মহামানব
সভ্যতা-১২
সেভেরাস আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর ২৬ জন সামরিক শাসক পরপর সম্রাট হন কিন্তু কেউই বেশীদিন টিকতে পারে নাই। গৃহযুদ্ধে এক বিশৃংখল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সাম্রাজ্য দূর্বল হতে থাকে, কোষাগার রুগ্ন হতে থাকে।
অবশেষে তৃতীয় খৃষ্টাব্দের প্রথম দিকে, ডাইক্লেতিয়ান এসে রোমান সাম্রাজ্যকে দুইজন অগাষ্টাসের অধীনে, পূর্ব ও পশ্চিমে দুইভাগে ভাগ করে স্থিতিশীল করে। অগাষ্টাস বলতে রোমানরা সম্রাট বোঝাতো। পূর্বাংশের সম্রাটের নাম ছিল কনষ্ট্যানটিয়াস প্রথম।
পরবর্তীতে সম্রাটদের সাথে আরও দুইজন সিজার নিয়োগ করা হয়। সহকারী সম্রাটকে তখন সিজার বলা হতো। এই সম্রাটদের শাসনের খারাপ দিক ছিল ধর্মের নামে খৃষ্টান সম্প্রদায়কে নিপীড়ন করা। খৃষ্টানদের উপর জোর করে বহুশ্বেরবাদ চাপিয়ে দেয়া। যদি তাঁরা না মানতো তাহলে তাঁদের বন্দি অথবা হত্যা করা হতো।
তবে এতকিছুর পরেও খৃষ্টধর্মের প্রভাব কমল না বরং বাড়তে থাকল। রোমান সৈন্যদের বাঁধার মুখেও সাধারন লোকজন দলে দলে খৃষ্টান হতে লাগল।
তবে মূল সমস্যা দেখা দিল তখন, যখন ডাইক্লেতিয়ান স্বেচ্ছায় ক্ষমতা থেকে সরে গেলো। সাম্রাজ্যে আবার বাড়তে থাকে অস্থিরতা। সম্রাটেরা একজন আরেকজনের অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করতে চাইল। ফলশ্রুতিতে শুরু হল গৃহযুদ্ধ।
পূর্বভাগের সম্রাট কনস্ট্যানটিয়াসের পুত্রের নাম ছিল কনষ্টানটাইন। তিনিই রোমান সাম্রাজ্যে সবচেয়ে বেশী প্রভাবশালী হয়ে উঠে।
পশ্চিম অংশের সম্রাট ছিল ম্যাক্সমিয়ান। তাঁর পুত্রের নাম ছিল ম্যাক্সেনটিয়াস।
তিনি তাঁর পুত্রকে পাঠান কনষ্টানটাইনের সাথে যুদ্ধ করতে।
মিলভিয়ান সেতুর নিকট ম্যাক্সেনটিয়াসের আর কনষ্টানটাইনের বাহিনী মুখোমুখি হয়। এ যুদ্ধ ছিল সাম্রাজ্যের নির্ণায়ক যুদ্ধ। এ যুদ্ধের জয় পরাজয়ের উপর নির্ভর করে আছে ভবিষ্যত সম্রাটের নাম।
যুদ্ধের আগের রাতে কনষ্টানটাইন স্বপ্ন দেখলেন তাঁর সৈন্যদের ঢালে ‘কি-রো’ প্রতীক আঁকতে বলা হয়েছে। কি-রো, শব্দের অর্থ হল ক্রস চিহ্ন।
স্বপ্ন অনুযায়ী তিনি সৈন্যদের ঢালে ক্রস চিহ্ন আঁকেন। এবং এ যুদ্ধে কনষ্টানটাইন জয়লাভ করেন। ব্যাপারটা কনস্ট্যান্টাইনের মনে গভীর রেখাপাত করে।
যুদ্ধে জেতার পর অখণ্ড রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাট হয়ে যায় কনষ্টানটাইন। বাইজেন্টাইন শহরকে করা হয় সাম্রাজ্যের নতুন রাজধানী। তিনি নিজে খৃষ্টধর্ম গ্রহন করেন এবং সকল ধর্মকে সমান অধিকার প্রদান করেন। তিনি খৃষ্টানদের জন্য নির্মাণ করেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চার্চ হাজিয়া সোফিয়া। খৃষ্টধর্মে তিনি একজন ঋষির মর্যাদা পেয়ে থাকেন।
কনষ্টানটাইনের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র সম্রাট হয়। সেও খৃষ্টধর্মের একজন পৃষ্ঠপোষক হয়। কিন্তু তিনি অন্য ধর্মের প্রতি মোটেও সহানুভূতিশীল ছিলেন না। ইহুদী ও বহুশ্বেরবাদীদের অনেক নির্যাতন ও অত্যাচার করেন তিনি। অবাক ব্যাপার হল তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর চাচাত ভাই সম্রাট হলে সে আবার খৃষ্টধর্ম বিরোধী কর্মকাণ্ড শুরু করে।
সাম্রাজ্যের স্থিতিশীলতার জন্য সম্রাট থিওডোসিয়াস অবশেষে খৃষ্টধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম করে। তাঁর মৃত্যুর পর রোমান সাম্রাজ্য তাঁর দুই পুত্রের মাঝে ভাগ করে দেয়া হয়, পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্য ও পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য। এই পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যই পরবর্তীতে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য নামে দীর্ঘদিন টিকে থাকে।
কিন্তু পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্য আর বেশীদিন টিকে রইলোনা। উত্তরের বিভিন্ন বর্বর জাতি গথ, ভ্যানগথ, অষ্ট্রোগথ, ভ্যান্ডাল, হুন, স্যাক্সনদের ক্রমাগত আক্রমণ ও লুটপাটে ৪৭৬ সালে রোমের পতন হয়।
আশ্চর্যজনকভাবে রোমান সাম্রাজ্যের, শেষ সম্রাটের নাম আর প্রথম সম্রাটের নাম ছিল একই।
রোমুলাস!
কুরাইশ-১২
চোখ মেলে তাকাল মুত্তালিব।
লুপ্ত চেতনা ফিরতে একটু সময় লাগল। বোঝার চেষ্টা করল কোথায় আছে, হ্যা, বালিতে শুয়ে আছে সে!
শক্তি এতই ক্ষীণ যে শ্বাস প্রশ্বাসের প্রবাহও বালিতে কোন আচড় কাটতে পারলনা।
অতিকষ্টে উঠে দাঁড়াল সে, চেয়ে দেখল চারিদিকে! সঙ্গী সাথীরা পাশেই শুয়ে আছে মৃতের মতো। সূর্য অস্ত গেলেও গোধূলির আলোয় সব দেখা যাচ্ছে। ছোট ছোট বালিয়াড়ি আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
চেতনা লুপ্ত হওয়ার পূর্বে মুত্তালিব তাঁর উটখানি ছেড়ে দিয়েছিল। আশা ছিল উটটি যেন বেঁচে থাকে, আর সেটিকে দেখে কেউ যেন তাঁদের খুঁজে বের করতে পারে, জীবিত কিংবা মৃত!
মুত্তালিব সর্বশক্তি দিয়ে খুঁজে দেখার চেষ্টা করল তাঁর উটখানি কোথায় আছে। ছোট একাটা পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে আছে। শম্বুক গতিতে উটের পাশে গেলেন, দাঁড়িয়ে উটের রশি ধরলেন। অনুভব করলেন এ স্থানে, তাঁর পায়ের চাপে নীচের বালি সরে গেলনা। কেন সরে গেলনা! অর্থ একটাই হতে পারে।
কিন্তু এতো অসম্ভব!
নীচে তাকাল মুত্তালিব, কোন স্বপ্ন নাকি? নাকি কোন ভ্রম! পায়ের নীচে পানি! গোধূলির এ সময়টায় মরিচীকা হওয়ার কথা না। আরো সামনে তাকালেন, স্বচ্ছ পানি ছড়িয়ে পড়তে দেখলেন চারিদিকে।
সে যাত্রায় তাঁরা সবাই বেঁচে গিয়েছিল মুত্তালিবের উটের কারণে। তাঁর উটখানি হাঁটার সময় মাটির এক জায়গায় আঘাত করতেই মাটি ফেটে পানি বের হয়ে আসে। বেশ কিছুক্ষণ পরে মুত্তালিব উটের কাছে আসলে, এ পানি তাঁর নজরে পড়ে। তাঁর চীৎকার শুনে সবাই জেগে উঠে এগিয়ে যায়। পানি পান করে সুস্থ হয়ে উঠে সবাই। এরপর প্রতিটি সদস্যের মনে মুত্তালিবের যোগ্যতার ব্যাপারে আর কোন সন্দেহ থাকে না।
আরবে এক ধরনের মহিলাকে বলা হয় জ্বীন উপাসিকা। বেদুইনরা তাঁদের আধ্যাত্মিক ক্ষমতা বিশ্বাস করত এবং তাঁদের দেয়া সমাধান মেনে চলত। কুরাইশদের দলটা পৌঁছে গেল সেই জ্বীন উপাসিকার কাছে।
মহিলার সমাধান অনুযায়ী মূল্যবান জিনিসপত্রের অর্ধেক মালিকানা পেল আব্দুল মুত্তালিব আর বাকী অর্ধেক কা’বার হিসাবে গেল। কিন্তু জমজম কূপের সম্পূর্ণ কর্তৃত্বই গেল মুত্তালিবের হাতে। সবাই এ সমাধান মেনে নিয়ে মক্কায় চলে গেল।
Leave a Reply