মূল্যবোধের সামাজিক ধারণা ও আমাদের অবস্থান:
মাহমুদ রেজা চৌধুরী
এই সামাজিক কনসেপ্ট বা ধারণার নানা রকম ব্যাখ্যা আছে। ব্যক্তি বিশেষ যে যার মত করেও ব্যাখ্যা দাঁড় করাই। কোনটা সঠিক ব্যাখ্যা বা কোনটা সঠিক না। নির্ভর করে ব্যক্তি, স্থান, কাল, পাত্র এবং এর সার্বিক পরিবেশনের উপরেও। যেমন কোন দেশের বুলি হতে পারে আরেক দেশের গালি। তবে মোটা দাগে মূল্যবোধের সাথে “পজিটিভিজমের” বা “মানুষের কল্যাণ” সম্পর্ককেই বুঝতে চাই।
পজেটিভিজম, (positivism) কথাটার প্রতিশব্দ ধ্রুববাদ, প্রত্যক্ষবাদ বা প্রামাণিকবাদ। এটাকে একই সাথে দর্শন এবং নতুন একটা ধর্মপ্রণালীও বলা যায়। এই মতবাদের উদ্ভাবক এবং প্রচারক হলেন বিশ্ব বিখ্যাত ফরাসি দার্শনিক অগস্ত কোঁত। (১৭৯৮-১৮৭৫)।
রাজতন্ত্র এবং পুরোহিততন্ত্রের ঘোর বিরোধী এই মানুষ ১৮১৮ সালে বিখ্যাত চিন্তাবিদ সেন্ট সাইমনের সেক্রেটারি হন। বেশ কয়েক বছর ধরে তাঁর কাছে নানান বিষযয়ে জ্ঞান আহরণ করার পর দুইজনের মধ্যে অনেক বিষয়ে মতভেদ হওয়ায় কোত, সাইমনের সংস্রব ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে ছয় খন্ডে বিভক্ত ফরাসি দার্শনিক আগস্ট কোঁতের বিখ্যাত গ্রন্থ, Philosophy positive প্রকাশিত হয়
১৮৪২ সালে। এতে তিনি বললেন, যুক্তিবাদী দার্শনিকের কাছে স্বর্গ, আত্মা, অমরতা অতীন্দ্রিয় লোক এসবের কোন অস্তিত্ব নাই। চারপাশে যা ঘটছে তার বাইরে আমরা আর কিছুই জানিনা। পর্যবেক্ষণ,(Observation) পরীক্ষা (Experiment) এবং উপমা (Comparison) এই তিনটা পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা জগৎকে দেখি এবং বুঝি, বিভিন্ন ঘটনা এবং তাদের মধ্যকার সম্পর্ক অনুধাবন করবার চেষ্টা করি।
বিজ্ঞান বিষয়ে মানুষের ধারণা তিনটা অবস্থার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছে ধর্মপ্রধান(Theological), দর্শন প্রধান( Metaphysical) ও প্রত্যক্ষধর্মী স্তর (Positive or Scientific)। প্রথম অবস্থায় মানুষ যখন বিশ্ব ব্যাপার বুঝতে চায়, তখন প্রকৃতির সমস্ত কাজের এক একটা সচেতন ইচ্ছা বিশিষ্ট কর্তার (দেবতার) কথা কল্পনা করে। এরপরে আসলো দর্শন অবস্থা। এই অবস্থায় মানুষ প্রকৃতির কাজের পেছনে একটা নৈব্যক্তিক সত্তার কথা কল্পনা করে নেয়।
এই সত্তাকে কোত বলেছেন Force বা Power. এরপর প্রত্যক্ষধর্মী স্তর। দৈবী অথবা কোন নৈব্যক্তিক শক্তির অস্তিত্ব এখানে অনুপস্থিত। এই অবস্থায় বিজ্ঞান বিশ্বাস করে অপরিবর্তনীয়, অপ্রতিরোধ্য প্রাকৃতিক নিয়মের অস্তিত্বে।
দার্শনিক আগস্ট কোঁতের মতে, মানুষের মানসিক বিবর্তনও এই একই পথ ধরে অগ্রসর হয়েছে। প্রথম অবস্থায় দৈবীশক্তিকে, পরবর্তী অবস্থায় নৈব্যক্তিক তত্ত্বকে আশ্রয় করে মানুষ সব কিছুকে ব্যাখ্যা করতে চায়, পরিশেষে সে বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক নিয়মের সাহায্যে জীবন ও জগতকে বুঝতে চেষ্টা করে। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, আদিম অবস্থায় বা পৌরাণিক যুগে মানুষ আগুনকে দেবতা ভাবে, দার্শনিক স্তরে বুঝতে পারে আগুনের দাহিকা শক্তি আছে বলেই সবকিছু দগ্ধ হয়, পজিটিভ স্তরে মানুষ আগুনকে রাসায়নিক কার্যবিশেষের ফল বলে ভাবতে শেখে। দার্শনিক কোঁতের মতে, পৃথিবীর সবকিছুই নিয়ম মেনে হয়। আকাশে মাঝে মাঝে যে ধুমকেতুর উদয় হয় বা মানুষের মনে যখন যে ইচ্ছা জাগে সবকিছুই নিয়মের অধীন। বিজ্ঞানের বিবর্তন এবং মানুষের মনোবিবর্তন একই ধারাকে আশ্রয় করে ঘটেছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। প্রত্যক্ষবাদ প্রচারের পর ধর্মযাজকরা কোঁতকে নাস্তিক এবং পাষণ্ড হিসাবে চিহ্নিত করলেন, তার নামে নানান কুৎসা প্রচার করা হতে লাগলো। সে ইতিহাসের আরেক গল্প। তবে অনেকের মতেই মানবসমাজকে উন্নতির পথে নিয়ে যাওয়াই ছিল কোঁতের মূল লক্ষ্য, দুঃখীর দুঃখ মোচনকে মানুষের জীবনের প্রধান কর্তব্য বলে উল্লেখিত দার্শনিক মনে করতেন।
১৮৪৫ এ কোঁতের জীবনে নতুন এক নারীর আবির্ভাব ঘটে। সেই নারীর সাথে তাঁর পরিচয়ের পর অনেক ঐতিহাসিক উল্লেখ করেছেন, কোঁতের মনের ভাব পরিবর্তিত হতে থাকে। তিনি মানুষের জীবনে প্রেমের মাহাত্ম্য নতুন করে উপলব্ধি করেন। পরবর্তীত মানসিক পরিস্থিতিতে ১৮৫১-য় রাজনীতি ও সমাজ দর্শন শাস্ত্র সম্পর্কে তাঁর বিখ্যাত বই, “The positive Polity” এর প্রথম ভাগ প্রকাশিত হয়। এই বইতে তিনি বললেন যে, শুধু বুদ্ধিকে আশ্রয় করে মানুষের পক্ষে বাঁচা সম্ভব নয়, প্রেম অনুভূতি আর ভক্তি জীবন চলার পথে অপরিহার্য। তিনি বললেন, পরোপকারেই জীবনের সার্থকতা। মানুষের জীবনের প্রধান কর্তব্য মানুষের সেবায় ব্রতী হওয়া। এর ব্যাখ্যায় দার্শনিক বলেন, মানবজাতিকে প্রত্যক্ষ দেবতা জ্ঞান করে সেই মানুষের সেবা করা উচিত। এই দেবতাকে তিনি চিহ্নিত করেন
‘পরম সৎ’ হিসাবে।
যাই হোক, কোত প্রচারিত প্রত্যক্ষবাদ সারা পৃথিবীতে চিন্তাশীল মানুষের মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এই মতবাদ ১৯ শতকের দ্বিতীয়ার্থে একাধিক বিশিষ্ট বাঙালিকেও প্রভাবিত করে বলেও জানা যায়। উল্লেখিত কথাগুলি মূল্যবোধকে বোঝার ক্ষেত্রে একটা প্রাথমিক স্তর।
শিরোনামেই বলেছি এটা একটা সামাজিক কনসেপ্ট। এই বিষয়টাকে বুঝতে এর বিভিন্ন স্তর সম্পর্কেও আমাদের একটা প্রাথমিক ধারণা আছে। যেমন মূল্যবোধের বিভিন্ন স্তরায়ন। ব্যক্তিগত মূল্যবোধ, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, মানবিক, নৈতিক, বিচারভিত্তিক। এই সবকিছুর সাথে ব্যক্তির ব্যক্তিগত মূল্যবোধের একটা ছবি আছে। সেই অর্থে মূল্যবোধের কার্যকরী যাত্রা শুরু ব্যক্তি থেকে।
ব্যক্তির ব্যক্তিগত মূল্যবোধ যুক্ত হয়, ব্যক্তি তার জীবনকে কিভাবে দেখছেন!
অন্য কথায় বলি, ব্যক্তির নিজস্ব জীবন বোধ। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের বিভিন্ন রকম ব্যক্তিগত মূল্যবোধ আছে। এই ব্যক্তিগত মূল্যবোধের সূচনা পরিবার। তাই এই ক্ষেত্রে পরিবারের গুরুত্ব অনেক ব্যক্তির যেকোনো ধরনের মূল্যবোধ গঠনে সহায়ক।
জীবনের সংজ্ঞাও আমাদের একেকজনের কাছে একেক রকম, তবুও এর একটা সামগ্রিক চিত্র আছে। চিত্রটা জীবন বলতে, মানুষের সামাজিক জীবনের গুরুত্ব। সেই সামাজিক জীবনে আমাদের কোন কিছুই একার ইচ্ছায় নির্ভর করে না। যেমন আমরা যখন পরিবারের মধ্যে থাকি বাবা-মায়ের সাথে, তখন আমাদের বাবা-মায়ের জীবন বোধ আমাদের উপর একটা প্রভাব ফেলে। তারপর যখন আমরা নির্দিষ্ট একটা এলাকায় বসবাস করি, সেই চারপাশের একটা জীবন বোধ আমাদের উপর প্রভাব ফেলে। এরপর স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পরিশেষে কর্মক্ষেত্র। এর প্রতিটা স্তরে আমাদের মূল্যবোধের পরিবর্তন হয়, স্থান কাল এবং পরিবেশের উপর নির্ভর করে। পরিবর্তিত মূল্যবোধের বিচার একেক জনের কাছে আবারো একেক রকম। তবে একটা বিষয় লক্ষ্য করার যে, “একার” সিদ্ধান্ত বা ইচ্ছায়
পরিবারে যেমন চলতে পারিনা তেমনি সমাজেও না। অর্থাৎ এখানে একটা “ইনক্লুসিভ” চিন্তা ও মূল্যবোধের গুরুত্ব থাকে। এটাকেও বলা যেতে পারে এক ধরনের পজিটিভিজম। এর সাথে নৈরাজ্যবাদের সম্পর্ক নাই। নৈরাজ্যবাদকে আমরা মূল্যবোধ হিসাবে গ্রহণ করতে পারি না। আলোচনার ক্ষেত্রে নৈরাজ্যবোধ যদি আলোচিত হয় সেটা মূল্যবোধের নেতিবাচক চিত্রের কথাই বলবে।
তবুও প্রত্যক্ষ করি, বর্তমান বিশ্বে মানুষের মূল্যবোধের ইতিবাচক দিক সরে গিয়ে এক ধরনের সন্ত্রাসবাদী চিন্তার আগুনেই ঘি ঢালছে। নৈরাজ্যবাদের প্রতি সংবেদনশীল অনেক লেখকরা প্রাচীনকাল থেকেই এই মতাদর্শের উৎপত্তি দেখতে চেয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে প্রাচীনকাল থেকে যা পাওয়া যায় তা হল শোষণ এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের প্রতি মানুষের ক্ষোভ এবং রাষ্ট্রের অপশক্তিকে উচ্ছেদ করতে গিয়ে মানুষ যখন একটা হতাশায় ক্লান্ত হয় তখন সে নৈরাজ্যবাদের দিকে ঝুঁকে যায়। মূল্যবোধের এই জায়গাটাতে সমাজের মানুষের এক ধরনের অসহায়াত্ব এবং হতাশাই প্রত্যক্ষ করি। নৈরাজ্যবাদের জন্ম যেমন হতাশা থেকে, জীবন পথে পজিটিভ ভাবনার জন্ম তেমনি আশাবাদ থেকেই। এই আশাবাদের অন্য নাম, মূল্যবোধ।
আজকের আলোচনায় “মূল্যবোধকে” একটা পজিটিভিজমের স্তর বলে মনে করছি। সেখান থেকে দেখতে পাচ্ছি সমাজ এবং রাষ্ট্রে ক্রমেই আমাদের মূল্যবোধ বলতে যে মানুষের পক্ষে কাজ করা, মানুষের বন্ধু হিসাবে কাজ করা, একে অন্যের প্রতি সহনশীলতার দৃষ্টান্ত দিয়ে কাজ করা। পরমত সহিষ্ণুতার পক্ষে কাজ করা। সমাজ এবং রাষ্ট্রে প্রতিটা মানুষের অধিকার এবং ন্যায্য পাওনার পক্ষে কাজ করা। এই মূল্যবোধ এবং সততা ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। ছুটছি কিসের পিছনে? যে বস্তুর দিকে আমরা দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছি, সেই বস্তূই কেবল আমাকে শান্তি এবং স্থিরতা দিচ্ছে কিনা! ভাবায় বৈকি।
আমাদের অর্থনীতি এবং রাজনীতির ক্ষেত্রে আমাদের “অন্যায়” এত বেশি নৈরাজ্যবাদের প্রতি কাজ করছে, যেখানে দাঁড়িয়ে মানুষের মানবিক মূল্যবোধকে আজকাল আর দেখা যায় না কোথাও কাজে বা চিন্তায় কাজ করতে। সমাজে এখন আমাদের মূল্যবোধ,যেভাবেই হোক “টিকে” থাকতেই হবে যেকোনো কিছুর বিনিময়ে।
যেভাবেই হোক, নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হবে। যেভাবেই হোক, নিজে বাঁচবো সবার আগে। যেভাবেই হোক, ক্ষমতাসীনদের সাথে সুসম্পর্ক রাখতেই হবে। যেভাবেই হোক, ক্ষমতাকেই ধরে রাখতেই হবে। যেভাবেই হোক, ইতিহাসের নতুন নতুন ব্যাখ্যা হাজির করা হবে ইতিহাসকে বিকৃত করতে। যেভাবেই হোক, দুর্নীতিকেই সুনিতি করে এর মধ্যেই বসবাস করা। এটাই আমাদের আজকের মূল্যবোধ বা জীবন বোধ, যাই বলি না কেন। এটাও নাগরিক সমাজ এবং নাগরিক ঐক্যকে বিভক্ত করে দিচ্ছে। আমাদের মূল্যবোধ ক্রমান্বয়েই ব্যক্তি স্বতন্ত্রবাদের দিকেই ঝুঁকে যাচ্ছে। বোধ এবং বোধিবিজ্ঞান থেকে আমরা দূরে সরে যাচ্ছি।
মূল্যবোধের চলমান সামাজিক ধারণায় অসামাজিক এবং অন্যের অকল্যাণের চিন্তা চেতনার ক্ষেত্রেই আমাদেরকে বেশি উৎসাহিত করে। আমরা এখন মূল্যবোধ বা ভ্যালুজ বলতে সামাজিক কি ইতিবাচক সংস্কৃতি বা রাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করি, তা বোঝা খুবই কঠিন। সামাজিক ইতিবাচক দর্শন এবং চিন্তা সমাজের বিভিন্ন শত্রুদের হাতে পড়ে এর গায়ে কাঁদা, ময়লা মেখে একাকার। এমন একটা অস্বস্তিকর পরিবেশে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ এখন অল্প কিছু অমানুষের হাতে বন্দি।
আমাদের আজকের সামগ্রিক মূল্যবোধ একটা নৈরাজ্যবাদ সমাজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার কাজে ব্যস্ত। কখনো চিৎকার করে কখনো বা নিরবে। অনেকের ধারণা, এইসব নিয়ে চিন্তা করে বা চেঁচামেচি করে বা লিখে অথবা বলে কি হবে? পরিবর্তন করা যাবে কি? পরিবর্তনের বিষয়টা দোকানে গিয়ে চকলেট কেনার মত না যে, পয়সা দিলাম আর হাতে নিয়ে বাসায় ফিরলাম। এটা মূলত জমিনে বটগাছ রোপনের মতো, যা বীজ থেকে বৃক্ষ হতে সময় নেয়। খুব ধীরগতিতে অগ্রসর হয় এর প্রসার। এর জন্য প্রত্যেককে প্রত্যেকের জায়গা থেকেই পরিবর্তন এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য যার, যার শক্তি সমর্থ্য মতোই কাজ করতে হয় আমাদের। আমরা অধিকাংশরা সেটা করি না। এটাও আমাদের “মূল্যবোধের” অপক্ষয়ের দৃষ্টান্ত।
অনেক ভালো কাজের জন্য আমরা সাধারণত ঘড়ে কপাট মেরেই বসে থাকি। যখন সেটা অর্জন হয়, তখন আবার সেটা নিয়েই পথে নামি, “আমরাই এনেছি এই পরিবর্তন” বলে চিৎকার করি। যেমন, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা যদি বলি।
অনেকেই আমরা এর বিরোধিতাও করেছি, আশেপাশে নাই, অবস্থান নিয়ে নিজেকে রক্ষা করেছি। কিন্তু সেই স্বাধীনতা অর্জনের পর তার প্রাপ্তি টুকু কিন্তু আমরা ভোগ করছি। “ত্যাগে” নাই, তবে “ভোগে” আছি। আমাদের মূল্যবোধ এখন এটাই। সে কারণেও বলা সমাজে আমাদের অনেক দরিদ্রতার সাথে মূল্যবোধের দরিদ্রতায় গৃহ হারা না হলেও বিবেক ও মনুষ্যত্বহারা আধুনিক রোবটের হাতে।
মানুষের মূল্যবোধ ধারণায় যে পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ এবং উপমার গুরুত্ব অধিক সেদিক থেকেও আমরা সরে যাচ্ছি আমাদের চিন্তার জগতে। সমাজ এবং রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে, ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবন গণ্ডিতে আমাদের মধ্যে সহনশীলতা এবং পর্যবেক্ষণের গুরুত্বকে আমরা হালকা করে দেখছি। মূল্যবোধের অবক্ষয় বলে আমরা চিৎকার করছি, কিন্তু এর প্রতিকারে ব্যক্তিগত থেকে শুরু করে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের করণীয় কাজগুলি একেবারেই মাথায় রাখছি না।
জীবন এবং জীবনের মূল্যবোধ সম্পর্কে পৃথিবীর বিভিন্ন দার্শনিকদের মতামত পাঠ করলেও বোঝা যায়, অনেক দার্শনিক সহমত প্রকাশ করে বলেন, মানুষের মূল্যবোধ গঠনে ধর্ম এবং ধর্মীয় দর্শনেরও ভূমিকা আছে। সমাজে মানুষ তার জীবন বোধ এবং মূল্যবোধের চর্চায় পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ, এবং উপমার ক্ষেত্রে ধর্মীয় নীতি আদর্শ এবং এর সামাজিক ইতিহাস চর্চাকেও বাদ দিয়ে করতে পারে না। তাই আমাদের সামগ্রিক জীবনবোধ, মূল্যবোধ এর সামাজিক সব ইন্সটিটিউশন এবং শিক্ষা ব্যবস্থাপনা,এর বৃহত্তর সামাজিক ইতিহাসের পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষণের মাধ্যমেই আমাদের মূল্যবোধের ভবিষ্যৎ ইতিবাচক সম্ভাবনা প্রসারিত হতে পারে।
আশা এবং স্বপ্ন এটাই। সহজ ভাষাতে এও বলা যায় যেই বোধে কোন পজেটিভ বার্তা নাই তার সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং নৈতিক কোন মূল্য নাই। এটাকে “মূল্যবোধ” বলব না আমরা।
Email. mahmud315@yahoo.com
Leave a Reply