“ উগ্র জাতীয়তাবাদ ও সামাজিক বৈষম্য “
ডাঃ সওকত আরা বেগম ।
মিনেসোটা,ইউ,এস,এ ।
আমাদের দেশের মানুষের নিজ জাতি,জাতীয়তাবোধ তথা জাতিয়তাবাদ সম্পর্কে যেমন স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন উগ্র জাতীয়তাবাদ রোধ করবার মানসিকতা । উগ্র জাতীয়তাবোধ বলতে বোঝায় “ আমি বা আমরাই শ্রেষ্ঠ” এই ধরণের মানসিকতা ধারণ করা ।
প্রায়শঃই দেখা যায় ,কিছু ব্যক্তি বা ব্যক্তিত্ব দল বা গোষ্ঠী একে অপরকে অশ্রদ্ধা ও তুচ্ছ জ্ঞ্যান করাকে স্বাভাবিক আচরণ বলে মনে করে । এটা অবশ্যই ঠিক ক নয় । কারণ রাষ্ট্র বা সমাজে সকল নাগরিক একে অপরের শ্রদ্ধা ও স্বীকৃতি পাবার দাবী ও যোগ্যতা রাখে । নাগরীক হিসাবে কেউই অশ্রদ্ধার পাত্র নয় । এছাড়া সমাজে কে বা কারা শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য অথবা যোগ্য নয়, একথাও নিশ্চিত করে দিবার কারও অধিকার নেই ।
আরও লক্ষ্য করা যায় যে,প্রায়ই আমরা একে অন্যের দেশপ্রেম, যোগ্যতা ,সামাজিক মর্যাদা ইত্যাদি নিয়ে ব্যক্তিগত এবং গোষ্ঠির বা শ্রেনীগত মত্ প্রকাশ করি এবং মন্তব্য করি ।এই ধরণের চিন্তা বা মতামত সামাজিক ন্যায়বোধের অবস্থানকে দুর্বল করে দেয় ।
সাম্প্রতিক সময়ে এটাও লক্ষ্যকরা যায় যে ব্যক্তি,নেতা নেত্রীর প্রতি দলীয় প্রেমই অগ্রাধিকার বিবেচিত হয়,দেশপ্রেমের উর্ধে ।এক কথায় দল বা ক্ষমতাই বড় বা প্রথম । দেশ। তার পরে এবংএটাই নাকি স্বাভাবিক বা বর্তমান বস্তবতা । কিন্তু আমরা সবাই যদি এই বাস্তবতাকে মেনে নেই, তাহলে সমাজ এবং রাষ্ট্র ধীরে ধীরে এককেন্দ্রিকতার চাকার ঘূর্নিপাকেই ঘুরতে থাকবে । সমষ্টিগত উন্নতি।কল্যাণ এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি বিষয়ে সার্বজনীন একটা সহমত ও চর্চার বিষয়ে নিজেদেরকে আমরা ব্যক্তিগত চিন্তার মধ্যে আবদ্ধ রাখতে। ভালবাসি ।
আমাদর অনেককে এক ধরণের জাতীয়তা দর্শনে বিভ্রান্তহতে দেখা যায় । যে মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ এবং কৃষ্টি নিয়ে আমাদের অহংকার, সেই বিষয়েও দেখা যায় সকলে একমত হতে পারিনা । নানা স্তরের চেতনা নিয়ে সেখানেও একটা বিভক্তি তৈরী করা হয় , নিজেদের শ্রেনী ও দলের স্বার্থে ।দেশের কল্যাণের সর্ব্বোচ্চ স্থান সেখানে থাকেনা । আমাদের গৌরবের ,অহঙ্কারের মুক্তিযুদ্ধ এবং এই যুদ্ধের মনস্তাত্বিক গভীরতায় দেশপ্রেম এবং জতীয়তাবাদ অগ্রনী ছিল ,সেটি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে ।এটি সঠিক নয় । জাতীয়তাবাদ বিষয়টিকে অন্তরে ধারণ করতে হবে । জাতীয়তাবাদকে কিভাবে অন্য ধরনের রাজনীতিক বা সামাজিক মতবাদ থেকে আলাদা করা যায়অথবা কোন কোনভাবে আধুনিক যুগে এই মতবাদের মত এত অসীম প্রতিপত্তিশালী আদর্শকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করে সহাবস্থান ও কল্যাণচিন্তাকে বাস্তবতায় সুপ্রতিষ্ঠিত করা যায় সে বিষয়ে ভেবে দেখবার দিন এসেছে ।
কারণ সমসাময়িক ভূ রাজনীতিতে পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষ এক প্রকার জাতিশ্রেষ্ঠত্ব এবং এর অহমিকার দৃষ্টিভঙ্গি নানাপ্রকার বিভেদের ইন্ধন যোগায় । এই ধরণের দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে তুচ্ছ জ্ঞ্যান করে । এর প্রকাশ আমরা অনেক দেশেই দেখতে পাই । তবে একটি প্রশ্ন এসে যায়,আর তা হচ্ছে ,জাতীয়তাবাদ কি আধুনিক চিন্তা । হ্যা,এটি আধুনিক চিন্তা নয়, তবে জাতীয়তাবাদের সাথে আধুনিকতার স্পষ্ট সম্পর্ক আছে। বৈ কি !
অনেকেই বলেন ,গণতন্ত্র বা ব্যক্তিস্হাধীনতার মত জাতীয়তাবাদও আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজের এক আবশ্যিক ফলাফল ।তাই প্রশ্ন থেকেই যায়,সেই জাতীয়তা বোধ বা জাতীয়তাবাদসমাজের সমষ্টিগত কল্পনাতে সহায়ক না হয়ে যদি বিভক্তিকে প্রকাশিত বা বিকশিত করতে থাকে, তখন পরবর্তী সময়ে এই জাতীয়তাবাদ বা বোধ ,আধুনিকতার পরিবর্তনে ইতিবাচকভূমিকা রাখতে যদি না পারে তবে দেশ , সমাজ সমষ্টিগতভাবে কোন দিকে প্রবাহিত হবে ?
কারণ যেকোন উগ্র কিম্বা একক মতবাদ বা রাজনৈতিক ভোগ বিলাসের স্বপ্ন থেকেও সমাজে এক প্রকার এলিট মতবাদের সৃষ্টি হয় যা প্রকারন্তরে পুরানো ফ্যাসিজমএর নতুন যাত্রা দেশে বিদেশে এই ফ্যাসিজম চলছে কমবেশী উন্নতি,গণতন্ত্র এবং মানবতার ছদ্মবেশে । আমাদের দেশের মিশ্র রাজনীতি ওসমাজনীতিতে এমনটি হবার আশঙ্কা করা অমূলক নয় ।
সব শ্রেনীর নাগরীককে বিষয়টার উপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন । সমাজে। উগ্র কিংবা গোঁড়া কোন মতবাদ বা জাতীয়তাবাদ চেতনা দ্বারা অনুপ্রাণীত এলিটতত্ব সমাজে বিভক্তি বাড়িয়ে তুলবে । তাই প্রগতিশীল সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করতে হলে আমাদের কল্যাণ ও উন্নতিতে একাত্মতাকে অগ্রাধিকার দিতেহবে ।পারস্পরিক দাবীদাওয়ার নিস্পত্তি হতে হবে ,প্রীতি ও একে অপরকে সম্মানবোধের সাংষ্কৃতিক চর্চায় । নিজের অবচেতন মনের যে কোন শ্রেষ্ঠত্ব অনুভূতি এবং সুযোগ। সুবিধা ভোগের অভিলাষকে বিনাস করতে হবে ।ক্ষমা,দূরদৃষ্টি, প্রজ্ঞা, সহানুভূতি,ইত্যাদীর সহাবস্থানকে নিশ্চিত করতে হবে সমাজও রাষ্ট্রকে । তবেই সমাজ ও রাষ্ট্রে উগ্র জাতীয়তা বোধ থেকে মুক্ত হবে এবং দেশে শান্তি বিরাজ করবে ।
শেষ ………..।
Leave a Reply