শরীয়তপুর প্রতিনিধি:
বেলায়েত হোসেনের জন্ম দরিদ্র এক কৃষক পরিবারে।অভাবের সংসারের মধ্য দিয়ে বড় হোয়েছেন বেলায়েত হোসেন। বেলায়েত হোসেনের বাবা শামসুল তালুকদার পেশায় এক চা দোকানি। ছোট বেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় সংসারের অবস্থা খুব খারাপ ছিলো। তখন থেকেই তার বাবার দোকানে এসে তার বাবাকে সাহেয্য করতেন তিনি। তার বাবা শুধু চা দোকানি করতেন না,এর পাশা- পাশি কৃষি জমিতেও কাজ করতেন। বেলায়েত হোসেন তার বাবা সাথে কৃষি জমিতেও যেতেন এবং তার বাবা কে কৃষি কাজে সহযোগিতা করতেন। বেলায়েত হোসেনের অধিকাংশ সময় কাটিয়ে দিয়েছেন তার বাবা চা দোকানি করে। সব কিছু করেও পড়া-শোনা বন্ধ করেন নেই তিনি। অধিকাংশ সময় দোকানে বসে পড়া- শোনা করতেন তিনি। বেলায়েত হোসেন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে, পড়তে বসতেন ঘড়ির কাটায় যখন সকাল ৬:০০ বাজতো তখন ঠিক সময় বাবার চা দোকানে চলে যেতেন। স্কুলের সময় হলে স্কুলে চলে যেতেন। আবার স্কুল থেকে ফিরে বাসায় এসে খাওয়া- দাওয়া করে আবার দোকানে আসতেন। বেলায়েত হোসেনের বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিনোদপুর বাছারকান্দি গ্রামে। তাঁর বাবার নাম শামসুল তালুকদার ও মায়ের নাম হালিমা বেগম। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। বেলায়েতের শিক্ষার হাতেখড়ি তাঁদের গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর স্থানীয় একটি দাখিল মাদ্রাসা শরীয়তপুর সরকারি কলেজে পড়ালেখা করে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে। স্নাতক শেষে ২০১৯ সালে ওই বিভাগ থেকে তিনি স্নাতকোত্তর পাস করেন।
বেলায়েত হোসেন বলেন, আমি একটি সাধারন কৃষক পরিবারের সন্তান।আমার বাবা রৌদ্রে, বৃষ্টিতে ভিজে কৃষি জমিতে কাজ করে আমার পড়া- লেখার খরচ চালাতেন। আমি সব সময় মনে করতাম আমার বাবা আমার জন্য এতো কষ্ট করছেন আমি বড় হয়ে পড়া লেখা করে বাবা মুখে হাঁসি ফোটাবো। আমি থেমে থাকি নেই আমি আমার মতো পড়া- শোনা চালিয়ে গেছি। অনেক অধ্যায় পেরিয়ে আমি আজকে ৪১তম বিসিএসে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে দর্শন বিষয়ে সারা দেশে দ্বিতীয় এস্থান হয়েছি।এখন পরিবারের সবাই আমাকে নিয়ে গর্ববোধ করেন। আমার মা- বাবা আমাকে দেশের সেরা বিদ্যাপীঠে লেখা- পড়া করিয়েছেন। বেলায়েত হোসেন একটা কথা গর্ব করে বলেছেন আমি যদি প্রাথমিকে বৃওি না পেতাম আজকে আমি এপর্যন্ত আসতে পারতাম না আর বিসিএস ক্যাডার হতে পারতাম না। তিনি আরো বল্লেন আমি অনেক কষ্ট করে লেখা- পড়া কেরেছি।
বেলায়েত হোসেন আরো জানান, পড়ালেখা শেষে তিনি সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। ২০২২ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শরীয়তপুর সদর উপজেলায় প্রথম হন। গত জানুয়ারিতে সদরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। এরপর গত বৃহস্পতিবার ৩ই আগষ্ট ৪১তম বিসিএসের সুপারিশপ্রাপ্তদের নামের তালিকা প্রকাশ করে পিএসসি। সেখানে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে দর্শন বিভাগে দ্বিতীয় এস্থান হই আমি।
বেলায়েত হোসেনের বাবা শামসুল তালুকদার বলেন, ‘আমরা দারিদ্র্যের ঘরের মানুষ। যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালাই। দিন আনি, দিন খাই। অভাবের সংসার। সন্তানদের পড়ালেখা না করাতে পারলে উন্নত জীবন পাইব না। এসব ভেবে দিনরাত পরিশ্রম করে বিভিন্নভাবে আয় করেছি আমি। আল্লাহ সহায় ছিলেন বলে চার সন্তানকে পড়ালেখা করাইতে পারছি। ছেলেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে। ভালো ফলাফল করেছে, গর্বে আমাদের বুক ভরে গেছে। এখন সে বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে কলেজশিক্ষক হইছে। আমরা অনেক খুশি ও আনন্দিত। আমাদের সবার পরিশ্রম সার্থক হইছে। আমার ছেলের জন্য সবাই দোয়া করবেন।
বেলায়েত হোসেনের মা হালিমা বেগম বলেন, আমাদের অভাব- আনটনের সংসার।দিন, আনি দিন খাই, নুন আনতে পান্তা ফুরায়। অনেক কষ্ট করে চলতে হয় আমাদের। বেলায়েতের বাবা সন্তানদের পড়া- শোনা করানোর জন্য দিন- রাত অনেক প্ররিশ্রম করছেন। ছেলের সাফল্য দেখে সবাই কষ্ট ভুলে গেছি। আল্লাহ-তায়ালা যদি চায় এখন আমাদের ভাগ্য ঘুরে দারাবে। আমরা এখন সবার কাছে বলতে পারমু। আমাদের ছেলে এখন মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক হইছে।
বেলায়েত হোসেন আরো বলেছেন, কর্মজীবনে আমি দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করে যাব। আমার দারা যদি ক কেউ সফল হতে পারে। তাদের পাশে এসে দাড়াবো।
Leave a Reply