” ঘুরে এলাম AIIMS”
দিল্লিতে চিকিৎসা করব এটির কোন পরিকল্পনা ছিল না। মন্ত্রী ভাতিজার ব্যস্ততা এবং দিল্লিতে তার অনুপস্থিতি সময় আমাকে তাড়া দিলো AIIMS এর চিকিৎসা নিতে। ভাতিজার নির্দেশের তার লোক জন AIIMS এ আমার চিকিৎসা ব্যবস্থা করলো। AIIMS (ALL INDIA INSTITUTE OF MEDICAL SCIENCE) এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থার কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতার বর্ণনা আজকের পোস্টের তুলে ধরছি।
ভারতকে বৃহত্তর গনতন্ত্রের দেশ বলে আমরা জানি। এদেশে গনতন্ত্রকে শুধুমাত্র নির্বাচন বা ভোটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনি। গনতন্ত্র শুধুমাত্র নির্বাচন ও ভোটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার বিষয়? এখানকার গনতন্ত্র সাধারণ জনগণের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের দেশে জনগনের মৌলিক অধিকার নিয়ে আলোচনা বা লক্ষ্য রাখার বিষয়ে আমরা মাথা ঘামাই না বা ঘামাইলে কতটা আন্তরিক । যে কোন একটি শক্তি গনতন্ত্রকে শুধুমাত্র ভোটের মধ্যেই রাখার জন্য সদা তৎপর। দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঘুষ দুর্নীতিতে ভরপুর। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ক্ষেত্রে যান সেখানে গনতন্ত্র দুর্নীতির মহা আক্রমণে আক্রান্ত হয়ে আইসিইঊ তে মৃত প্রায় অবস্থায় রয়েছে। সরকারি হাসপাতালের সেবা ও দুর্নীতি নিয়ে রাজনীতিবীদরা, বুদ্ধিজীবী সবাই নিরব। এ বিষয়ে তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের তেমন কোন আলোচনা আমরা শুনতে পারি না। সংবাদ পত্র বা ইলেকট্রিক মিডিয়া বাঘা বাঘা সাংবাদিক ভাইদের সাংবাদিকতা সেখানে অকার্যকর। প্রতিবছর হাজার হাজার লোক চিকিৎসার জন্য কেন ভারতে যাচ্ছে? আমাদের দেশের সরকারি হাসপাতালে সাধারণ জনগণের সুচিকিসা পাচ্ছে না বিধায় যাদের সামর্থ্য আছে তারা প্রতিবেশী দেশের প্রাইভেট হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছে। যারা ধনী তারা তো ব্র্যান্ডেড দেশের ব্র্যান্ডেড হাসপাতালে চিকিৎসা ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য সিঙ্গাপুর বা থাইল্যান্ড যাচ্ছেন। দেশের গনতন্ত্রের সাধারণ আয়ের জনগণ চিকিৎসার জন্য কোথায় যাবে?
AIIMS ভারত সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান। ভারতের প্রতিটি জনগণ বিনিমূল্যে চিকিৎসা পায় AIIMS এর সেবাদান পদ্ধতি তাই প্রমাণ করে । ফ্রী বলে আমাদের দেশের সরকারি হাসপাতালের মত সেবা না। এখানে দাড়োয়ান থেকে শুরু করে মেডিক্যাল এসিস্টান্ট , নার্স , জুনিয়র ডাক্তার থেকে প্রফেসর ডাক্তার সবার দায়িত্ব বোধ আছে। এক্স রে টেকনিশিয়ান, ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান কারও চোখে মুখে কোন বিরক্তিবোধ দেখলাম না। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও রোগীর সংখ্যার যদি তুলনা করি তাহলে আমাদের দেশের সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল গুলো এটির ধারের কাছে নেই।
আমাদের দেশের সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে ঢুকলেই একটি সুপরিচিত ঘ্রাণ নাসিকা ইন্দিয়ে আপনাকে স্বাগত জানায় হাসপাতালের পক্ষ থেকে। প্রতিদিন কয়েক হাজার রোগী ও দর্শকের আসা যাওয়া AIIMS এ কিন্ত কোন প্রকার গন্ধ আপনার নাসিকতন্ত্রে স্বাগত জানাবে না , এমনকি টয়লেট গুলোও দুর্গন্ধ মুক্ত। শুধুমাত্র উন্নত ব্যবস্থাপনা ও সুন্দর মন মানসিকতার জন্য এটি সম্ভব হয়েছ। এখানকার ব্যবস্থাপনার কেহ উপরি, টিপস বা ঘুষ প্রত্যাশা করে না ? সেবা দেয়ার ব্রত নিয়ে এখানে সবাই কাজ করে। মেজর অপারেশন ও মেডিসিন ছাড়া সব কিছুই ফ্রি।
আউট ডোর এ প্রতিদিন দশ হাজারের অধিক রোগীর চিকিৎসা হয় AIIMS এ। অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে ডাক্তার নাম ,রুম নম্বর ,প্যাথোলজি এবং পরবর্তিতে মেডিক্যাল রিপোর্ট পর্যন্ত পাওয়া যায়। আমাদের দেশের অনলাইন কি হচ্ছে? প্রতিটি সেক্টরের সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীকে জনগণের সেবা প্রদানের জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
AIIMS এর আয়তন কত একর তা জানতে পারিনি। অনেক গুলো ভবন একেকটা ডিপার্টমেন্ট একেক যায়গায়। যাদের নিজস্ব যানবাহন আছে তাদের জন্য যথেষ্ট পার্কিং এর ব্যবস্থা আছে। উবের, সিএনজি দিয়ে এক ডিপার্টমেন্ট থেকে অন্য ডিপার্টমেন্ট যেতে হয়। পায়ে হেঁটে যাওয়া সময় ও শ্রম সাধ্য বিধায় AIIMS এর পক্ষ থেকে এক বিশেষ ধরনের চক্রাকার যানবাহনের ব্যবস্থা আছে প্রতিটি রোগী ও রোগীর সহযাত্রীরা প্রয়োজনীয় গন্তব্যে ফ্রীতে হাসপাতালের এক স্থান থেকে অন্য খানে যাতায়াত করতে পারে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দিল্লির AIIMS এ চিকিৎসা নেয়ার জন্য রোগীরা আসে। আউট ডোর রোগীর জন্য ক্যান্টিনে স্বল্প মূল্যে খাবারের ব্যবস্থা আছে। এ ক্যান্টিনে এক সাথে ৩০০ র মত লোক বসে খেতে পারে । এ ক্যান্টিনে বাহির থেকে খাবার নিয়ে এসে খেতে বারণ নেই। ক্যান্টিন পরিস্কার ও ঝকঝকে, আমাদের দেশের হাসপাতালের ক্যান্টিন গুলোর মত দুর্গন্ধ নেই।
ভারতের তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরে AIIMS প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিল পাশ করার প্রস্তাব দিলে তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বিধান চন্দ্র রায়ের বিরোধিতার কারণে প্রতিষ্ঠানটি কলকাতায় স্থাপিত হতে পারেনি পরবর্তীতে এটি দিল্লিতে স্থাপিত হয়। বর্তমানে ভারত ব্যাপি AIIMS এর ১৯টি শাখা পূর্ণাঙ্গ ভাবে কার্যকর আছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই আরও ছয়টি শাখা চালু হতে যাচ্ছে।
বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবাদান প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত (ইন্টারনেট থেকে নেয়া)।
আমরা বাঙালিরা নিজেরা ভাল কিছু করতে পারি না, অন্যকেও ভাল কিছু করতে দিতে চাই না।
গত পঞ্চাশ বছর আমরা শুধু ভোটের গনতন্ত্র নিয়েই রাজনীতি করছি। নিজের দলের লোকজন এবং কতিপয় ঘুষখোর সরকারি কর্মচারীদের টাকার কুমির বানানোর সুযোগ করে দিয়েছি। সাধারণ জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য গনতন্ত্রকে কাজে লাগাতে পারেনি। আগামিতে নতুন প্রজন্ম দেশে গনতন্ত্রের সত্যিকারের ব্যবহার করার মাধ্যমে জনগণের কল্যাণ বয়ে আনুক এ প্রত্যাশায় ইতি টানছি।
Leave a Reply