একটি
হতাশা ও মানসিক চাপ একটি মানসিক সমস্যা। এটি আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ নেই যার জীবনে কোন না কোন হতাশা বা মানসিক চাপ নেই। আপনি আমি- সবাই জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে ছোটবড় হতাশার সম্মুখীন হয়েছি। যখন আমাদের চাওয়া পাওয়ার মধ্যে চরম ব্যত্যয় ঘতে তখনই আমরা হতাশ হয়ে যাই আর মানসিক চাপে বিপর্যস্ত হই।
কিন্তু প্রশ্ন হলঃ আমাদের জীবনে হতাশার মাত্রা কতোখানি? আর এটি কতই বা ভয়ঙ্কর? এর কারন ও ফলাফলই বা কি? কিভাবে হতাশা থেকে মুক্ত হওয়া যায়?
মনোবিজ্ঞানের ভাষায়, হতাশা একটি সাধারণ মানসিক প্রতিক্রিয়া, যা রাগ অথবা বিরক্তির সাথে সম্পর্কিত।
হতাশা দুই ধরনের হয়: অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক। অভ্যন্তরীণ হতাশা সাধারনতঃ ব্যক্তিগত লক্ষ্য, আকাঙ্ক্ষা, সহজাত প্রয়োজনগুলি পূরণ করার ক্ষেত্রে বাধা থেকে মনের মধ্যে দেখা দিতে পারে।
হতাশার বাহ্যিক কারণগুলি একজন ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরের পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল; যেমন একটি শারীরিক বাধা, একটি কঠিন কাজ, বা সময় নষ্ট করার উপলব্ধি। ধরুন, আপনি একটি কঠিন রোগে আক্রান্ত হলেন। অনেক ডাক্তার দেখাচ্ছেন, ওষুধপত্র খাচ্ছেন কিন্তু ভাল হচ্ছেন না। তখন হতাশা আপনাকে চেপে ধরবে। আপনি চাইলেও হতাশার মানসিক চাপ থেকে সহজে বেরিয়ে আসতে পারবেন না।
আবার ধরুন, আপনি কিছু চাচ্ছেন তীব্রভাবে কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও আপনি সফলতা পেলেন না অর্থাৎ আপনার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারলেন না। তখন আপনার মধ্যে হতাশা কাজ করবে। অথবা ধরুন, আপনি কাউকে প্রচণ্ড ভালবাসেন কিন্তু আপনার ভালবাসার মানুষ আপনার সাথে প্রতারনা করেছে বা প্রত্যাখ্যান করেছে। তখন আপনি হতাশায় ডুবে যেতে পারেন; এমনকি জীবন আপনার কাছে অর্থহীন মনে হতে পারে। আপনার কাছে মনে হতে পারে এ জীবন রেখে লাভ কি? এমনকি আপনি আত্মহননের কথাও ভাবতে পারেন। এর মানে হচ্ছে, আপনি চরম হতাশায় ডুবে আছেন অথবা আপনি হতাশা থেকে মুক্ত হতে পারছেন না।
হতাশা মানুষকে শারিরিক ও মানসিকভাবে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিতে পারে। এর ফলে মানুষের কর্মক্ষমতা কমে যায় এবং মানুষ শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যেতে পারে। এমনকি মানুষ একদম একা হয়ে যেতে পারে কিংবা তীব্র হতাশার অন্ধকারে বিলীন হয়ে আত্মহননের কথাও ভাবতে পারে।
মানুষের জীবন হল বহমান নদীর মত। কখনও জোয়ার, কখনো বা ভাটা। তাছাড়া জীবনে কোনকিছুই চিরস্থায়ী নয়। তাই হতাশা মনের মধ্যে পোষণ করে রাখা উচিত নয়। এর থেকে কিভাবে মুক্তি লাভ করা যায় সেজন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
কিন্তু কিভাবে এটি সম্ভব?
প্রথমতঃ আপনাকে সবসময় পজিটিভ ভাবনার মধ্যে থাকতে হবে।
ভাবতে হবে যে, আপনি আপনার নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেছেন। হয়ত ভাগ্য আপনাকে একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এ থেকে বেরিয়ে আসার পদ্ধতিগুলো নিয়ে ভাবতে হবে এবং এটি বাস্তবায়িত করতে হবে যে কোন উপায়ে। আর এখান থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে ভেবে নিন যে, এটি আপনার ভাগ্যে ছিল, যেটা সাময়িক। মনে রাখবেন,এ জীবনে কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয়। সময় সবকিছু ধীরেধীরে পালটে দিবে। কারন যে সূর্য সকালে পূর্বদিকে উদিত হয় সেটি আবার বিকালে পশ্চিমদিকে অস্ত যায়। এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
দ্বিতীয়তঃ আপনি যদি ধার্মিক হন, তাহলে চেষ্টা করে যান পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে। সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রাখুন আর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুন। আর বেশি বেশি এবাদতবন্দেগিতে মনোনিবেশ করুন। সময় সবকিছু নিশ্চয়ই বদলে দিবে। ধৈর্য ধারন করুন। সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয়ই আপনাকে পরীক্ষা করছেন ও তিনি আপনার পাশেই আছেন । আপনাকে ধৈর্য পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হতে হবে একদিন।
তৃতীয়তঃ আসলে আপনার মানসিক নিয়ন্ত্রন আপনার নিজের হাতেই। কোন ডাক্তার বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আপনার সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না। কারন, জীবন আপনার, সমস্যাও আপনার। তাঁরা শুধু পথ দেখাতে পারেন কিন্তু চাইলে আপনি আপনার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেন। শুধু চেষ্টাটাই আসল। তাই পরনির্ভরশীল না হয়ে আত্মনির্ভরশীল হতে চেষ্টা করুন। আপনি বিকল্প চিন্তা করুন, পথ পেয়ে যাবেন। জীবন একটাই। তাই কারো জন্য না ভেবে নিজের জন্য আগে ভাবুন। ভয় পাবেন না, পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শিখুন। দৃঢ় সংকল্প বজায় রাখতে পারলে সফলতা আপনার আসবেই একদিন।
চতুর্থতঃ নিজেকে ভাল কাজে ব্যস্ত রাখুন। সৃজনশীল কাজে মনোনিবেশ করুন। যে কাজগুলো আপনার মনে প্রশান্তি দেয়, সেগুলো করুন। যেমন ধরুন, এবাদতবন্দেগি করা, বই পড়া, খেলাধুলা করা, গান শোণা, ছবি আঁকা, ঘুরে বেড়ান বা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া, যেগুলো করলে আপনার মন ভাল থাকে, সেই কাজগুলো বেশি বেশি করুন। আপনার একান্ত নিজস্ব সখ পূরনের জন্য চেষ্টা করুন। আপনার সবচাইতে কাছের মানুষ ও আপন জনের সাথে মন খুলে কথা বলুন; আপনার কষ্টের কথাগুলো শেয়ার করুন, ফামিলি নিয়ে বাইরে ঘুরে আসুন, দেখবেন আপনার মন ভাল হয়ে গেছে, আর হতাশা দূর হয়ে গেছে ধীরে ধীরে। আপনি ঠিক আগের মত সুস্থ জীবন ফিরে পাবেন। আপনার জীবন অনেক মূল্যবান, অযথা হতাশা মনের মধ্যে পোষণ করে অশান্তি বাড়িয়ে লাভ কি?
পঞ্ছমতঃ আপনার জীবনে হারানোর কিছু নেই। অতীতকে ভুলে যান। বর্তমান নিয়ে ভাবুন। একবার সময় চলে গেলে তা আর ফিরে আসবে না। এক সময় আপনি শিশু ছিলেন। আর চাইলেই আপনি আর শৈশবে ফিরে যেতে পারবেন না। তাই না পাওয়ার বেদনা জীবন থেকে ঝেড়ে ফেলুন। সময়ের চক্রে আপনি আবার ভাল সময় ফিরে পাবেন।
উপরের সব টিপস্গুলো সবই আমার একান্ত ব্যক্তিগত, যা আমার জীবনে কাজে লেগেছে। তাই এগুলো আমি সবার সাথে শেয়ার করলাম। আপনি চাইলে, কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে আরও ভাল পরামর্শ নিতে পারেন। যা আপনার জীবনে কাজে আসবে, এবং আপনাকে নতুনভাবে চলার পথ দেখাবে। মনে রাখবেন, কোন চিকিৎসা নেয়া দোষের কিছু নয়, বরং এটি একটি সফলতার অংশ।
আপনি যদি ভেঙ্গে পরেন, তাহলে হতাশা থেকে কখনোই মুক্তি পাবেন না।
তাই বাঁচার লড়াইয়ে জিতে যান, হারবেন না। হতাশ হবেন না, হতাশামুক্ত সুস্থ জীবন যাপন করুন।
Leave a Reply