মুনাজাত
মিঞা মাহবুব
………………..
প্রভু
এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের একক মালিক তুমি
নিরাকার ।
দিব্যজ্ঞানে বেষ্টন করে আছো মহাবিশ্ব, অণু-পরমাণু, বস্তু জগত, জীব জগত, আলো-বাতাস এই প্রকৃতি,
রাশি রাশি গ্রহ-নক্ষত্র খচিত আকাশ,
সবই রেখেছো তুমি তোমার দৃষ্টিগোচরে
একপলকে দৃশ্যমান সব আছে তোমার অনুভবে ।
তুমি বিরাট, তুমি অসীম, তুমি অনন্ত তুমি মহামহিম,
হে আমার মালিক, হে আমার পরওয়ারদিগার,
অতি ক্ষুদ্র আমি, অতি তুচ্ছ আমি
তোমার দরবারে তুলেছি দু’হাত
শোন আমার ফরিয়াদ
কবুল করো মুনাজাত।
জীবকুলের সেরা শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে যখন
পাঠিয়েছো তুমি আমায় মানুষরূপে
এই ভবে, – তবে ওগো দয়াময় –
আমায় তুমি করোনা অমানুষ,
মানুষের ভীড়ে আমি যেন হতে পারি
মানুষ,
পূর্ণ করে দাও অন্তর আমার
প্রেমাস্পদ জ্যোতিতে
ধন্য করে দাও বিবেক আমার
ন্যায় – অন্যায় চিনিতে
আলোকিত করে দাও জ্ঞান আমার
আঁধার অগ্যতা সরাতে,
এই মনের যত হিংসা-ক্রোধ-
বিদ্ধেষ- ক্ষোভ,
দুরিভুত করে দাও সব – চিরতরে ।
তোমার সৃষ্টির চারিদিকে কত রূপ,
কত রস কত ঘ্রাণ কত প্রাণ
কত বৈচিত্রে গড়া প্রকৃতি,
কী উচ্ছ্বাস আনন্দে উদ্বেলিছে সমস্ত সৃষ্টি, কী প্রোজ্জ্বল – উচ্ছল ধরণী
কত রহস্য, কত প্রশ্ন, কত উত্তর পেতে
উন্মন আমার এই তৃষিত অন্তর,
চোখে আসে ঘোর, সন্মোহন ধ্যানে আচ্ছাদিত মন উতলা অধীর,
তবুও তোমারে চিনিতে পারি না প্রভু !
কী করে চিনিব আমি তোমারে
আমার এই ক্ষুদ্র জ্ঞানে,
কী অসীম ব্যপ্তি তোমার
কেমনে আঁকিব তোমায় আমি মননে!
প্রকৃতির সর্বত্রে পাই তোমার পরশ,
প্রকৃতি রূপে বিরাজমান তুমি – সর্বত্রে ।
হে অসীম
এই চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র খচিত সৌরজগত, তার উপর পরতে পরতে
লক্ষ-কোটি সৌরজগতে বেষ্টিত গ্লাক্সিজগত, এমন কোটি কোটি গ্লাক্সিতে ভরা –
যোজন যোজন আলোকবর্ষ মাইল দূরে অবস্থিত দৃষ্টির অগোচরে
কেমন করে শূণ্যে ধরে রেখেছো নিঃসীম এই বিশ্বরে
তারই মধ্যে সামান্য জলবিন্দুর মত
রেখেছো পৃথিবীরে।
কী অবাক বিস্ময় – প্রভু !
কী অবাক বিস্ময় তুমি !
কী অবাক বিস্ময়ে ভরা তোমার অস্তিত্ব !
কী প্রগাঢ় আলিঙ্গনে
কী মায়ামুগ্ধ বেষ্টনে
কী অসীম প্রজ্ঞা-জ্ঞানে ধরে আছো সব
নির্ভুল জ্যামিতিক জাল বুনে থরে থরে
বুঝি সাজাইছো সাত আসমান
তার উপর রেখেছো বুঝি
তোমার সিংহাসন ?
আজ এ-কী হলো আমার ?
এ-কী আবেশে উতলা হচ্ছে মন
এ-কী ধ্যানে নিমগ্ন আমার অন্তর চোখ
এ-কী উচ্ছ্বাসে দুলছে হৃদয়
আমি উন্মন – অস্থির ব্যকুল,
রাত যত হচ্ছে গভীর –
ক্রমে যেন আমি হারাচ্ছি নিজেকে
ডুবে যাচ্ছি অতলে, অসীম থেকে অসীমে, অনন্ত পাথারে,
ওগো প্রভু, ওগো মহামহিম দয়াময়,
শক্তি দাও তুমি আমায়
নিজেকে আমি রাখতে পারি যেন স্থির,
আমাকে তুমি জড়াইয়া লও
তোমার আদরে রহমতের ছায়া তলে,
আমার অন্তরে দাও তোমার
কুদরতি পরশ,
আমার চোখে দাও আলোর প্রভা
আমি যেন দেখতে পাই সপ্ত মন্ডল
তোমার অস্তিত্বের সামিয়ানা ।
প্রভু,
জানি না কত লক্ষ-কোটি বছর আগে
পৃথিবীতে পাঠিয়েছো মানুষ,
মানুষের প্রয়োজনে মানুষই সৃষ্টি করেছে বিভেদ,
ধর্মের নামে তোমাকে করেছে রূপান্তর, জানি না আমি প্রভু
সঠিক কোন পথ
তোমারে খুঁজতে গিয়ে মানুষ
ধর্মের নামে
আবিষ্কার করেছে হাজার পথ,
তবে কী সব পথের গন্তব্য এক ?
এক বিন্দুতে এসে কী মিলছে সব ?
সকলের প্রাপ্তি কী এক ?
দয়াময়
সঠিক যেই পথ
সেই পথের দাও তুমি আমায় দিশা
ধর্মান্ধতার থেকে রক্ষা করো
আমায় তুমি প্রভু,
দূর করে দাও তুমি আমার অজ্ঞতা
দাও জ্ঞানের কিঞ্চিৎ ছিটেফোঁটা
মানুষেরে ভালোবেসে যেন
তোমার কৃপা পাই ।
তোমার কাছে চাই না আমি
অঢেল ধন- দৌলত
বাঁচার জন্যে যতটুকু প্রয়োজন
ততটুকুই চাই,
চাই না আমি হুর-পরী
চাই তোমার দিদার ।
……….১৬/০৫/২০২২ ইং
Leave a Reply