স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা না করে হরিজন সম্প্রদায় তথা সুইপার কলোনির একাংশের বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সিদ্ধান্ত অমানবিক ও মানবাধিকার পরিপন্থি বলে মন্তব্য করে ভয়েস অব কনসাস সিটিজেন (ভিসিসি) চেয়ারপার্সন এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেছেন, ব্রিটিশ আমলে ভারতের তেলেগু এলাকা থেকে আসা এই হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন কয়েক শ বছর ধরে এই কলোনিতে বসবাস করে আসছেন। নগরবাসীর সেবার জন্য তাঁদের আনা হয়েছিল। তাঁরা স্বেচ্ছায় এসে ঢাকা শহরে গেঁড়ে বসেননি।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, শহরকে পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর রাখতে যারা কাজ করছে ওই হরিজনদের এই শহরে হয় না মাথা গোঁজার ঠাঁই। যারা গত কয়েকশ বছর ধরে সবচেয়ে বড় সেবা দিয়ে ঝকঝকে-চকচকে শহর বানাচ্ছে তারাই নাকি এখন বড্ড বেমানান এ শহরে। তাই তো তাদের সরিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এ কলোনিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করতে চাচ্ছে। যেখানে থাকবে কাঁচাবাজার ও শপিং কমপ্লেক্স। অমানবিক এ সিদ্ধান্তের পালে হাওয়া জুগিয়েছেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তাকে সহযোগিতা করছেন একশ্রেণির সুবিধাভোগী মানুষ।
গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, রাজধানীর মিরনজিল্লা হরিজন সম্প্রদায়ের কলোনি সন্ত্রাসী কায়দায় উচ্ছেদ করার লক্ষে স্থানীয় কাউন্সিলরের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনী ওই কলোনিতে হামলা চালায়। অথচ, সরকারের কর্তৃপক্ষ নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছে। এখনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হামলাকারিদের গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনছে না। যা খুবই দু:খজনক। এসব দলিত জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন থেকে বঞ্চনার শিকার। পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করা এসব পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী অধিকাংশই অন্যের জায়গায় বসবাস করে। তাদের স্থাযীভাবে আবাসনের ব্যবস্থা করা, তাদের মানবাধিকার সুরক্ষা করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব।
তিনি আরো বলেন, অসহায় মানুষদের মধ্যে যখন প্রধানমন্ত্রী ঘর বিতরণ করছিলেন, তখন রাজধানীর পুরোনো ঢাকার বংশালের মিরনজিল্লা পল্লির হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাসের শেষ আশ্রয়টুকু রক্ষায় রাস্তায় নেমেছে, আদালতের আশ্রয় প্রার্থনা করেছে। তাদের অনেকই উচ্ছেদ হয়ে আশ্রয় নেন খোলা আকাশের নিচে। কেউবা মন্দিরে গিয়ে রাত কাটান। অন্যদের চোখেমুখে তখন উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। তাইতো প্রশ্ন উঠেছে যারা ঢাকা শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখছেন, তাদের প্রতি এই নির্দয় ও নিষ্ঠুর আচরণ কেন? তাঁরা তো এই শহরেরই বাসিন্দা, সিটি করপোরেশনেরই ভোটার, এ দেশেরই নাগরিক।
তিনি বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এর আগেও একাধিক সুইপার কলোনি ধ্বংস করে সেখানে বহুতল ভবন তৈরি করেছে। ভোটের সময় তাঁদের প্রয়োজন হয়, কিন্তু ভোট চলে গেলে তাঁদের খোঁজ রাখেন না কেউ। অথচ চিন্তা করে দেখুন তো এশবার, এই মানুষগুলো একদিন নগর পরিচ্ছন্নতার কাজ বন্ধ করলে কী দুঃসহ পরিস্থিতি তৈরি হবে। বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা না করে কাউকে উচ্ছেদ করা কেবল অমানবিক নয়, বেআইনিও। সংবিধানে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত।
তিনি বলেন, বাস্তবতা হলো, তারা কেউ ভালো নেই। সবকিছুতেই পেছনের সারিতে। গাদাগাদি বসবাসে তাদের মানবেতর জীবন, যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। তাদের থেকে নির্দয় দৃষ্টি ফিরিয়ে নেওয়া হোক। সাধারণ ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মতোই তাদের স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করলে জয় হবে মানুষ ও মানবতার।
Leave a Reply