মাসুদ রানা বাচ্চু সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মাদারের
মেলা রবিবার (২৮মে) থেকে শুরু হচ্ছে। তিথি অনুযায়ী প্রতিবছর জ্যেষ্ঠের দ্বিতীয় রবিবার থেকে উপজেলা সদরের রতনকান্দি ইউনিয়নের একডালা গ্রামে
মাদারের নামক জায়গায় ৪৬৭ বছরের প্রাচীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এই মেলার আয়োজন করা হয়।
স্থানীয়দের ভাষায় যাকে ‘জামাইবরণ’ মেলাও বলা হয়ে থাকে।এই মেলা সম্পর্কে একটি প্রাচীণ প্রবাদও আছে-
মাদার পীরের চামর পূজা,মেলাটি বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য। তবে বিগত তিন বছর বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে সেই ঐতিহ্যে ভাটা পড়ে ছিল । সেটির প্রভাব কেটে যাওয়ায় এই মেলাকে ঘিরে এবার
এলাকা জুড়ে চলছে রকমারি আয়োজন। আনন্দ উল্লাস আর উৎসবে মেতে ওঠার অপেক্ষায় লাখো মানুষ।
এলাকায় প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকেই নানা ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছিল ।
মেলা উপলক্ষ্যে সবাই নিজ নিজ আত্মীয়স্বজনকে বাড়িতে দাওয়াত দিয়েছেন। নিমন্ত্রণে নতুন-পুরণো জামাই-বউ রয়েছেন তালিকার শীর্ষে।
শ্বশুরালয়ে আসা জামাইরা থাকেন ভিন্ন মোজে। কারণ মেলা করতে তাদের হাতে ধরিয়ে দিতে হয় মোটা অঙ্কের সেলামী। সেই সেলামী আর নিজের গচ্ছিত টাকা দিয়ে জামাই বাবুরা মেলা থেকে বড় মাছ কিনে শ্বশুর বাড়িতে আনেন। এমনকি রকমারি খেলনা কেনেন। এছাড়া শ্যালক-শ্যালিকাদের নিয়ে মেলা ঘুরে ঘুরে দেখেন। তাদের পুতুল নাচ, নাগোরদেলা, হুন্ডা খেলা, যাদু খেলা, লাঠি খেলা দেখিয়ে দিনব্যাপি আনন্দ শেষে ছোটদের কাঠের ও ঝিনুকের তৈরী খেলনা সামগ্রী নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়িতে ফেরেন।এছাড়াও মেলা থেকে রকমারি মসলা,কাঠের সামগ্রী, বড় বড় ঝুড়ি, সারা বছরের জন্য কিনে রাখেন গ্রামের সাধারণ মানুষ। এই মেলা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী সফর আলীর কাছে তিনি বলেন, প্রতিটি মেলার পিছনেই কিছু না কিছু লোকগাঁথা কথা থাকে। মাদারের মেলা সম্পর্কে তেমনি একটি লোক গাঁথার কথা জানা যায়। ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এই মেলা হয়ে আসছে বলে কথিত আছে। এ সম্পর্কে জানা যায়, বৈরাগ নগরের বাদশা সেকেন্দারের একজন ঔরশজাত পুত্র এবং একজন দত্তক পুত্র ছিলেন। ঔরশজাত পুত্রের নাম গাজী মিয়া ও দত্তক পুত্রের নাম কালু মিয়া। গাজী মিয়া দেখতে খুবই সুদর্শন ছিলেন। তারা রাজ্যের মায়া ত্যাগ করে ফকির সন্যাসীর বেশ ধারন করে ঘুরতে ঘুরতে ব্রাহ্মন নগরে আসেন। সেখানে ব্রাহ্মন রাজমুকুটের একমাত্র কন্যা চম্পা গাজীকে দেখে মুগ্ধ হন। এক পর্যায়ে তারা দু’জন দু’জনকে ভালবেসে ফেলেন। পালিত ভাই কালু মিয়া বিষয়টি জানতে পেরে গাজীর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে মুকুট রাজার নিকট যান। মুকুট রাজা ফকির বেশী যুবকের এরূপ স্পর্ধা দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বন্দি করেন। এতে গাজী মিয়া দারুন আঘাত পান। তিনি মুকুট রাজার নিকট থেকে ভাই কালু মিয়াকে উদ্ধারের জন্য মাদারের
নামক স্থানে একটি দূর্গ নির্মাণ করেন। পরে রাজার সাথে যুদ্ধ করে ভাইকে উদ্ধার এবং তার কন্যাকে বিয়ে করেন। আর ওই দিনটি ছিল জ্যেষ্ঠ মাসের দ্বিতীয় রোববার। ওই সময় গাজীর বিয়ে উপলক্ষে মাদার দূর্গে নিশান উড়িয়ে তিন দিনব্যাপি আনন্দ উৎসব চলে এবং সেখানে মাজার গড়ে তোলা হয়েছে ছিল । মেলা চলাকালে সেখানে ভক্তরা আসর বসায়। ওই দিনগুলোকে অম্লান করে রাখতে প্রতি বছর জ্যেষ্ঠের দ্বিতীয় রোববার থেকে তিন দিনব্যাপি মেলা বসে। আর এই মেলা উপলক্ষে এলাকাবাসি নতুন জামাইকে ঘরে এনে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন। এছাড়া নিকট আত্মীয়স্বজনের পদচারনায় মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা এলাকা।তিনি আরও বলেন, এই মেলা কে ঘিরে যতই অসহায় গরীব পরিবার হোক না কেনো তার ঘরে ও দেখবেন পাঁচ সাত জন আত্মীয় আছেই। এ গুলো দেখে কি আপনার বিরক্ত হন না তিনি বলেন, না এগুলো আমাদের মানিয়ে উঠেছে। আমরা ছোট থেকে দেখেই আসছি এ রকম বিরক্ত হওয়ার কিছু নেই
Leave a Reply