুতের এখনি উপযুক্ত সময়। মনে রাখবেন, পাণ্ডুলিপি ২৫টি ধাপ পেরিয়ে পর্যায়ক্রমে একটি বই হয়। তাই মানমম্মত বই প্রকাশ করতে হলে যথেষ্ঠ সময়েরও প্রয়োজন। আগামী বইমেলায় সপ্তর্ষি প্রকাশন এর সাথে যারা যুক্ত হতে চান তারা যোগাযোগ করতে পারেন। ধন্যবাদ। Shibu Chandra Ojha প্রকাশক, সপ্তর্ষি - Saptarshi ৩৭/১ খান প্লাজা, তৃতীয় তলা, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০ ফোনঃ 01714225520/01712158340 হোয়াটস অ্যাপ -01318403248 ই-মেল:shibuvgco@gmail.com

সোনালী দাশ এর লেখা-ডিভোর্স

  • সর্বশেষ আপডেট শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩
  • ৮৮ বার দেখা হয়েছে

ডিভোর্স

   লম্বা, ফর্সা শরীরে অতি সুন্দর নাক- চোখ আর সুডৌল দেহ সৌষ্ঠবে টিউলিপকে সত্যিই একটা ফুলের মতো লাগছিল সেদিন। আর মানবসমাজে তাকে সেরা সুন্দরীর শ্রেণিতেই রাখা যায়। কাজ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে শিক্ষক-সহকারী হিসেবে। আমিও সেদিন একই ক্লাসে গিয়েছিলাম শিক্ষকের সাবস্টিটিউট হিসেবে। দেখা হতেই টিউলিপ হাসিমুখে বলল---

—গুডমর্নিং মিস বি। আমি তো তোমায় চিনি, আগেও একদিন এসেছিলে, তখন অনেক কথা বলেছিলাম আমরা, মনে পড়ে? তা বলো কেমন আছ, কেমন চলছে তোমার দিনকাল?
— এই তো চলছে, তুমি কেমন আছ? তোমার পরিবারের সবাই কেমন আছে?
—- পরিবার আর কোথায়, ওই তো দুটো ছেলেমেয়ে।
— কেন, তোমার স্বামী কোথায়?
আমাদের তো কবেই ডিভোর্স হয়ে গেল। তুমি তো জানো সেটা, সেদিনই তো বলেছিলাম।
—- ও– মনে পড়েছে কিছুটা! আচ্ছা, ডিভোর্সটা কে দিয়েছিল—তুমি না কি সে?
——-সে দিবে কীভাবে? সে আমাকে বাধ্য করেছে ডিভোর্স নিতে। বোলো না আর, খুব খারাপ মানুষ। ভালোই হয়েছে, আমি খুব ভালো আছি এখন।
তখনো ক্লাসে ছাত্ররা আসেনি। আগের দিনে গুছিয়ে রাখা চেয়ারগুলো টেবিলের পাশে পাতিয়ে সেদিনের ক্লাস পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কাজ করার পাশাপাশি মুখে কথা বলছিল টিউলিপ। আমিও ওকে সাহায্য করছিলাম আর মন দিয়ে শুনছিলাম ওর কথা। বলতে বলতে ছাত্র-ছাত্রীরা আসতে শুরু করল, আমাদের কথাও থেমে গেল। কিন্তু আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর জানার আগ্রহ থামল না। সুযোগ খুঁজছিলাম। ভয় ছিল ব্যক্তিগত এসব প্রশ্নের উত্তর সে দিবে কি না অথবা এসব প্রশ্নের কারণে আমার উপর রেগে যাবে কি না। প্রায় একঘন্টা শিশুরা যখন খেলছিল তখন আবার ওকে কিছুটা ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করলাম। জানতে চাইলাম কীভাবে বিয়ে হলো তাদের, বিয়ের পরে সম্পর্ক কেমন ছিল। দেখলাম সে রেগে নয়, খুশিমনেই সব উত্তর দিয়ে যাচ্ছে।
— —-আমাদের বিয়ে হয়েছে প্রেম করেই। আমি তখন ছিলাম লেবাননে। সেও লেবাননেরই মানুষ, তবে থাকত এখানে আমারিকায়। মাঝে মাঝে সে লেবাননে ফিরত। আমাদের দেখা হতো। তখন তো মনে হতো যেন আমেরিকান ফেরেশতা এসেছে। দেখতেও সে খুব সুন্দর, ব্যবহারও ভালোই মনে হয়েছিল। তাই দু-পরিবারের সম্মতিক্রমে বেশ ধুমধামেই বিয়েটা হয়েছিল। বিয়ের পরেও বেশ কিছুদিন আমাদের জীবন আনন্দেই কেটেছে। পরে একে একে দুটো বাচ্চা হলো। আমার কাজ-বাজ বেড়ে গেল। ধীরে তার আসল চেহারা বেরিয়ে পড়ল। মানুষের মনের মধ্যে যে এত খারাপ চরিত্র লুকিয়ে থাকতে পারে তা কী করে বুঝব বলো?
— —-সে এমন কী খারাপ করেছে যার জন্য ছোটো দুটো বাচ্চা থাকা সত্ত্বেও তুমি তাকে ডিভোর্স দিয়েছ? জিজ্ঞেস করতেই বলল,


— খারাপ মানে আমাকে কোনো টাকা পয়সা কখনোই সে দিতে চাইত না। সংসারের খরচ নিজের হাতে করত। আমি সাজগোজ করতে খুব পছন্দ করি। আমার কিছু দরকার হলে, ঘরের জন্য বা আমার জন্য কিছু কিনতে চাইলে, তার ইচ্ছে হলে কিনে দিত; নতুবা নয়। আমি সেজেগুজে থাকি সেটাও তার একদম পছন্দ নয়। আমার সবকিছুতেই সে অতিমাত্রায় বাধ সাধত। এমন বলতে বলতে হঠাৎ থেমে গেল টিউলিপ। আমি আস্তে বললাম—-
—- এতেই ডিভোর্স হয়ে গেল?
—— না-রে সহজে কি কেউ ডিভোর্স চায়? এই যে দুটো বাচ্চা হলো তাদের দেখাশোনার কাজ সব আমাকেই করতে হতো, একটু বড়ো হলে ওদের স্কুলে দিয়ে আসা, নিয়ে আসা, ওদের পড়াশোনায় সাহায্য করা—সব আমাকেই করতে হতো। তারপরে ওদের কোনো ভুলত্রুটি হলে সেটার জন্যও আমাকেই দোষারোপ করত। ঘরের কোনো কাজে একটু পান দিয়ে চুন খসলেই, রগচটা হয়ে শুধু আমাকে নয় আমার বাবা, মা, পরিবার তুলে খারাপ ভাষায় বকাবকি করত। সবসময় আমার চেয়ে বন্ধুদের আড্ডায়ই বেশি সময় দিতে সে পছন্দ করত। বন্ধুদের স্ত্রীরা কীভাবে চলে, কীভাবে রান্নাবান্না বা ঘরের কাজ করে সবকিছুর সাথে আমার কাজের তুলনা করত৷ আমার সবকিছুই নাকি সবার তুলনায় খারাপ। আমার এসব একদম সহ্য হতো না। তুমিই বলো আমি কি দেখতে খারাপ? আমি কি আমার মতো করে ঘর চালাইনি? তুমি হলে কী করতে বলো?
আমার হলে কী করতাম সে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে বললাম,
——-টিউলিপ! তুমি তো দেখতে তোমার নামের মতোই সুন্দর। আমিও চোখ ফেরাতে পারছি না। তবে কি জানো! এমনটা কিন্তু অনেক পরিবারেই ঘটে। আমাদের এ পার্থিব সংসারে মানুষের কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ যতদিন আছে ততদিন এগুলো কমবেশি থাকবেও হয়তো, তবুও তো নিজের প্রয়োজনে, ছেলেমেয়ের প্রয়োজনে অনেকেই সহ্য করে থাকে। তুমিও তো দশ বারো বছর অনেক সহ্য করেছ শুনলাম। বলবে আমায় এরমধ্যে কোন্ ঘটনাটা তোমাকে বেশি আহত করেছে যার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে তুমি ডিভোর্স চেয়েছ?
— — শোনো তবে, সে তো অনেক কথা, এখন সময় পাবো কি না জানি না। তবুও বলছি। ছেলে-মেয়েদুটোকে স্কুলে ভর্তি করার পরে ভাবলাম আমিও একটা কাজে ঢুকে পড়ি। চেষ্টা করতে করতে, দু একটা ছোটো খাটো কাজ করেছিও। তারপরে এই স্কুলের কাজটা পেয়েছি। আমি টাকা আয় করতে পেরেছি বলে স্বামীর কাছে আর হাত পাততে হতো না। আমার টাকায় মাঝে মাঝে পছন্দের জিনিসপত্র কিনতাম, কখনো কিছু খাবার কিনতাম, ছেলেমেয়েদের নিয়ে খেতাম, স্বামীকে খাওয়াতাম, অনেক সময় অবশিষ্ট কিছু রেফ্রিজারেটরেও রাখতাম। যেসব খাবার স্বামীর পছন্দের নয় সেগুলো রেফ্রিজারেটরে রাখলে সে বকাবকি করত, আমি পাত্তা দিতাম না। মাঝে মাঝে সে তা ফেলেও দিত। আর এসব নিয়ে প্রায়ই আমাদের ঝগড়া লাগত, খুব কথা কাটাকাটি হতো। প্রতিবারেই আমি অনেক কাঁদতাম, তাতে তার মনের কোনো পরিবর্তন হতো না। কত আর সহ্য করব, কত আর কাঁদব বলো? তাই ধীরে ধীরে মনটাকে শক্ত করতে থাকি আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করতে থাকি যে, যে-কোনো উপায়ে এর সঙ্গ বর্জন করতে হবে।
——-একদিন আমার টাকা দিয়েই একটা কার্পেট কিনে ঘরে পেতেছিলাম, দরকার ছিল বলেই তো কিনেছিলাম। ওমা, আমি যখন খুব আশা করে বসেছিলাম যে, সে খুশি হয়ে আমাকে প্রশংসা করবে, সেখানে সে তার উলটোটা করল। বলল–
——এটা একটা কার্পেট হলো? যত্তসব নিম্নস্তরের রুচি। ফেলে দাও এটা এখুনি! আমি বললাম, ‘
——-কেন কার্পেট হবে না? আমার ভালো লেগেছে তাই তো কিনেছি, থাক না এটা কিছুদিন, এরপরে না হয় আর একটা ভালো কেনা যাবে। সেদিন সে থামল কিন্তু এর ঠিক পাঁচদিন পরেই সেই কার্পেটটা পুরানো ঝগড়ার রেশ ধরে ট্রাসে ফেলে দিলো। জানো, আমার সেদিন মনে হয়েছিল– সে কার্পেট নয়, আমার রুচি, ব্যক্তিত্ব, ইচ্ছের সাথে সাথে আমাকেই সে ঘর থেকে ট্রাসক্যানে ফেলে দিয়েছে। তাই আমিও প্রচন্ডরকম প্রতিবাদ করেছিলাম সেদিন। বললাম,
——এরপরে তুমি যখন কিছু কিনবে আমিও তা এভাবেই ফেলে দিবো, তবেই কেমন লাগে তুমি বুঝতে পারবে। এই বলতে বলতে আমাদের প্রচণ্ড ঝগড়া শুরু হলো। একসময় ছুটে এসে আমাকে মারধরও করল সে। কত আর সহ্য করা যায়? আমি সাথে সাথে আমার বোনের বাসায় চলে গেলাম। বোন শুনে তো হতভম্ব! সাথে সাথে আমাকে কোর্টে যাওয়ার পরামর্শ দিলো এবং আমার সাথে সেও গেল। অবশেষে একদিন আমাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। সত্যি বলছি, এ তিন বছর ধরে আমি খুব ভালোই আছি। আমার যা ইচ্ছে তাই করছি, যেমন ইচ্ছে, যখন ইচ্ছে রান্না করছি, ইচ্ছে না হলে করছি না। অনেক স্বাধীন লাগছে। “
—– ছেলেমেয়ে কি সবসময় তোমার সাথেই থাকছে? তোমার একার আয়ে কি চলা সম্ভব হচ্ছে? জানতে চাইলে বলল,
— না, কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বাচ্চাদের ব্যয়ভার বহনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব তার। সপ্তাহে দুদিন তারা বাবার সাথে আর পাঁচদিন আমার সাথে থাকার কথা। আর এ পাঁচদিনের খরচও ওদের বাবাকেই দিতে হবে।
ডিভোর্সের পরে তোমাদের আর কথা হয়? কেমন আছে সে? বাচ্চাদের ব্যয়ভারের টাকা কীভাবে দেয় তোমাকে? বলল–
“———হ্যাঁ, তার সাথে প্রতি সপ্তাহেই দেখা হয়। ছেলে মেয়ের সাথে দেখা করতে ও ওদের তার বাসায় নিয়ে যেতে প্রায় প্রতি শুক্রবার ওদের স্কুল ছুটির সময় আসে। আর টাকাটাও সে সময় দেয়। আমার টাকার দরকার, সময়মতো টাকা পেলেই হলো। টাকা না দিলে বা দিতে দেরি করলে আমি ছাড়ি না; আর শুধু সেই ব্যাপারেই কথা বলি। সে কেমন থাকে, কী করে বা না-করে, সে-সব জানার দরকার বোধ করি না, জানতেও চাই না এখন আর।” বলতে বলতে টিউলিপের কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে উঠল। তবুও আমার প্রশ্ন চালিয়েই গেলাম–
—- সে কি আবার বিয়ে করেছে, ছেলে মেয়ের সাথে তার সম্পর্ক কেমন?
“——না, বিয়ে করেনি এখনো। আর গার্লফ্রেন্ড তো সেই কবে থেকেই আছে। ছিল বলেই তো আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করত। আর হ্যাঁ ছেলে-মেয়েকে এখনো সে খুব ভালোবাসে। তবে বাচ্চারা সেখানে বেশি যেতে চায় না, গেলেও থাকতে চায় না। মাঝে মাঝে বড়োটা যেয়ে থাকে দু-একদিন, ছোটোটা একদমই যেতে চায় না। আর ছোটো বলে আমিও চাই না ওরা প্রতি সপ্তাহে তার বাসায় যাক। এমনই চলবে ওদের সতেরো বছর বয়স পর্যন্ত”—- বলতে বলতে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে টিউলিপ থেমে গেল। জানতে চাইলাম, “তারপরে কী হবে?”
“—- বাচ্চারাই সিদ্ধান্ত নিবে তারা কার সাথে থাকবে অথবা নিজের মতো নিজে আলাদা থাকবে কি না। “
শুনতে শুনতে আমার মনটা কেঁদে উঠল। বললাম–
“——আচ্ছা, তোমার ছেলেমেয়েকে এখনো যে মানুষটা খুব ভালোবাসে যা তুমিই এইমাত্র বললে, তার জন্য তোমার মন খারাপ হয় না? তার সাথে কাটানো আগের স্মৃতিগুলো কখনো মনকে কাঁদায় না? কখনো অনুতাপ হয় না যে একটু সহ্য করে থাকলে হয়তো থাকতেও পারতাম —এমন মনে হয় না?”
” —না, ওর জন্য আমার কোনো অনুতাপ নেই। হীরে, মুক্তার বিশাল টুকরো দিলেও ওর জন্য আমার আর কখনো মন কাঁদবে না।”
টিউলিপের কথার মধ্যে কিছুটা অভিমান আর বারবার টাকা পয়সার কথা চলে আসছে। মনে হলো সম্ভবত ও একটু বেশি বিষয়াশ্রয়ী। হয়তো অল্পবয়সের কারণেও তা হতে পারে। বললাম–
“— –না, আমি হীরা, মুক্তার কথা বলছি না, যেহেতু ডিভোর্স হয়ে গেছে বলে আর সম্ভবও নয়; তবুও, তোমরা যেহেতু প্রেম করে বিয়ে করেছিলে, তাই অতীতের সুন্দর মুহূর্তগুলো দিনের কোনো বিশেষ সময়ে তোমার মনকে নরম বা দুর্বল করে দেয় কি না বা তোমার নাড়িছেঁড়া ধন ছেলেমেয়ের এখনো অন্যতম ভালোবাসার স্থান তাদের বাবাকে একটু হলেও কখনো পেতে ইচ্ছে হয় কি-না তাই জানতে চেয়েছিলাম আর-কি। তা-ছাড়া তোমার বয়স তো খুবই কম, সামনে চলার জন্য অনেক সময় বাকি। কীভাবে চালাতে চাও বাকি জীবনটা? “
“–না গো, যে চলে গেছে তার কথা ভাবার সময় আমার নেই, তা-ছাড়া আমার বয়ফ্রেন্ড আছে তো! “
শেষের কথাটা শুনে আমি ধাক্কা খেলাম যেন। বললাম —
“— ও —সে কেমন মানুষ? সেও তো পুরুষ! নিশ্চয়ই সে খুব ভালো আর তোমার ছেলেমেয়েকে খুব ভালোবাসে! তুমি বিয়ে করবে তাকে?” এতগুলো কঠিন প্রশ্নে ভাবলাম এবারই মনে হয় সে উত্তর দিতে গিয়ে রেগে যাবে। দেখলাম না, রাগ হলো না। বয়ফ্রেন্ডের কথাও সে গরগর করে বলে যাচ্ছে।
আমার মতো দুদিনের অল্প-পরিচিত লোকের কাছে এভাবে সবকিছু বলার ধরন দেখে মনে হলো আঘাতে আঘাতে ওর মনোজগতে কিছুটা হতাশা আর অস্বাভাবিকত্ব চলছে। বলল-
——-প্রথম তো এটাকেও খুব ভালোই মনে হয়েছিল। কত দরদ, কত সহানুভূতি যেন জীবনটাই দিয়ে দিতে পারে আমার জন্য! কিন্তু আজকাল অন্যরকম মনে হচ্ছে।
——-কেমন মনে হচ্ছে? তোমরা বিয়ে করতে চাচ্ছ না?
——-“আরে না, বিয়ে করব কী, এগুলোকে তো চেনাই কষ্ট, কয়দিন গেলেই এরা রূপ পালটায়। এই তো গতকাল সকালবেলা যে-লোক কত ভালো ভালো কথা বলল, সে যেন বিকেলবেলা আর আমাকে চেনেই না। রেগে রেগে কীসব কথাবার্তা বলল! এরা কি নেশা করে, না কী করে আল্লাহই জানেন।” কথাগুলো হেসেহেসেই বলল টিউলিপ। আবার বলল, ” জানো, পুরুষগুলোকে এখন আমার একটুও বিশ্বাস হয় না, মানুষও মনে হয় না। এগুলোকে মনে হয় শুধু রাগের ডিপো।” বলতে বলতে আর শুনতে শুনতে ইতিমধ্যে ক্লাসের ছাত্রদের খেলার সময় শেষ হয়ে গেল। আমাদের কথায় বিরতি টেনে শ্রেণির কাজে চলে গেলাম। আমার ভাবনায় কোনো বিরতি এল না। খারাপ লাগল টিউলিপ বেচারার জন্য।
বুঝলাম মানব মন কত বিচিত্র যা সময়ের সাথে সাথে বদলে যায়! তাই তো কাজের ফাঁকে ফাঁকে মনে মনে বললাম,
হায়রে মানুষ—

কাল যে মনে ছিল না কলি, আজ সে মনে ফুল,
কাল যা ছিল খুবই সঠিক, আজ মনে হয় ভুল।
যে মনে ছিল প্রেম-প্রীতি কাল, আজ সে মনে খরা,
অবহেলা আর জিদের দহনে হৃদয়-কুসুম পোড়া।

স্কুল ছুটি হলো, ছাত্রদের বাসে তুলে দিলাম, কাউকে বা গাড়িতে। রুমে ফিরে পরের দিনের জন্য সব গোছগাছ করে রাখার ফাঁকে টিউলিপকে আবার জিজ্ঞেস করলাম —
“—-তাহলে তুমি এখন কী করবে? যা-ই, করো ভালোভাবে বুঝে শুনে কোরো ভাই। ভবিষ্যতে ভালো থেকো, তোমার সুন্দর একটা সংসার হোক–সেই কামনা করি।”— বলতে বলতে বাড়ি ফেরার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। দৃষ্টিতে উদাসীনতা নিয়ে উত্তর দিলো টিউলিপ —
—–আমি এখন আর জানি না কী করব, প্রয়োজনে একাই থাকব, পৃথিবীতে একা এসেছি একাই যাব, তবু ঝামেলায় আর জড়াতে চাই না।

    টিউলিপকে শুভবিদায় বলে আমার বাড়ির পথে রওয়ানা দিলাম। গাড়ি চালাচ্ছি আর ভাবনার জগতে এলোমেলো হয়ে ঘুরছে কিছু শিশুর মুখ-- শিশু-শ্রেণিতে কাজে গেলেই যারা ছুটির সময় খুব আনন্দ উত্তেজনার সাথে বলত, "জানো মিস বি, আমি আজ ড্যাডির বাসায় যাব!" প্রথম দিকে না বুঝলেও পরে আমিও অন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে জেনেছি, বুঝেছি ড্যাডির বাসা আর মামির বাসা কী। তাই এমন কথা শুনলে আমিও তখন বলি, 

—–‘ ও খুব ভালো কথা, ড্যাডি তোমাকে খুব আদর করে তাই না?’ এমন প্রশ্নে কারো মুখ হঠাৎ কালো হয়ে আসে আবার কেউ কেউ বলে, “হ্যাঁ ড্যাডি খু–ব ভালো, আমি যা চাই স–ব দেয়, মামি দেয় না।”
আমার মনে হয় হয়তো এ শিশুরা জানেই না যে, তাদের মা-বাবার একটাবাড়ি হওয়ারই কথা ছিল। তারা শুধু জানে ‘ড্যাডি’ একটা সম্পর্কের নাম, যার কাছে সপ্তাহে এক দু-দিন বেড়াতে যাওয়া যায়। আর যে ড্যাডির কাছে শিশুরা বেড়াতে যায় সে তো সন্তানের খুশির জন্য সামর্থ অনুযায়ী সব দিবেই।
যা হোক, আবার টিউলিপের কথায় আসি। যেহেতু আমি শুধু তার কথাই শুনেছি, সে ঠিক না ভুল জানি না; অন্যপক্ষেরটা শুনলে তুলনা করা যেত কে বেশি ঠিক আর কে বেশি ভুল। তারা ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য যেটা ভালো মনে করেছে তা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।তবে সবকিছুর মধ্য দিয়ে কেন যেন মনটা শুধু খুঁজে বেড়াচ্ছে টিউলিপের আট বছর আর ছ’বছরের শিশুদুটোর মুখ যাদের মনের কথা, ব্যথা আমি জানি না, হয়তো তাদের মা-বাবাও এখন আর সঠিকভাবে তা জানার অধিকার রাখে না। তাই প্রশ্ন থেকেই যায়, দু-সন্তানের মা ও বাবা হয়ে আত্মসম্মান ও ব্যক্তিস্বার্থে যত সহজে বিবাহ-সম্পর্কে বিচ্ছেদ টেনেছে তাতে তাদের বিবাহবৃক্ষে মুকুলিত কলিরূপ সন্তানদুটো নতুন বৈরীপরিবেশে যথার্থভাবে বিকশিত হতে পারবে কি? কারণ তারা যে এখন অবহেলা-রাজ্যের বাসিন্দা। ক্ষণিক বেড়াতে আসা এ পৃথিবীতে বাবা মায়ের ভিন্ন সংসারেও তাদের সপ্তাহে পালা করে এখন বেড়াতে হচ্ছে। এমন বেড়াতে গিয়ে সদ্যোজাত দুটো ভাঙা পরিবারে নতুন দুটো জুটির স্বাধীন মিলনের পথে তারা বাধাও হতে পারে। ফলে এরা এখন আর পৃথিবীতে সবচেয়ে আপন সেই মা-বাবার কলজের টুকরো তো নয়ই; বরং নখ-চুলের সমমর্যাদায় তাদের সাথে বেঁচে থাকবে। ইচ্ছে হলে নখ বা চুলের মতোই তারা যত্নে তাদের বড়ো করবে, ইচ্ছে হলে যতবার প্রয়োজন ছেঁটে ফেলবে।
সবশিশু মা-বাবা দুজনকেই ভালোবাসে, দুজনকেই একসাথে পেতে চায়। মা-বাবার বিবাহ-বিচ্ছেদের পরে তাই সব শিশুর অন্তরেই হয়তো একটাই সুপ্ত বাসনা বা প্রার্থনা থাকে— ‘মা- বাবা মিলে-মিশে থাক; আমরা বিকশিত হই।’ আর এ বাসনা নিয়েই তারা অনিশ্চিত জীবন-ভাগ্য বহন করে যায় সাবালক না হওয়া পর্যন্ত, হয়তো কেউ কেউ তার চেয়েও বেশিকাল।
মে ২৭, ২০২৩
স্প্রিংফিল্ড, ভার্জিনিয়া

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর দেখুন...
©দৈনিক দক্ষিণবঙ্গনিউজ২৫.কম এর সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২৩-২০২৫
❤️Design With Tamim Zarif