০৫. ০৯. ২৩
এমপি রনি,দহনের কাল ও কারা দহন
—–হারুন-অর-রশিদ মজুমদার
আত্মজীবনী। হ্যাঁ,আত্মজীবনীই। লেখক মেধা ও প্রতিভার সমন্বয়ে একটি বিশেষ সময়কে উপলক্ষ করে,নিজ জীবনকে মেলে ধরেছেন সম্মানিত পাঠক সমীপে। খুবই সন্তর্পণে ও সুকৌশলে। পাঠক বিভ্রান্ত হতে পারেন বইয়ের নামকরণ দেখে। হয়তো ভাববেন বিশেষ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের তথ্যাদির আলোচনা পর্যালোচনা পড়ছেন। বইটি আদ্যাপন্ত পাঠে পাঠক নিশ্চয়ই একাত্ম হবেন,আমার অযচাচিত মন্তব্যের সাথে। গোলাম মাওলা রনি একজন রাজনীতিবিদ,এখানেই গোলমালটা। পাঠক রাজনীতির সাতকাহনের প্রত্যাশা নিয়ে হয়তো পাতা উল্টাবেন। কিঞ্চিৎ সত্যও হয়ত মিলবে,তবে তা অর্ধ সত্য।
দক্ষ সাহিত্যিকের কারুকার্যে গল্পের ভেতরে গল্প ঢুকিয়ে প্যারাকে প্যারায়,লেখক তাঁর জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তথ্যচিত্র চিত্রণ করেছেন,সন্নিবেশ করেছেন এই গ্রন্থে। গোলাম মাওলা রনির লেখার বৈশিষ্ট্য হলো ঝর্ণাধারার মতো কলকল ছলছল উচ্ছল গতিময়তা। এই কারণে লেখকের গ্লানিমুক্ত লেখনি শক্তিমত্তায়,ক্রমাগত প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গান্তরেও পাঠক হোঁচট খান না। ঘটনা বর্ণনায় লেখক মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন নিঃসন্দেহে। একটার পর একটা ঘটনা লেখক যেভাবে তুলে এনেছেন,মেধাবী কলমের আঁচড়ে,তা এক কথায় অনন্য ও অসাধারণ।
কখনও বাস্তবতায় অর্থাৎ ডিবি অফিসে পুলিশের করায়ত্বে,কখনও কোর্টকাচারীর গিন্জি হৈ-চৈ হৈ-হুল্লোড়ে,কখনও প্রিজন সেলের একান্ত নির্জনতায়,কখনও কারাগারের সেলে,কখনও ডিজিএফআই অফিসে,কখনও নিজ অফিসে। একেবারে নির্জলা,নির্মম বাস্তব ঘটনার ঘনঘটার প্রত্যক্ষ ও নিজ উপলব্ধি জাত বর্ণনা।
আবার পর মুহূর্তেই চলে গেছেন মনোযোগী পাঠক সমেত কল্পলোকে,ফরিদপুরের সদরপুর- তাঁর শৈশবে,সেখানে তাঁর বেড়ে উঠার সাবলীল বর্ণনা দিচ্ছেন। উঠে আসছে গ্রামীণ জীবন,গ্রামের মাঠঘাট,গ্রামীণ জনজীবন,গ্রামীণ পারিবারিক চিত্র,এক গ্রামীণ শিশু,একজন গ্রামীণ কিশোরের বেড়ে উঠা। কখনও সংসদ সদস্য হয়ে চলে গেছেন সুদূর আমেরিকায়। আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে। কখনও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংসদ ভবনে স্পীকারের সদর দপ্তরে,কখনও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে,কখনও সচিবালয়ে,কখনও নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে।
যাকে বলে একেবারে টরেটক্কা। লেখকের বর্ণনা পড়ে পাঠকের নূন্যতমও উপলব্ধি হবার জো নেই যে,তিনি একটি গুরুগম্ভীর ও লেখকের হৃদয়ের রক্তক্ষরণজাত লেখা পড়ছেন। ইহাই গোলাম মাওলা রনির লেখার ও বলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
আর একটা কথা না বললেই নয় যে,যিনি নিজেকে নিয়ে রসিকতা করতে পারেন,তাঁকে কারও পক্ষেই হীন বা ছোট করা সম্ভব নয়। অসম্ভব। নিজেকে নিয়ে রসিকতা করাও অতো সহজ না। এর জন্য প্রয়োজন গভীর প্রজ্ঞা। যার চিহ্ন লেখক বইয়ের ছত্রে ছত্রে রেখেছেন। অন্যরা তাঁকে আর কতোটা ছোট করবেন? তিনি নিজেই নিজেকে কখনও কখনও একেবারে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর করে ফেলছেন। নিজেই নিজেকে একেবারে ধুলায় মিশিয়ে দিচ্ছেন। আবার পরক্ষণেই কখনও তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা,তাঁকে একেবারে সমাজের মাথার উপর বসিয়ে দিয়েছে।
যেমন যে ঘটনার প্রতিফলন হলো লেখকের কারাবাস। সে ঘটনা হলো- “শেয়ারবাজার কারসাজি বা কেলেঙ্কারি”। একজন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য হয়ে,এই নারকীয় কাজের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোয় বরং সারা দেশ দলমতের উর্ধ্বে উঠে তার পক্ষে দাঁড়িয়ে গেছে,যা লেখকের বর্ণনায় উঠে এসেছে। এই কারাবাস তাকে দলমতের উর্ধ্বে উঠিয়ে দিয়েছে বলেই,লেখকের সবিস্তার বর্ণনায় ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা,জেলের ভেতর বিরোধী দলীয় নেতৃবৃন্দের আলাপচারিতা ও সৌহার্দ্য অন্তত সেই মেসেজই দেয়। তিনি আর বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা নন। তাঁকে জাতীয় রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বের পরিণতি ও পরিচিতি দিয়েছে এই কারাবরণ বা কারাবাস।
লেখকের বর্ণনার নিগূঢ় রহস্যে উদ্ঘাটন করা যায়,তিনি এই কারাবাসে যেমন ব্যাথিত তেমনি গর্বিতও। গর্বিত এই কারণে যে ব্যাক্তিগত লাভ ক্ষতির নিরিখে না,একটি জাতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে যেয়ে কারাবরণ বলেই লেখক,এই কারাবরণে লজ্জিত নন মহিমান্বিত বোধ করছেন। বইটির পরতে পরতে কারও কারও মতে,আমার এই অতি কথনের সত্যতা,পাঠক উপলব্ধি করতে পারবেন। উপলব্ধি করবেন একেবারে নির্মম বাস্তবতার উপর সুদৃঢ় পা ফেলে। কয়েকটি উদাহরণ দিলে,যাঁরা বইটি পড়েননি,তাঁদের বইটি সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ হবেঃ
১…..”কিরে ব্যাটা জেল খেটেছিস কয়বার? আমি বলতাম একবারও না। ওরা বলত বলিস কিরে,পোলাও খাওয়া মজনু! এটা আবার কেমন কথা,পোলাও খাওয়া মজনু হলাম কিভাবে?….ওদের কথা শোনার পর মাঝে মধ্যে মনে হতো অন্তত একবার জেলে গেলে মন্দ হয় না। কিন্তু কিভাবে যাব? উপায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আজ যে কোনো উছিলায় জেলখানায় ঢোকার সুযোগ পেলাম,ভাবতেই বেশ রোমাঞ্চিত বোধ করছিলাম”…….(পৃ.৫৭)
২.লেখকের বংশে তিনিই প্রথম থানা,পুলিশ,কোর্ট কাচারি,জেল,হুলিয়া হুমকির মুখোমুখি হলেন…..”আমার বয়স তখন পাঁচ/ছয় বছর হবে আরকি। সময়টা স্বাধীনতার ঠিক পরপর। আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে দু’জন পুলিশ যাচ্ছিল একটি চোর নিয়ে। চোরটি পিঠমোড়া করে বাঁধা অবস্থায় ছিল। (চাচাত) দাদী তখন উঠান ঝাড়ু দিচ্ছিলেন। চোরটি সম্ভবত একটু ধীরে ধীরে হাঁটছিল। একজন পুলিশ সজোরে চোরের পাছায় অঘাত করল। মাথা উঁচু করে যখন (চাচাত) দাদী দেখলেন- দুজন পুলিশ এক চোরকে মারতে মারতে নিয়ে যাচ্ছে,আর যায় কই! (চাচাত) দাদী সজোরে চিৎকার দিলেন- ও মাইনক্যা,ও লালু এরপর সটান অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। লালু ও মানিক নামে তার দুই ছেলে অদূরে সাংসারিক কাজ করছিলেন। মায়ের আর্তচিৎকার শুনে দৌড়ে এলেন। তাদের বৌরাসহ পরিবারের মেয়েরাও আসল। আমরা যারা গুঁড়াগাড়া ছিলাম তারাও এলাম। দাদীর মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিল। কাপড়চোপড়ও নষ্ট করে ফেলেছিল মলমূত্র ত্যাগ করে”…….(পৃ.৩৪)
৩.কখনও কখনও সামাজিক প্রেক্ষাপটের ব্যক্তিগত উপলব্ধি মন্তব্য আকারে লিখেছেনঃ….”বিএনপির লোকজন আওয়ামী লীগারদের মানুষই মনে করে না। অনেকে কমিউনিস্ট নাস্তিক বলে গালি দেয়। আর ভারতের দালাল তো আমাদের কমন উপাধি”……(পৃ.৭৭)
৪.জেল জীবনে লেখকের বাস্তব পারিপার্শ্বিকতা দর্শনজাত গভীর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশঃ……”আমার মনে হতে থাকল,তবে কী আমি আমার দলের বেওয়ারিশ এমপি”?…….(পৃ.১০১)
৫.লেখকের নিজ সংগঠন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল সমূহের তুল্যমূল্য বিচার করে আত্মসমালোচনা বা আত্মোপলব্ধিঃ…..”সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি এবং জামায়াতকে যদি ধরে নিই,তবে তাদের বিভিন্ন স্তরের শীর্ষ একশ নেতার শিক্ষা-দীক্ষা,পারিবারিক ঐতিহ্য,ব্যাক্তিগত সততা,দক্ষতা,বাকপটুতা এবং প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের সঙ্গে চ্যালেন্জ দিয়ে দাঁড়ানোর মতো শক্তি-সাহস কতজন আওয়ামী লীগারের রয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তরে আমি নিজেদের অবস্থানকে দিন দিন দুর্বল হতে দেখছিলাম”……(পৃ.১০১)
৬.কারাগারে বসে লেখক জীবন যাপন সম্পর্কে এই উপসংহারে পৌঁছালেন যে…….”কারাগারে বসে আমি অনেকবার আমার অন্যতম প্রিয়মানুষ প্রয়াত স্টিভ জবস-এর কথা স্মরণ করেছি। সারাজীবনের সাধনা দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি এবং বিখ্যাত কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা হওয়ার পর তার খ্যাতি,বিত্ত বৈভব কোনোটারই অভাব ছিল না। এ্যাপেল কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী হিসাবে পৃথিবীর তাবৎ বৃহত্তম কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিনিয়ত প্রতিযোগীতা করে গেছেন শেষ দিন পর্যন্ত। কিন্তু স্টিভ জবস সম্পর্কে সামান্যতম একটি বাজে শব্দও তাবৎ পৃথিবীর মানুষ শুনতে পায়নি। আমার মতো মানুষদের জন্য তিনি উপদেশ দিয়ে গেছেন- বোকা থেকো এবং ক্ষুধার্ত থেকো”…….(পৃ.১৫০)
৭.সম্ভবত লেখক নিজের মনে লালিত বক্তব্যই অন্যের জবানীতে পেশ করছেনঃ……”পর্যটক আমার রাগান্বিত মেজাজের কোনো তোয়াক্কা না করে বরং এই প্রথমবার স্মিতহাস্যে আমার চোখের দিকে তাকালেন এবং শান্তভাবে বললেন,হুজুর রাগ করবেন না। আমি যে তিনজন সুখী মানুষের নাম বললাম তারা সবাই মৃত ব্যাক্তি। আমার মতে,কোনো জীবিত ব্যাক্তিকে পরিপূর্ণ সুখী মানুষ বলা যায় না”……. (পৃ.১৬৪)
৮.দারুণ একটি তথ্য পাঠক সমীপে উপস্থাপনের লোভ লেখক সম্বরণ করতে পারেননি…..”আমি যে রুমে আছি সেই রুমেই নাকি সেই ব্যাক্তি থাকতেন যার কারণে আমি আজ জেলে। আমি অতিশয় আশ্চর্য হয়ে তার দিকে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। মামুন সাহেব (গিয়াসউদ্দিন আল মামুন) বললেন,গত ১/১১-এর সেনাশাসনের সময় বেক্সিমকোর সালমান এফ রহমান এই জেলেই ছিলেন। তিনি সেই রুমেই ছিলেন যেখানে এখন আপনি রয়েছেন। শুধু কি তাই! আপনার খাটটি এখন যে স্থানে রয়েছে তার খাটও একই স্থানে ছিল। তিনি বেশিরভাগ সময় বিষণ্ন মনে কুরআন শরীফ হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে চেয়ার পেতে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন। কথাবার্তা হলে প্রায়ই বলতেন,এবার জেল থেকে ছাড়া পেলে আর ঝামেলায় জড়াবেন না। ব্যাবসায়-বানিজ্য আর বাড়াবেন না। বরং যতদুর সম্ভব ছোট করে ফেলবেন এবং নিরিবিলি জীবনযাপন করবেন। আমি কথাগুলো শোনার পর দ্রুত নিজের রুমে ফিরে এলাম”……(পৃ১৫৭)
এই বইয়ের প্রধান যে চমক,যা দেখে পাঠক প্রথমেই আঁতকে উঠবেন ও ভিমরি খাবেন। তা হলো সরকার দলীয় একজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্য গ্রেফতার হচ্ছেন,কারাবরণ করছেন নিজ দলের আরেক প্রভাবশালী,অনির্বাচিত ব্যাবসায়ী নেতার পর্দার অন্তরালের অঙ্গুলি হেলনে। অথচ এই বইয়ে ঘটনার সূচনাবলীর লেখকের ভাষ্যে সেই খলনায়ককেই বইটি উৎসর্গ করে,লেখক এক ব্যাতিক্রমী রসিকতা না উদারতা দেখিয়েছেন,তা লেখকের রহস্যময় জীবনের মতোই আরেক রহস্যের বাতাবরণ সৃষ্টি করেছে। যেন জীবনানন্দ দাসের আকাশের ওপারে আকাশের মতোই,লেখক খোলসের ভেতরে খোলসের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন,এই উৎসর্গ পত্রের মধ্য দিয়ে।
যদিও লেখকের নির্মম ও নির্মল অনেক রসিকতার চিহ্ন বইয়ের প্রায় প্রতিটি অধ্যায়ে শিল্পমান সম্মতভাবে উদ্ধৃত হয়েছে। “এমপির কারাদহন” (প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারী বইমেলা ২০১৪,দ্বিতীয় সংস্করণ এপ্রিল ২০১৪) শুরু থেকে শেষাবধি পড়লে মনোযোগি পাঠক,লেখকের রসবোধ কতোটা প্রবল তা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পারবেন। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ দিগের মধ্যে তো বটেই,এক আবুল মনসুর আহমদ ছাড়া যার দ্বিতীয় নজির,গোটা বাংলা রাজনীতিবিদ ধারার সাহিত্যের মধ্যে,আর একজনও নেই বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আমি সব জানি,এমন না। দ্বিতীয় নজির থাকলে জ্ঞানী পাঠক আওয়াজ দিলে,বেজার নয় বরং খুশি হবো। আমার জানার পরিধিটাকে আরেকটু ঝালিয়ে নিতে পারবো।
চমৎকার একটি রূপক চিত্রকল্প। এই অংশটুকুই বইয়ের মূল উপজীব্য বিষয় বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। রূপকল্পের বর্ণনাটি এমন,….”আমি শুয়ে আছি চিৎ হয়ে আর আমার কোষা নৌকাটি মৃদু ঢেউয়ের তালে ছন্দময় গতিতে দোল খাচ্ছে। একবার মনে হলো আবেশে চোখ বুজি। কিন্তু নীল আকাশের অপার সৌন্দর্য এবং পশ্চিম আকাশের রক্তিম আভা আমাকে চোখ বুজতে দিলো না। আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে একবার আল্লাহকে খোঁজার চেষ্টা করলাম আবার পশ্চিম দিগন্তে তাকিয়ে আকাশের লাল রঙের মধ্যে ইমাম হাসান-হোসেনকে খোঁজার চেষ্টা করলাম। এমন সময় কিসের যেন একটি আঘাত লাগলো আমার কোষা নৌকাটিতে। বেশ বড়সড় আঘাত।
আমি উঠে বসলাম এবং পানির দিকে তাকালাম। বিরাট একটি বোয়াল মাছ আমার নৌকার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দুষ্টুমি করে লেজ দিয়ে একটি আঘাত করে গেল। প্রবল সেই আঘাতে নৌকাটি সেই মুহূর্তে দুলে উঠল এবং আমাকে আকাশ দেখার ধ্যান থেকে জমিনে নামিয়ে আনল। আমার চিন্তা যখন এ পর্যন্ত এগুলো তখনই টের পেলাম আমাদের প্রিজনভ্যানের লকআপ খুলে গেছে এবং সিপাহিরা আমাকে ডেকে বলছে, নামেন। আমরা এসে গেছি। আমি নামলাম এবং ফটকের দিকে তাকালাম। ফটকের উপর লেখা কাশিমপুর কারাগার”।……..(পৃ.৭৫)
বি.দ্র.এই লেখার উপর যতো আলোচনা,সমালোচনা করা যায় করুন। বলে দিন এটা কোনও গ্রন্থালোচনাই হয়নি। তবুও প্লিজ প্রসঙ্গান্তরে যাবেন না। এই বাউন্ডারির মধ্যেই খেলুন। বাউন্ডারির বাইরে খেললেই আউট বা বোকাট্টা।
পুনশ্চঃ নবাব,খানদানি,অভিজাত শব্দগুলো জনাব রনি ভাইয়ের নামের সাথে একাকার। অন্তত যারাই তার সাহচর্যে এসেছেন জানেন। তাঁর অফিসে বছর পঁচিশেক বয়েসের,একজন সহজ সরল তাঁর ব্যাক্তিগত পিয়ন আছে,যাকে জনাব রনি ভাই আপনি সম্বোধন করেন। উদাহরণঃ “আপনি আমাদের দু’জনের জন্য দু’টো গ্রীন-টি নিয়ে আসুন”। অফিসের অপরাপর কর্মকর্তাদের তো আপনি বলে সম্বোধন করেনই। বাসা থেকে ভাবি,ছেলে বা মেয়ে ফোন দিলে,ফোন ধরেই বলেন, “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমা তুল্লাহে ওবারাকাতুহু”।
একেবারে আমার বড়ো ভাইয়ের এই গুণাবলি,রনি ভাইয়ের সাথে মিলে যাওয়ায় তাঁর সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা ও শ্রদ্ধা দুই-ই বাড়ে। বিজিএমইএ সূত্রে ওনার সাথে আমার সাক্ষাৎ ও পরিচয়। গোলাম ফারুক অভির পর আর কোনো রাজনৈতিক নেতাকে,আমি এতটা ব্র্যান্ড সচেতন হতে দেখিনি। গাড়ি,জামা,জুতো,ঘড়ি,চশমা,প্যান্ট,পাঞ্জাবি,স্যান্ডেল সবই ব্র্যান্ডের ব্যবহার করেন। অথচ রাজনীতি করেন একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের নিমিত্তে।
তাঁর জীবন ধারার এই বৈপরীত্য আমার কাছে এক বিরাট রহস্য। কৃতজ্ঞতা জনাব রনি ভাই,অসম্ভব সাবলীল একটি বই ও জনসমক্ষের বাইরের অনেক অজানা কথা জানানোয়। বইটি পাঠে আমার একটিই উপলব্ধিঃ “কতো অজানারে”!ল
Leave a Reply