কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স
মাহমুদ রেজা চৌধুরী
নভেম্বর, ১৪,২০২৩
প্রসঙ্গ: ইসলাম ধর্ম! অপ্রিয় হলেও সত্যি যে, আমাদের এক শ্রেণীর প্রগতিশীল চিন্তা নায়করা ধর্ম, বিশেষ করে ইসলামের কথা শুনলেই অখুশি হন। এঁদের মধ্যে একদল আছেন তাঁরা ধর্ম বিষয়টাকেই
নানান ভাবে দেখার চেষ্টা করেন। তাঁরা মানবধর্মের কথা বলেন। প্রত্যেকটা ধর্মই কিন্তু মানুষের জন্য, মানবের জন্য। তাই সব ধর্মই মানব ধর্ম। এই বিষয়ে আজকে কিছু লেখার কোন ইচ্ছা ছিল না। সকালে উঠে ফেসবুকে আমার পরিচিত ও একজন গুণী মানুষের তাঁর সামাজিক মাধ্যমের পেইজে প্রশ্নটা দেখি ও পড়ি। প্রশ্নটা তাঁর কিনা তা জানিনা। তবে তাঁর পেইজে প্রশ্নটা আসছে।
“ইসলাম ধর্মকে শ্রেষ্ঠ ধর্ম বলা হয় কেন”?
তাই মনে হল, জ্ঞানী লোকদের এক ফোঁটা কলমের কালির মূল্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমর মতো একজন অতি সাধারণ ও মূর্খ মানুষের কাছে। জ্ঞানী মানুষদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে প্রতিদিন। মাঝে, মাঝে সাহস করে সেখানে নিজের মূর্খতার কিছু চিন্তা নিয়েও ব্যক্তিগত মতামত শেয়ার করি। যাতে নিজের ভুলগুলিকে আরো বেশি জানতে পারি। এই লেখাটাও নিজের ভুলকে জানার আগ্রহ নিয়েই লেখা।
বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনের কথা। “আমরা যা জানি সেটা এক চামচ পানির মত। আর যা জানিনা, তার পরিমাণ এক সমুদ্রের”। সেই সামান্য জ্ঞান নিয়ে আমার মত নগণ্য মানুষ কোনটাকে শ্রেষ্ঠ বলি, বা কোনটাকে না। তাও জানিনা। এই আমরা কেউ যদি বলি, অমুকে শ্রেষ্ঠ, বা এটা শ্রেষ্ঠ, সেটা শ্রেষ্ঠ! সেটাবা কিভাবে বলি। পৃথিবীতে আমার জীবন অতি সামান্য সময়ের। জ্ঞানের বয়স এবং জ্ঞানের পরিধি তার চেয়ে কয়েক লক্ষ গুণ বড়। সৃষ্টির রহস্য জ্ঞান তার চাইতেও বড় এবং গভীর।
এই বাস্তবতায় আমরা কি কোন ব্যাপারে কোনভাবে কিছুই “চূড়ান্ত” বা “শ্রেষ্ঠ” বলতে পারি কিনা? চারিদিকে আমাদের সবকিছুইতো ক্ষণস্থায়ী। মানুষ নিজেও তা। হয়তো সেই কারণেও বিজ্ঞানী নিউটন বলেছেন, ঐরকম একটা কথা। চিন্তা করে দেখি, আমরা কি এই কথার সাথে দ্বিমত করতে পারি? জানিনা। অন্তত আমি পারিনা। এতটুকু, বলতে পারি।
পৃথিবীতে কোন ধর্ম “শ্রেষ্ঠ”। এটা কোন ধর্ম বলে? জানতে ইচ্ছাও করে। ধর্মের “অনুসারী” আর ধর্ম, কিনতু এক না। অনুসারীদের আবেগ এবং অল্পবিদ্যা বেশি। তাই হয়তো আমরা এটা, সেটা ভাবি বা বলি নিজ নিজ ধর্ম নিয়েও। হতেও পারে। কিন্তু একজন জ্ঞানী মানুষ যখন প্রশ্ন তোলেন, তখন সেটা মনকে একটু ভাবায় বৈকি।
কোন ধর্মের জন্য মানুষ সৃষ্টি হয় নাই। মানুষের জন্য ধর্ম সৃষ্টি। সেটা যেই করুক না কেন। তাই ধর্মের কোন ভালো বা মন্দ থাকলে সেটা মানুষের দ্বারা। কোন ধর্মের দর্শন বা তার আদর্শ এর কারণ, বলা যাবে কি? মানুষ তার নিজের স্বার্থে সেটা করে। পৃথিবীতে কয়েকটা ধর্ম আছে। যাকে আমরা ঐশ্বরিক ধর্ম বলে জানি। ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলমান। এই তিন জাতি সেই তিন ধর্মের অনুসারী। মুসলমানরা অনুসরণ করি ইসলাম ধর্ম। ইসলাম ধর্মের যিনি প্রবক্তা বা মেসেঞ্জার, মোহাম্মদ (স:)
নিজে কোথাও ইসলাম ধর্মকে কি “শ্রেষ্ঠ” বলেছেন! হ্যাঁ এটা শেষ ধর্ম, বলেছেন। তাও সেভাবে বলেন নাই। বলেছেন, এরপরে তোমাদের কাছে আর কোন ঐশ্বরিক ধর্মগ্রন্থ আসবে না। অর্থাৎ ঐশ্বরিক শেষ ধর্ম আসবেনা। এরপর অবশ্য মানুষ আরো অনেক ধর্ম সৃষ্টি করেছিও আমরা, “আকবরের এলাহী” থেকে আরো অনেক কিছু। এখানে সেই প্রসঙ্গে কথা বলছি না।
ইসলামের এই শেষ ম্যাসেঞ্জার মোহাম্মদ (স:) তাঁর জীবনের শেষ ভাষনে
বলেছেন, ধর্ম নিয়ে তোমরা কেউ বাড়াবাড়ি করবে না। বলেছেন, কোন জাতি কোন জাতির উপরে শ্রেষ্ঠ না। বলেছেন, সব মানুষের সমান অধিকারের কথা; নারী-পুরুষ উভয়ের। মাপে বা ওজনে কাউকেই ঠকাবার কথাও না করেছেন। আমার জানা নাই কোন ধর্ম প্রচারক ইসলাম ধর্মের আগে মানবতার কথা কতটা বলেছেন এত স্পষ্ট করে। শুধু বলাই না, নিজের যাপিত জীবনেও তা পালন করেছেন অক্ষরে, অক্ষরে। সেই কারণেও “পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ১০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব” এই বইতে মোহাম্মদ (স:) তাঁর নাম এই তালিকায় সবার উপরে। এর লেখক একজন অমুসলিম।
মাইকেল এইচ হার্ট। কেন লেখক এটা করেছেন তার ব্যাখ্যা ও দিয়েছেন লেখক। আমরা হয়তো এই বইটা অনেকে পড়িও নাই। উল্লিখিত বইতে আরো অনেকের নাম আছে। যেমন আইজ্যাক নিউটন, যীশু খ্রীষ্ট, বুদ্ধ, কনফুসিয়াস, সেন্ট পল। এদের সবার শীর্ষে মুহাম্মদের নাম। সে-ই তো মানবজাতিকে ইসলাম শিখিয়েছেন।
গাছের তলায় বসে না, অথবা কোন পাঠাগারে গবেষণা করেও না। একেবারেই সাধারণ মানুষের জীবন যাপন করেই।
তাই এই ধর্মের কোন কোন অনুসারী অতি আবেগে যদি কেউ বলি ইসলাম ধর্ম “শ্রেষ্ঠ” ধর্ম। সেটা বলা কিন্তু ঠিক না। ইট ইজ মোর বোঝার ব্যাপার। প্রচারের না। ভারতের একজন পন্ডিত লেখক অম্লান দত্ত তাঁর এক রচনায় লিখেছেন যে, ইসলাম ধর্মের মেসেঞ্জার মোহাম্মদ যেভাবে ইসলাম ধর্মের নানান বিষয়ের কথা এবং ন্যায় পরায়ণের কথা বলেছেন। সেটা সে তাঁর নিজের জীবন যাপনেও পালন করেছেন। উল্লেখ্য যে, মোহাম্মদের জীবনী এবং তার শিক্ষা কিন্তু রূপকথার কোন গল্প না। মাত্র ১৫শ বছর আগের কথা। পৃথিবীতে অনেক পণ্ডিত এবং জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন। তারাও কয়েক হাজার বছর পূর্বে। তাঁদের কথাও কিন্তু আমরা জানি, পড়ি। সেটাও কাল্পনিক না। আর যা কাল্পনিক, বিজ্ঞ মানুষরা তা জানেন।
ইদানিং আমাদের মধ্যে ধর্ম বিশেষ করে ইসলাম ধর্ম নিয়ে নানান প্রশ্নের এবং বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এর অন্যতম একটা কারণ, এখন পৃথিবীতে আসলে কোন ধর্মই ঠিক ধর্মের স্থানে নাই। ধর্মটা এখন “ধর্মের রাজনীতিতে” পরিণত হয়ে গেছে। ইসলাম ধর্মের বয়স প্রায় ১৪০০ বছর পার হয়ে গেছে। সেই তুলনায় আমরা যারা এখন ইসলামের অনুসারী বা এই বিষয়ে কথা বলি, প্রশ্ন বা সংশয় তুলি। তাদের কারোরই বয়স শত বছরও হয়নি। তাই মাঝে, মাঝে নিজেকেও প্রশ্ন করি এত প্রাচীন একটা বিষয় (আমার জন্মের তুলনায়) তার সব প্রশ্নের উত্তর কি ছোট্ট জীবনকালে বের করতে পারব?
ধর্ম এমন কিছু নিয়ম ঠিক করে দেয়, যা মানুষের মতৈক্য বা মতবিরোধ থেকে তৈরি হয় না, এইগুলি আসে কোন অতি মানবীয় উচ্চতর ক্ষমতাধর কারো কাছ থেকেও। পেশাদার ফুটবল কোন ধর্ম না। কারণ এর অনেক রকম নিয়ম ও আচার থাকলেও সেইগুলি মানুষের তৈরি। অনেক ঐতিহাসিক বলেন, ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ধর্মের মধ্যে আছে ইসলাম ও বৌদ্ধ ধর্ম। এই দুইটা ধর্মই সর্বজনীন ও প্রচার মুখী। তাই অনেকের ধারণা হতেও পারে ধর্ম মাত্রই এমন। এই ধরনের প্রচারে অনেক সময় স্বচ্ছতা কম থাকে। তর্ক থাকে যতটা, প্রজ্ঞা থাকে না ততটা।
এটাও আনফরচুনেট যে, ইসলাম ধর্ম নিয়ে ইসলাম ধর্মের বিশ্বাসী না, তাদের অনেক পণ্ডিতরা এটা নিয়ে যতটা গবেষণা করেছেন এবং অনুসন্ধান করেছেন। মুসলমানরা সেই তুলনায় খুবই সামান্য কাজ করেছে। আমরা অনেক মুসলমানরা ধর্মকে বিশেষ করে ইসলামকে আবেগ দিয়ে যতটা বুঝতে চাই জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে সেই কাজ করি কম। ইসলাম আজকে বন্দি মসজিদ, মাজার আর কিছু এর নির্দিষ্ট কাজের মধ্যে। ইসলামের যে শিক্ষা মানবতা এবং ন্যায়পরায়ণতা। এর আশেপাশে আমরা আজকে অনেক কম জীবন যাপন করি। সারা পৃথিবীতে আজকে ইসলামের এই দুর্দশা তাই। একই সাথে এর প্রভাব ও অনুসারীর সংখ্যাও বিশ্বে বাড়ছেই। তাই এটা নিয়ে অনেক সংশয়, ভয়, বিতর্ক এবং একে “ইগনোর” করার সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রবণতাও বাড়ছে।
বাড়তেই পারে। এটা কোন দোষের কিছু না। কিন্তু দোষের হবে আমরা যখন ধর্ম নিয়ে যদি কোন “বাড়াবাড়ি” করি। কেবল আবেগে ভর করে চলি। ইসলাম আবেগকে নয়, যুক্তি এবং “জ্ঞানকে” বেশি প্রাধান্য দেয়। সেই যুক্তি এবং জ্ঞান, সঠিক না বেঠিক। সেটার বিচার করার দায়িত্ব ইসলাম কোন মানুষকে দেয়নি। যার যার জ্ঞান ও বিশ্বাস তার তার কাছে। নিজের বিশ্বাসকে যদি শ্রদ্ধা করি, অন্যের বিশ্বাস কেও একই ভাবে করব। সমাজে অনর্থক বিরোধ বা কোন্দলে জড়ানোর শিক্ষা “ইসলাম” দেয়নি। ধর্ম নিয়ে এটা যারা করেন, তারা ধর্মের রাজনীতি করেন। শুধু ইসলামে কেন; খ্রিস্টান ধর্মে কি হাজারো বিভক্তি নাই? তার সবগুলি কি মূল বাইবেল সমর্থন করে?
আমরা এটাও জানি যে, মানুষের সভ্যতার পথ পরিক্রমা এবং অগ্রযাত্রার ইতিহাস বিচিত্র ও বৈচিত্র্যময়। কেউ কেউ এটাকে বিস্ময়কর বলেছেন। অজানাকে জানার জন্য মানুষের আছে দুর্বার স্পৃহা এবং সেই থেকে জন্ম লাভ করে অনুসন্ধিৎসা।
চেতনার লগ্ন থেকেই মানুষ যুগে যুগে এই অনুসন্ধানের কাজ চালিয়েও আসছে। কৌতহলী মানুষের মনে আছে অনেকগুলি সার্বজনীন প্রশ্ন। কিছু সার্বজনীন জিজ্ঞাসাও। এর মধ্যে একটা, কে আমি? এই সবগুলির প্রেক্ষাপটেও আমাদের মনে অনেক সময় অনেক জিজ্ঞাসার সৃষ্টি হয়। এটাই স্বাভাবিক।
সেই জিজ্ঞাসা থেকেই হয়তো আমাদের কারো কারোর মনে প্রশ্ন হয়, ইসলাম ধর্ম কে শ্রেষ্ঠ বলা হয় কেন? এটা ইসলামের কথা না। ইসলাম অনুসারী আমার মত মূর্খের কথা হতে পারে। তাই এটা কেমন ধর্ম, বা কিসের ধর্ম। উত্তর এই ধর্ম নিয়ে গবেষণা, অনুসন্ধান ও এর ইতিহাস পর্যালোচনার মধ্যে আছে। এই পর্বগুলি শেষ করে আমরা যে যার মত করে এই ধর্মকে বিশ্বাস করতে পারি বা ত্যাগ করতেও পারি। সেই স্বাধীনতা আমাদের আছে। সমান অধিকার আছে, এই ব্যাপারেও। কোনটা এর ঠিক, কোনটা বেঠিক। এটা জানার জ্ঞান অন্তত আমার নাই। একজন মানুষ আরেকজন মানুষের ব্যাপারে বা তার বিশ্বাসের ব্যাপারে “ন্যায়বিচার” করতে পারেন কিনা! এটাও আমার জানা নাই। তবে এতটুকু জানি যে,
ইসলাম দর্শন এবং এর শিক্ষা কোন মানবতার বিপক্ষে না, অবিচারের বিপক্ষে না। অন্যায়ের পক্ষে না। ব্যভিচারের পক্ষেও না।
অনেকেই বলতে পারি, এটা সব ধর্মেরই একই শিক্ষা। হতেও পারে। সব ধর্মের সাথে ইসলামের একটা পার্থক্য আছে বলেই ইসলাম ধর্মের পর আর কোনো ঐশ্বরিক ধর্ম পৃথিবীতে আসেনি এখন পর্যন্ত। আধুনিক বলতে যদি সবচেয়ে শেষে যা আসে, সেটাও গণ্য হয়। তাহলে ইসলাম একটা আধুনিক ধর্ম। শ্রেষ্ঠ কিনা, বিচার করার কোন অধিকার ইসলাম অনুসারীদের সৃষ্টিকর্তা দেন নাই। বাকি কথার উত্তর, যার যার অন্তহীন বিবেকের কাছে। যে বিবেক নিরবে কথা বলে। নিরবে বিশ্বাস করে যতটা, প্রচার করে না ততটা। তবে প্র্যাকটিস করে বিনয়ের সাথে। বিনয় এই ধর্মের একটা বড় শিক্ষা
Leave a Reply