মির্জা গালিব।গজল বা উর্দু কবিতা মানেই গালিব।দক্ষিণ এশিয়ায় উর্দু ভাষার সবচে প্রভাবশালী কবি তিনি।বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের মতই উর্দু সাহিত্যে গুরুত্বপুর্ন তিনি।দিল্লীতে নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার মাজারের কাছেই তার সমাধি। নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার মাজারে তার আধ্যাত্নিক শিষ্য আমির খসরুরও মাজার।যাকে কাওয়ালীর মুল ধরা হয়।নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার মাজারের পরেই আমির খসরুর মাজারে থাকে ভক্তদের ভীড়।রাতে মাজারের সামনে বসে কাওয়ালীর আসর।কিন্তু মির্জা গালিব পাশেই শায়িত হয়েও উপেক্ষিত বলা যায়।অধিকাংশ লোকজন বোধহয় জানেনইনা এই এলাকায় শুয়ে আছেন তাদের প্রিয় সব গজলের অমর স্রস্টা মির্জা গালিব।১৮৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুর পর তাকে নিজাম উদ্দিনের মাজারের কাছেই সমাধিস্থ করা হয়।
মোঘল সাম্রাজ্যের শেষ এবং বৃটিশ সাম্রাজ্যের শুরুর উর্দু এবং ফার্সি কবি ছিলেন মির্জা গালিব।শেষ মোঘল বাদশাহ বাহাদুর শাহ এর সভা কবি ছিলেন তিনি।বাহাদুর শাহ নিজেও কবি ছিলেন।আগ্রাতে জন্ম হলেও ৫০বছর দিল্লীতে বসবাস করে ৭২ বছর বয়সে মৃত্যু হয়।মাজারের পাশে সমায়িত হলেও বলা যায় তার সমাধি উপেক্ষিত।এখানে কেও গালিবকে খুঁজেনা।
৭২ বছরের জীবনে জীবিকার জন্য কখনও কাজ করেননি তিনি।রাস্ট্রীয় পৃস্টপোষকতা অথবা বন্ধুদের উদারতায় জীবন কাটিয়েছেন।
তার খ্যাতি আসে মুলত মৃত্যুর পর।দক্ষিণ এশিয়ার উর্দু ভাষার সবচে প্রভাবশালী কবি এবং সারা বিশ্বে তার জনপ্রিয়তা আসে মৃত্যুর পর।উর্দু কবিদের ভেতর তাকে নিয়েই বেশী লেখা হয়।অবশ্য তার লেখায়ও তিনি নিজের বিষয়ে বলেছিলেন, বেঁচে থাকতে তার গুনকে কেউ স্বীকৃতি না দিলেও পরবর্তী প্রজন্ম তাকে স্বীকৃতি দিবে।বাস্তবে তার কথাই সত্য হয়েছে।তার প্রেম এবং দর্শন পাঠকের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে।
বলা হয়ে থাকে প্রায় সন্ধ্যায় গালিব মদ পান করার সময় লিখতেন।এসময় তার কাছে সুঁতা থাকত।তিনি কবিতার একটি লাইন লিখতেন আর সুঁতায় একটি গিট দিতেন।যখন শুতে যেতেন সুতায় তখন অনেক গিট থাকত।সকালে গিট খুলতেন এবং কবিতাও মুখস্ত বলতে পারতেন।তার প্রেমের কবিতা আজো জনপ্রিয়।
গালিবের কবিতার পঙতিতে আছে
“যে আর্তনাদ ঠোঁটে এলো না সে বুকে দাগ কেটে বসে
যে জলবিন্দু নদীতে পৌঁছালো না তাকে মাঠি শুষে নেয়।”
আবার তিনি লিখেছেন
“তোমার নির্দয় দৃস্টি যদি এভাবেই সংবরণ শিখিয়ে যায়
শিরায় রক্তের মতো শুস্ক তৃণে আগুন লুকিয়ে যাবে।”
প্রেমের কবিতার পাশাপাশি তার রসবোধ এবং কৌতুক উর্দু সাহিত্যে অনন্য সম্পদ।
১৮৫৭তে দিল্লীর লাল কেল্লা(রেড ফোর্ট)থেকে মোঘল বাদশাহকে বের করে দেয় ইংরেজরা।লাল কেল্লার পতনের পর বাদশাহ কে ধরে নিয়ে যায়।দিল্লীর অনেক বিশিষ্ট জনকে হত্যা বা বন্দি করা হয়।বিপর্যয় নেমে আসে গালিবের জীবনেও। মির্জা গালিবকেও ধরে নিয়ে যায় ক্যাম্পে।সেখানে তার সাথে কথা বলেন ইংরেজ কর্নেল ব্রাউন।মোঘল বাদশাহর সাথে সম্পর্ক থাকায় তার ফাঁসির সম্ভাবনা ছিল।গালিবকে তারা প্রশ্ন করল তিনি মুসলমান কি না?কঠিন পরিস্থিতির সামনে দাড়িয়েও তিনি জবাব দিলেন রসিকতার সাথে।গালিব বললেন মুসলমান কিন্তু আধা। কর্নেল ব্রাউন অবাক।এটা আবার কেমন মুসলমান? গালিব হাসলেন, বললেন “শরাব পীতা হু, লেকিন শুকুর নঁহী খাতা”। সবাই হেসে উঠল।গালিব মুক্তি পেলেন। কিন্তু তার জীবনের পরের সময় ভাল কাটেনি।কয়েক মাস জেল খেটেছেন।এক সময় শরীরে অসুখ বাসা বাঁধে। ১৮৬৯ এর ১৫ ফেব্রুয়ারি মহান এই কবি মৃত্যুবরন করেন।শায়িত হন দিল্লীতে নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার মাজারের কাছে।মাজারে অনেক মানুষ প্রতিদিন যায়।নিজাম উদ্দিন আউলিয়া আর তার আধ্যাত্বিক শিষ্য আমির খসরুর মাজার ঘিরেই মানুষের ভীড়। আবেগ নিয়ে অনেকে বিশাল বিশাল ডালা ভর্তি সুগন্ধি গোলাপ নিবেদন করেন মাজার দুটোতে।মির্জা গালিবের সমাধির খোঁজ জানেননা অনেকে।দিল্লী গেলে নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার মাজারে যাওয়া হয়।আমি আর দীনা গিয়েছিলাম একবার।সেখানে গিয়ে বেশ খোঁজাখুঁজি করতে হয়।তার পর পাওয়া যায় কবি মির্জা গালিবকে।সমাধিতে শায়িত আছেন প্রেমের কবিতা আর গজলের অমর স্রষ্টা গালিব।১৭.০৯.১৯
Leave a Reply